বলেছিলে গো, ভালোবাসি গো

মহিব্বুল আরেফিন | প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ০৫:২৬; আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০৫:০৪

বাউল সুকুমার মহন্ত

একটি মাজারের পাশে শুয়ে আছি। মনের আয়নায় ভেসে উঠল ৪৮ বছর আগে হারানো ভালোবাসার প্রিয় মুখ। আনমনে গেয়ে উঠলাম, ‘বলেছিলে গো, ভালোবাসি গো/ আজ কেন গো, এমনই হলো/ বলব না গো, আর কোনো দিন/ ভালোবাসো তুমি মোরে’। কয়েক দিন চেষ্টার পর সুর তুললাম। এরপর অনেকবার গেয়েছি সেই গান। পরবর্তীতে বগুড়া শহরের পরিচিত একজনের বাসায় গিয়েছিলাম। সঙ্গী দোতারা তো ছিলই। সেখানে দুটি গান শোনানোর আবদার করা হলো। এই গানটা দরদ দিয়ে গাইলাম। সেখানেই উপস্থিত একজন গানটা ভিডিও করেছিলেন। সম্ভবত তিনিই ইউটিউবে ছেড়েছেন।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া আলোচিত সময়ে অন্যতম একটি সেরা “গান / বলব না গো, আর কোনো দিন/ ভালোবাসো তুমি মোরে’।-এই গান চার মাসে শুধু একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকেই দেখা হয় ১৯ লাখ বার।
সর্বসাধারণের মনে স্থান করে নেয়া এই গানটির নেপথ্য তিনি মিডিয়ার সামনে এভাবেই তুলে ধরেন “পথের” এই গায়ক। আলোচিত গায়ক বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের বাউল সুকুমার মহন্ত। ৬৫ বছর বয়সী এই বাউল সুকুমার বৈরাগী নামেই পরিচিত। আলোচিত এই শিল্পিকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম আলো একটি সাক্ষাতকারও ছাপে। সেখানে তিনি তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সুকুমার বাউল বলেন, কৈশোরে এক মেয়ের সঙ্গে ভাব হয়েছিল। তাকে খুবই ভালোবাসতাম। তিন বছর আমাদের ভাব-ভালোবাসা চলল। কিন্তু গানের মানুষ সংসারী হই কেমনে? ২২ বছর বয়সে মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল। আমাকে ছেড়ে গেল। ভালোবাসা হারানোয় খুব কষ্ট পেলাম। দোতারা হাতে নিলাম। গানকে ভালোবেসে পথে নামলাম। সেই কণ্ঠ আজও থামেনি। দোতারাও হাত থেকে নামেনি। দেশের বিভিন্ন জেলায় মাজারে মাজারে গান করেছি, বছরের পর বছর সেখানেই কাটিয়েছি। এক যুগ ভারতের পথে পথে ঘুরে গান করেছি। গান আর সুরে মগ্ন থেকেছি। কিন্তু অন্তরের সেই ভালোবাসা হারানোর কষ্ট-বেদনার আগুন আজও নেভেনি। ধিকি ধিকি জ্বলছে।
বছর দু-এক আগে একটি মাজারের পাশে শুয়ে আছি। মনের আয়নায় ভেসে উঠল ৪৮ বছর আগে হারানো ভালোবাসার সেই প্রিয় মুখ। আনমনে গেয়ে উঠলাম, ‘বলেছিলে গো, ভালোবাসি গো/ আজ কেন গো, এমনই হলো/ বলব না গো, আর কোনো দিন/ ভালোবাসো তুমি মোরে’।
মেয়েটির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ঘরছাড়া উদাসী বাউলজীবন বেছে নিলাম। পায়ে দড়ি বাঁধতে বাবা-মা বিয়ে দিলেন। কিন্তু সংসারে মন টিকে না। বিয়ের এক বছরের মাথায় ছেলেসন্তান হলো। কিন্তু ঘরসংসারের মায়া আমাকে আটকাতে পারল না। ঘর থেকে বের হলাম। পথে প্রান্তরে ঘুরে একদিন ভারতের বালুঘাট পৌঁছে গেলাম। সেখানে এক যুগ পরবাসী বাউলজীবন কেটে দিলাম। ১২ বছর পর দেশে ফিরলাম। সংসারী হওয়ার চেষ্টা করলাম। আরও এক মেয়ে হলো। কিন্তু বাউলের মন, সংসারী হতে পারলাম না।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঈগল মিউজিক এর সাথে সুকুমার

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া গানটি পরে ভিডিও আকারে বাণিজ্যিকভাবে প্রকাশ হয়। এটি ‘অপরাধী’ খ্যাত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঈগল মিউজিক ইউটিউবে ভিডিও আকারে প্রকাশ করে। পরে আবারো গানটির নতুন সংগীতায়োজন করে অংকুর মাহমুদ আর গল্পনির্ভর ভিডিওটি নির্মাণ করে ঈগল টিম। ভিডিওতে বাউল সুকুমার ছাড়াও মডেল হিসেবে অভিনয় করেন জনৈক্য আলভী ও রাবিনা।

এর পর একই ব্যনারে তার ‘প্রেম করে মন দিলানা’ ও ‘ভালোবাসা যায় সকলকে বিশ্বাস করা যায় না’সহ আরো বেশ কিছু গান শ্রোতাদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলে। 

আলোচিত এই গানের রিলিক্স হলো:

“বলবো না গো আর কোনদিন
ভালবাস তুমি মোরে।

বলে ছিলে গো ভালবাসি গো
আজ কেন গো এমন ও হল (২)।
এমন ও হল এমন ও হল

বলবো না গো আর কোনদিন
ভাল বাস তুমি মোরে।

ভালবাসাতে যদি হয় অপরাধ
তাই নিয়ে গো কেন প্রতিবাদ (২)।
কেন প্রতিবাদ, কেন প্রতিবাদ

বলবো না গো আর কোনদিন
ভালবাস তুমি মোরে।

ভালবাসাতে যে পেয়েছি আঘাত
সেই অনল গদে জ্বলে বার মাস।
বাউলের অন্তরে, বাউলের অন্তরে

বলবো না গো আর কোনদিন
ভালবাস তুমি মোরে।”

সাম্প্রতিক করোনা মহামারী কালে এই গুনী গায়ক অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিভিন্ন জনের সহায়তায় এই শিল্পী আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top