লেখকদের রঙ্গ-রসিকতা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:২৭; আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:২৩

লেখকরা আর দশজন মানুষ থেকে কিঞ্চিত আলাদা। তাই তাদের যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ, রঙ্গ-রসিকতাও একটু আলাদা। কোনো কোনো সময় এসবে তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। পরিস্থিতির ‘শিকার’ হন শুধু। এসব পরিস্থিতি স্বীকার বা অস্বীকারও করতে হয় না অনেক লেখকের। শুধু উৎসাহী কেউ উঁকি দিলে দেখতে পান দূর দিগন্ত!

শহীদুল জহির অন্যরকম একটি অপ্রাপ্তি ও হাহাকার নিয়েই মারা গেছেন। এটা নিঃসন্দেহে করুণ রস। একটি ‘অন্যরকম’ উপন্যাস লিখেছিলেন তিনি। পুরো উপন্যাসে কোনো দাঁড়ি থাকবে না। শুরু থেকে শেষপর্যন্ত কমা’র (,) ব্যবহার। প্রথম সংস্করণে উপন্যাসের শেষে প্রকাশক কিংবা প্রুফ রিডার ঠিকই দাঁড়ি বসিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় সংস্করণে এ বিচ্যুতি সারানোর চেষ্টা করেছেন। এবারও শেষে ঠিকই দাঁড়ি বসিয়ে দিয়েছেন প্রকাশক। লেখক বেচারা আর কী করেন!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ ‘সঞ্চয়িতা’ ছাপা হচ্ছে। তখনই ধরা পড়ল মারাত্মক একটি ভুল। প্রেস থেকে একজন কর্মী হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন। বললেন—সর্বনাশ হয়ে গেছে, কবিগুরু! সঞ্চয়িতা ভুল শব্দ, শুদ্ধ হবে সঞ্চিতা। সব শুনে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ২৫ ফর্মা ছাপা হইয়া গিয়াছে। এখন সঞ্চয়িতাই শুদ্ধ! তবে একই ‘ভুল’ কাজী নজরুল ইসলাম করেননি। তিনি কাব্যগ্রন্থের নামকরণ করেছেন সঞ্চিতা। একটি বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্টে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন—‘সুলেখা কালি। যে কালি কলঙ্কের চেয়ে কালো।’

কম্পিউটার অপারেটরের ‘বাড়তি’ পাণ্ডিত্যের কারণেও কখনো কখনো অঘটন ঘটে। একটি মাসিক ম্যাগাজিনে কাজ করি তখন। প্রচ্ছদরচনা হলো ‘বিশ্বসেরা ১০০ বাংলাদেশি’। পত্রিকা ছাপা হয়ে আসার পরে দেখা গেল তাহমিনা আনাম! তাহমিনা কেন হবে, নামটা তাহমিমা আনাম। কম্পিউটার অপারেটর নামটি দেখেছিলেন। যেহেতু ব্যতিক্রমী নাম, তার কাছে নতুন, ভুল মনে করে ম-এর স্থলে ন বসিয়ে দিয়েছিলেন নিজের সিদ্ধান্তেই!

একদিন হুমায়ুন আজাদের পিছু নিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তারই এক ছাত্র। ছাত্র মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলল, ‘স্যার, আপনি খুব জ্ঞানী!’

হুমায়ুন আজাদ জবাব দিলেন, ‘তুমি দেখছি আস্ত গবেট!’

হুমায়ূন আহমেদ সম্বন্ধে হুমায়ুন আজাদ (সম্ভবত) খেদ প্রকাশ করে একটি লেখায় বলেছিলেন—ও যে কেন দীর্ঘ উকার দিয়ে নাম (হুমায়ূন) লেখে বুঝি না!

বাংলাদেশের প্রথম আলোকচিত্রী সাইদা খানমের সাক্ষাৎকার নেব আমরা। এখন যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর দরকার। তাঁর বইয়ের প্রকাশক (যুক্ত) ও লেখক নিশাত জাহান রানার ফোন নম্বর সংগ্রহ করে দিলাম সহকর্মী মিজান মিজানুর রহমানকে। তিনি কল দিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘রানা সাহেব বলছেন?’

অপর প্রান্তে নারীকণ্ঠ শুনে ঝট বিচ্ছিন্ন করলেন সংযোগ। ফিরলেন আমার দিকে, ‘তুমি কার নম্বর দিয়েছ?’

‘কেন, রানা আপার!’

লেখক: শফিক হাসান (মূল লেখাটি ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয়।)


- চলবে



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top