খালেদ মোশাররফসহ ৩ মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা হত্যায় ৪৮ বছর পর মামলা

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১২ মে ২০২৩ ০২:০১; আপডেট: ১২ মে ২০২৩ ০২:৪৯

হত্যাকাণ্ডের শিকার খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম এবং এটিএম হায়দার বীর উত্তম। ফাইল ছবি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্যু পালটা ক্যুর মধ্যে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমসহ তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দীর্ঘ ৪৮ বছর পর বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি করেন সে সময় হত্যাকাণ্ডের শিকার কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদার মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা কর্নেল আবু তাহের বীর বিক্রমের নির্দেশে নাজমুল হুদাসহ তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়।

জানা গেছে- মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে শুধু ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাবেক মেজর আবদুল জলিল জীবিত আছেন।তাকেই মামলার এজাহারে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী নাহিদ ইজাহার খান উল্লেখ করেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তার বয়স যখন ৫ বছর ও তার বড় ভাইয়ের বয়স ৮ বছর, তখন তার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭২ বিশেষ কমান্ডার হিসেবে রংপুরে কর্মরত ছিলেন। ওই অবস্থায় ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনীর বিপথগামী, বিশৃঙ্খল সদস্যদের হাতে তার বাবা নিহত (শহিদ) হন। তার সঙ্গে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এটিএম হায়দার বীর উত্তম নিহত (শহিদ) হন।

এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ‘পরে তারা বড় হয়ে বাবার কোর্সমেট, কলিগ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে নিজেদের অনুসন্ধানে জানতে পারেন- ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, সকালে তার বাবাসহ অন্য দুই সামরিক কর্মকর্তা ১০ ইস্ট বেঙ্গলের অফিসে উপস্থিত ছিলেন। যেটি তখন জাতীয় সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেলে ছিল। সকালে তারা বাবা যখন নাস্তা করছিলেন, তখন দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি থেকে দশম ইস্ট বেঙ্গলের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নওয়াজেশের কাছে টেলিফোন আসে। এরপর তারা বাবাসহ অন্য দুই সামরিক কর্মকর্তাকে বাইরে নিয়ে আসে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তারা।’

মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে আরও জানতে পারি, তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জাসদ নেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের (অব) নির্দেশে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও এবং সৈনিকরা সংঘবদ্ধভাবে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।’

এজাহারে বলা হয়, ‘তৎকালীন ক্যাপ্টেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজ ও মেজর মুকতাদির, তৎকালীন ক্যাপ্টেন সাবেক পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তারা (বাদী) আরও জানতে পেরেছেন, দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা জেসিও ও সৈনিকদের সঙ্গে মেজর মো. আসাদউজ্জামান (অব) এই তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি করার পর বেয়োনেট চার্জ করেন।’

নাহিদ ইজাহার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধে তার বাবা যোগদান করেন এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন যশোর ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টর কমান্ডার। তার সরাসরি নেতৃত্বে পরিচালিত বিখ্যাত গরিবপুরের ট্যাংক যুদ্ধ, চৌগাছা যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজিত হয়েছিল এবং ৬ ডিসেম্বর তার বাবার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রথম জেলা হিসেবে যশোর হানাদার বাহিনীমুক্ত হয়।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘তাদের জন্য সময়টা এতটাই প্রতিকূল ছিল যে, একবার ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার কাছে তার ভাই গিয়েছিলেন বাবার নামে রাস্তার নামকরণের জন্য।

তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছিল। তিনি (সাদেক হোসেন খোকা) তার ভাইয়ের আবেদনপত্র হাতে নিয়ে তার বাবার নাম দেখে তাকে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুরকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায়। দেশবাসী ন্যায়বিচার পাচ্ছে। তাই তিনি তার বাবাসহ তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তার হত্যার বিচার দাবি করেছেন।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আজিমুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, শেরেবাংলা নগর থানায় বুধবার রাতে এ মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top