গ্রাহকের বাড়তি চাপে ব্যাংকে নগদ সঙ্কট

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০২১ ১৬:০৫; আপডেট: ২০ জুলাই ২০২১ ১৬:০৬

ছবি: সংগৃহিত

পবিত্র কোরবানি ঈদের তিন দিনের ছুটি শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার থেকে। ছুটির পরের দিন অর্থাৎ ২৩ জুলাই থেকে মহামারী করোনার বিস্তার প্রতিরোধে ১৪ দিনের লকডাউন শুরু হবে। এ কারণে কোরবানির পশু ও প্রয়োজনীয় কেনাকাটা এবং নগদ টাকা হাতে রাখতে গ্রাহক গতকাল সোমবার ছুটেছে ব্যাংকের দিকে। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগের দিন অনেকেই তাই প্রয়োজনীয় টাকা উত্তোলন করতে ব্যাংকের শাখা, উপশাখা ও এটিএম বুথ থেকে বাড়তি অর্থ উত্তোলন করেছেন। কিন্তু দুপুরের আগেই বেশির ভাগ এটিএম বুথে টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকের ভিড় বাড়তে থাকে। গ্রাহকদের টাকা সরবরাহ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ের পরেও ব্যাংকের শাখায় লেনদেন হতে দেখা গেছে।


দুপুরের পর থেকে টাকা উত্তোলনের ভিড় বাড়তে থাকায় অনেক ব্যাংকেই নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দেয়। এ সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলো অন্য ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে। ১০০ টাকা ধার নিতে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ ব্যয় করতে হয়েছে সোয়া ৫ শতাংশ।


ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ব্যাংকেরই উদ্বৃত্ত অর্থ ছিল। অনেক ব্যাংকেরই রয়েছে কাগুজে উদ্বৃত্ত অর্থ। কিন্তু টাকা উত্তোলন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি হওয়ায় নগদ টাকার সঙ্কটে পড়ে এসব ব্যাংক। দুপুরে প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের শাখায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টাকা উত্তোলনের জন্য গ্রাহকের দীর্ঘ লাইন শাখার বাইরে এসে গেছে। একপর্যায়ে লাইনের অগ্রভাগের একজন গ্রাহককে সাত লাখ টাকার চেক নগদায়ন না করে ফেরত দেয়া হয়। ওই গ্রাহক শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে কারণ জানতে চান। শাখা ব্যবস্থাপক সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে জানান, যতক্ষণ নগদ টাকা ছিল ততক্ষণ সরবরাহ করা হয়েছে। এখন নগদ টাকার সঙ্কট। তাই বড় অঙ্কের চেকের গ্রাহককে একই ব্যাংকের অন্য শাখায় যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। এভাবে মতিঝিল ব্যাংক পাড়ায় ঘুরে আরো কয়েকটি ব্যাংকের শাখায় নগদ টাকার সঙ্কটের খবর জানা যায়।

এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সাধারণত ঈদের আগে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশি টাকা উত্তোলন হয়। আগের বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো তাদের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু অন্য বছরের চেয়ে এ বছর গ্রাহকের চাপ ছিল বেশি। এ কারণে গ্রাহকের চাপ সামলাতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে (কলমানি মার্কেট) ধার নিতে হয়েছে। অনেক গ্রাহককে একই ব্যাংকের অন্য শাখায় যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। হয়রানি সত্ত্বেও প্রয়োজন মেটাতে অন্য শাখায় গিয়েছেন অনেক গ্রাহক।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোতে টাকার সঙ্কট হলে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে থাকে, যাকে আন্তঃব্যাংক লেনদেন বা কলমানি মার্কেট বলে। এতেও ব্যাংকের সঙ্কট মেটাতে না পারলে ব্যাংকগুলোর হাতে থাকে ট্রেজারি বিল ও বন্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে নগদ টাকার সঙ্কট মেটানোর ব্যবস্থা। গতকাল ব্যাংকগুলো তাদের নগদ সঙ্কট মেটাতে কলমানি মার্কেট থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে। একই সাথে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা বিভিন্ন প্রণোদনা ঋণের ৫০ শতাংশ অর্থ পুনঃঅর্থায়ন হিসেবে ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে উদ্বৃত্ত বৈদেশিক মুদ্রা কিনে বিপরীতে নগদ টাকা সরবরাহ করা হয়েছে। সব মিলিয়েই ব্যাংকগুলোর নগদ অর্থের সঙ্কট অনেকাংশেই কেটে গেছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, একদিকে তিন দিনের ঈদের ছুটি, এর ওপর ঈদের ছুটির শেষ হওয়ার পরের দিন থেকে পরবর্তী ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন; সবমিলেই নগদ টাকা উত্তোলন বেশি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে ও নগদ টাকা হাতে রাখতে নগদ টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে ভিড় জমে। সকাল থেকে এটিএম বুথগুলোতে টাকা উত্তোলনের চাপ থাকে। কিন্তু একসাথে বেশি গ্রাহকের টাকা উত্তোলনের চাপ থাকায় দুপুরের আগেই বেশির ভাগ এটিএম বুথে টাকা শেষ হয়ে যায় বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেন। প্রয়োজনীয় টাকা উত্তোলন করতে অনেকেই ব্যাংকের শাখায় আসেন। ব্যাংকের মতো এটিএম বুথগুলোতেও ছিল গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন। এটিএম বুথের ধারণ ক্ষমতা সীমিত। কিন্তু গতকাল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়তি টাকা উত্তোলন করায় বারবার এটিএম বুথে টাকার সঙ্কট দেখা দেয়। গ্রাহকরা এক বুথে টাকা না পেয়ে অন্য বুথে যায়। এ কারণে গ্রাহকদের বাড়তি পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করতে হয়।

এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের ভয় উপেক্ষা করে কোনো গ্রাহক যখন তার প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংকের শাখায় টাকা উত্তোলন করতে আসেন তখন শাখা ব্যবস্থাপক অর্থ সরবরাহ করা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকে না। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা শাখায় এসেছেন তাদের একসাথে শাখায় প্রবেশ করিয়ে ব্যাংক শাখার প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। বিকল্প ফটক দিয়ে ভেতরের গ্রাহকদের লেনদেন শেষে তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন হয়ে পড়ে।



বিষয়: অর্থনীতি


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top