ভিটামিন ডি ঘাটতিতে ৭০ শতাংশ নারী

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২২ ০৩:০১; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ২২:০১

ছবি: সংগৃহিত

দেশের প্রজননক্ষম অর্থাৎ১৫-৪৯ বছর বয়সী ৭০ শতাংশ নারী ভিটামিন ডি এবং ৪৪ শতাংশ শিশু (৬-৫৯ মাস বয়সী) ভিটামিন-এ ঘাটটিতে ভুগছে।

এ ছাড়া ৪৩ শতাংশ নারীর শরীরে জিংক, ৩০ শতাংশের আয়োডিন, ২৯ শতাংশের ফোলেট ও ১৪ শতাংশের আয়রন ঘাটতি রয়েছে। একইভাবে ২০ শতাংশের ভিটামিন বি১২ ও ৭ শতাংশের শরীরে ভিটামিন-এ’র অভাব রয়েছে।

অন্যদিকে, অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩১ শতাংশের শরীরে জিংক, ২০ শতাংশের আয়োডিন ও ১৫ শতাংশের আয়রন এই তিন ধরনের খনিজ পদার্থের ঘাটতি রয়েছে। ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন-ডি’র অভাব রয়েছে ২২ শতাংশ ও ভিটামিন-এ’র অভাব রয়েছে ৭ শতাংশ শিশুর। এমনকি দেশে গত আট বছরে প্রজননক্ষম নারীদের শরীরে আয়রন ও ফোলেট বা ফলিক এসিডের ঘাটতি বেড়েছে। আট বছর আগে যেখানে ৭ শতাংশ নারী আয়রন ও ৯ শতাংশ নারী ফোলেট ঘাটতিতে ছিল, এখন তা বেড়ে হয়েছে আয়রনে ১৪ শতাংশ ও ফোলেটে ২৯ শতাংশ। একইভাবে গত আট বছরে শিশুদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে।

এ ছাড়া বর্তমানে দেশের ২১ শতাংশ শিশু ও ২৯ শতাংশ নারী বিভিন্ন মাত্রার রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে। জাতীয় অনুপুষ্টিকণা জরিপ-২০১৯-২০২০ এ এমন তথ্য পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পুষ্টি সেবা (এনএনএস) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) যৌথভাবে দেশে দ্বিতীয়বারের মতো এ জরিপ করে। গতকাল রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানী ড. আলিয়া নাহিদ জরিপের তথ্য প্রকাশ করেন।

জরিপে উঠে আসা অনুপুষ্টির ঘাটতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, বর্তমানে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু ও নারী একাধিক অনুপুষ্টিকণা বা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতিতে ভুগছে। বিশেষ করে প্রজননক্ষম নারীদের ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা উদ্বেগজনক।

অনুষ্ঠানে গবেষকরা জানান, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা অনুপুষ্টিকণা হলো ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। এগুলো মানবদেহে স্বল্পমাত্রায় প্রয়োজন হলেও শরীর গঠনে এবং সুস্থতার ক্ষেত্রে এসব অনুপুষ্টিকণা অপরিহার্য উপাদান। অতি ক্ষুদ্র এই ভিটামিন ও খনিজ উপাদানগুলো শরীরে প্রয়োজনীয় এনজাইম, হরমোনসহ অন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। এসব উপাদানের ঘাটতির কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষের শরীরে বিভিন্ন রকমের পুষ্টির অসামঞ্জস্য দেখা যায়।

দেশের ৫-৫৯ মাস বয়সী শিশু এবং ১৫-৪৯ বছর বয়সী অন্তঃসত্ত্বা নন অথবা যারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন না এমন নারীদের (নন-প্রেগন্যান্ট ও নন-ল্যাকটেটিং-এনপিএনএল) ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, জিংক, ফেরিটিন, আয়োডিন এবং অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা এই জরিপ করা হয়। জরিপে এসব নারীর ভিটামিন বি১২ এবং ফোলেট-ও পরিমাপ করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের আট বিভাগের ২৫০টি উপজেলায় এই জরিপ করা হয়।

আট বছরে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি বেড়েছে : ১ম জাতীয় অনুপুষ্টিকণা জরিপ ২০১১-১২ এর ফলাফলের সঙ্গে বর্তমান জরিপে তথ্য তুলনা করে দেখা গেছে, শিশুদের তিনটি সূচকে (ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি এবং জিংক) অনুপুষ্টিকণা ঘাটতির অবস্থা উন্নত হয়েছে। কিন্তু আয়রনের ঘাটতির মাত্রা আগের চেয়ে বেড়েছে। এই জরিপে প্রথমবারের মতো ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে আয়োডিনের বিষয়টি গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে ২০ শতাংশ শিশুর মধ্যে আয়োডিনের ঘাটতি রয়েছে।

একইভাবে, আগের জরিপের তুলনায় বর্তমান জরিপে নারীদের শরীরে অনুপুষ্টিকণা ঘাটতির অবস্থা তিনটি সূচকে (জিংক, আয়োডিন এবং ভিটামিন এ) উন্নতি হয়েছে, দুটি সূচকে (আয়রন, ফোলেট আরও অবনতি হয়েছে এবং দুটি সূচকে (ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি১২) প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।

গবেষকদের পরামর্শ : জরিপ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে জাতীয় পুষ্টি সেবার লাইন ডিরেক্টর ডা. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনুপুষ্টিকণা ঘাটতির এই ফলাফল দেশের শিশু ও নারীদের জন্য জাতীয় পুষ্টি সেবা পরিচালিত সম্পূরক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

জরিপের প্রধান গবেষক ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, এই গবেষণায় নতুনভাবে বের হয়ে এসেছে যে, বাংলাদেশে শিশু ও নারীদের কোনো ভিটামিন এবং খনিজগুলো গুরুতর অভাব রয়েছে। এটি বাংলাদেশে পরবর্তী ৫ম হেলথ সেক্টর প্রোগ্রামসহ অন্যান্য পুষ্টি কর্মসূচিগুলো প্রণয়নে নীতিনির্ধারকদের নতুন দিকনির্দেশনা দেবে। তবে পুষ্টি কর্মসূচি কার্যক্রম অগ্রগতি জানার জন্য গবেষণার মাধ্যমে নিয়মিত মূল্যায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, এই সমীক্ষার ফলাফল খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল প্রণয়নে এবং কার্যক্রম গ্রহণে সহায়তা করবে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক এসব তথ্য কাজে লাগিয়ে শিশু ও নারীদের মধ্যে ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি সমাধানে বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি নেওয়ার ওপর জোর দেন। অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তরপর্ব সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন।

এনএ / সূত্র: দেশ রুপান্তর




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top