আধুনিক রাডারের অভাবে ব্যাহত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:১৬; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫:৪৬

ফাইল ছবি

সময়ের প্রযোজনের প্রেক্ষিতে আধুনিকায়ন হয়নি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে। বহুকাল ধরে জোড়াতালি দিয়ে চলছে পর্যবেক্ষণের কাজ। আধুনিক রাডারের অভাবে ঝড়-দুর্যোগের সঠিক গতিবিধি নিরূপণ ও বার্তা প্রদানে বেগ পেতে হচ্ছে আবহাওয়া দপ্তরকে। খবর ইত্তেফাকের।

বর্তমানে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পাঁচটি রাডারের মধ্যে দুইটি অকেজো হয়ে আছে দীর্ঘকাল। তিনটি সচল থাকলেও মান্ধাতার আমলের হওয়ায় এনালগ পদ্ধতিতে আবহাওয়া পরিমণ্ডল পর্যবেক্ষণ, পূর্বাভাস, সামুদ্রিক ঝড়ের অবস্থান, তীব্রতা, গতিবিধি, কুয়াশা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নিরূপণ, প্রতিদিনের আবহাওয়াসহ সতর্কীকরণ সংকেত প্রদান করতে হচ্ছে জোড়াতালি দিয়ে। জাপান, চীন ও কোরিয়ান তিনটি আবহাওয়া স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দূরবর্তী চিত্রমালা সংগ্রহ করে তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, যা প্রতিদিনকার পূর্বাভাসের জন্য রাডারের চেয়ে কম কার্যকর।

আবহাওয়া পরিস্থিতি অনবরত পর্যবেক্ষণ করতে হয়। এটা একমাত্র ডপলার রাডার দ্বারাই সম্ভব। ফলে পার্শ্ববর্তী দেশের আবহাওয়া বার্তার ওপরই কোনো কোনো সময় বহুলাংশে নির্ভর হয়ে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরকে। খেপুপাড়া ও রংপুরের গুরুত্বপূর্ণ দুই রাডার বিকল হয়ে আছে। ১০ বছর ধরে রংপুরের রাডারটি অকেজো। পটুয়াখালীর সাগরবর্তী খেপুপাড়ার রাডারটি নষ্ট তিন বছর যাবত্। সচল আছে ঢাকা, কক্সবাজার এবং মৌলভীবাজারের রাডারটি। তবে এই ম্যানুয়াল রাডারগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। এগুলো বিকল হলে যন্ত্রাংশও পাওয়া যায় না। কারণ এই রাডার কোম্পানি এখন আর এ ধরনের এনালগ রাডার তৈরি করে না। এই রাডারের সর্বোচ্চ কাভারেজ ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। খেপুপাড়ারটি বিকল থাকায় এখন কক্সবাজারের রাডার দিয়ে সাগরের একটি অংশের সংকেত উপাত্ত চিত্র সংগ্রহ করা হয়।


প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসে রাডার প্রতিদিনকার আবহাওয়া বার্তা প্রদানের ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে ওঠে। কারণ এই সময় সাগরে লঘুচাপ-নিম্নচাপ তৈরি হয়। কালবৈশাখীর প্রকোপ থাকে। স্যাটেলাইট ঝড়-দুর্যোগের সঠিক গতিবিধি নিরূপণ করতে পারে না। এই সময়টা সমুদ্র ও নদীবন্দরকে ঘন ঘন সতর্ক সংকেত দিতে হয়। রাডারের অভাবে আকাশের ঘন কুয়াশা, সাধারণ মেঘ, মাঝারি মেঘ, ঘন মেঘ, বজ্র মেঘ এবং ঘূর্ণিযুক্ত মেঘের তথ্য পর্যবেক্ষণ দ্রুততার সঙ্গে সম্ভব হয় না। এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিনে দিনে কৃষি কাজ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম বার্তা জানতে না পারায় কৃষকদের জন্য তা আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। কৃষকরা আবহাওয়ার সঠিক অবস্থা জানতে পারছে না। মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকাকে তাত্ক্ষণিক সতর্ক সংকেত জারির ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে।

আবহাওয়া দপ্তরের বর্তমান দায়িত্বে থাকা পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, জাইকার একটি প্রজেক্ট আছে। তারা রাডার বসাবে। আমরা কক্সবাজার এবং মৌলভীবাজারে রাডার পরিবর্তন করব। খেপুপাড়া ও ঢাকায় নতুন রাডার বসানো হবে। ঢাকার রাডারটি নেওয়া হবে গাজীপুরে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে। খেপুপাড়ারটা ২০২০ সালে নষ্ট হওয়ার পর কক্সবাজারেরটা দিয়ে কাভারেজ করা হচ্ছে। এটার মাধ্যমে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কাভারেজ দেওয়া যায়। তার বাইরে আমরা জানতে পারি না আবহাওয়ায় কী হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম জানান, রাডারের অপর্যাপ্ততার কারণে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চিনের স্যাটেলাইট ব্যবহার করে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও প্রতিদিনকার ফোরকাস্ট দেওয়া হয়। স্যাটেলাইটের চিত্রমালা দূরবর্তী হওয়ায় নিবিড়ভাবে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। রাডারের কাউন্টিং সবচেয়ে ভালো। রাডারে ঘন কুয়াশাসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ভেদ করে স্বচ্ছ চিত্র পাওয়া যায়, যা পর্যবেক্ষণের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। ডিজিটাল রাডার থাকলে প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর হালনাগাদ চিত্র পাওয়া সম্ভব। স্পিডও ভালো পাওয়া যায়। রাডারের চিত্রমালা গভীর এবং ঘনিষ্ঠ, যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্ভব নয়। কিন্তু দুইটি রাডার বিকল থাকায় এবং যে তিনটি সচল আছে তা এনালগ হওয়ায় আবহাওয়ার বিশ্লেষণ এবং বার্তা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি জানান, প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসে রাডার প্রতিদিনকার আবহাওয়া বার্তা প্রদানের ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে ওঠে। কারণ এই সময় সাগরে লঘুচাপ-নিম্নচাপ তৈরি হয়। কালবৈশাখীর প্রকোপ থাকে। স্যাটেলাইট ঝড়-দুর্যোগের সঠিক গতিবিধি নিরূপণ করতে পারে না। বিশেষ করে শীতের সময় ঘনকুয়াশায় রাডার অপরিহার্য। কারণ এ সময় স্যাটেলাইট বহুদূর থেকে ছবি নেওয়ায় কুয়াশার কারণে চিত্র অস্পষ্ট থাকে। রাডারের পাশাপাশি স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করা গেলে আবহাওয়ার প্রতিদিনকার সঠিক ও সুস্পষ্ট বার্তা প্রদান করা সহজ হয়।

তিনি বলেন, কালবৈশাখীর আগাম তথ্য পেতে, ৫০০ কিলোমিটার দূরের মেঘমালা পর্যবেক্ষণ করতে শক্তিশালী আধুনিক ডপলার রাডার স্থাপন ও চালু হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সংকেত পেতে আর বিলম্ব হবে না। ফলে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সম্ভব হবে। এতে জানমালের ক্ষতি কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।


আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, রাডার সিস্টেম স্থাপনে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা-জাইকা অনুদান সহায়তা দিচ্ছে। জাইকা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মধ্যে ২৮৮ কোটি ১০ লাখ ইয়েন অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৫ সালের ২৪ জুন। এরপর ‘ঢাকা ও রংপুর আবহাওয়া রাডারের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ দুটি রাডার স্থাপনের জন্য সফল দরপত্র দাতার এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের মধ্যে ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জাপানে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল জাপানি পরামর্শক ও ঠিকাদার এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের মধ্যে রাডার টাওয়ার নির্মাণকাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি। এখন প্রক্রিয়া চলছে। আবহাওয়া প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বাংলাদেশে দুটি রাডার নির্মাণ করছে জাপানিরা। এখন তাদের নির্মাণকাজ চলছে গাজীপুরে। ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গাজীপুরে ২০ তলাবিশিষ্ট আবহাওয়া ভবন নির্মাণের পর সেই ভবনে বসানো হবে নতুন রাডারটি। আগামী জানুয়ারি মাসে রংপুরে অত্যাধুনিক ডপলার রাডার স্থাপনের কাজ শুরু হবে।

নিউজের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top