আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য

চিঁড়েচ্যাপ্টা জনজীবন

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২১ ১৩:৪৭; আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৩৮

ছবি: সংগৃহিত

করোনার পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো বন্যা, খরা বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই দেশে। পণ্যের উৎপাদন সরবারহ সবই স্বাভাবিক। তারপরও কেন বাড়ছে দ্রব্যমূল্য- এই প্রশ্নই এখন সাধারণ মানুষের। করোনার কষাঘাত সামলে উঠতে মানুষ যখন হিমশিম খাচ্ছে তখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সকলকে এখন সংসারে হিসাব করতে হচ্ছে নতুন করে। কাটছাঁট করেও যেন কিছুতেই মিলছে না হিসাব। নিম্নবিত্তের আমিষের জোগানের বড় উৎস ডিম আর ব্রয়লার মুরগি। এখন এগুলোও যেন নাগালেন বাইরে।


আনিসুর রহমান একটি এপার্টমেন্টে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন।
মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পান। ছয় হাজার টাকা ঘর ভাড়া আর চার হাজার টাকায় সংসার চালাতেন তিনি। এর মধ্যে তিন হাজার টাকা চাল ডালসহ মাসের বাজার খরচ আর এক হাজার টাকা ছেলের লেখাপড়ার খরচ করতেন আনিস। কিন্তু এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এত বেশি যে আর এই টাকায় সংসার চালানোই যেন দায়। আনিস বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছরে এক টাকাও বেতন বাড়েনি। তারপরও কষ্ট কইরা সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু এখন চাল তেল, চিনি, আটা, পিয়াজ সব কিছুর দাম বেশি। এমন কি মুরগি, ডিম এসবের দামও শুধু বাড়ছে। আমরা গরিব মানুষ দেশি মুরগি তো কেনার কোনোদিন সাহসও পাইনি। খাওয়ার মধ্যে শুধু ডিম আর ব্রয়লার মুরগি খাইতে পারতাম। এখন এটাও সম্ভব না। তেল, চিনির দামও নাগালের বাইরে। সামনে মনে হয় আমাদের শুধু লবণ দিয়া ভাত খাইতে হবে। এই যে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে এটা কি দেখার কেউ নেই। আমাদের তো আর বেতন বাড়ছে না।


সুমন মিয়া একটি কাপড়ের দোকানে সেলস্‌ম্যানের চাকরি করেন। সুমন মিয়া বলেন, ‘করোনা লকডাউন এসবের কারণে প্রায় দেড় বছর তো বাড়িতেই ছিলাম। ঢাকায় আসছি গত দুই মাস হয়েছে। কিন্তু বেচাকেনা আগের মতো নেই। তাই মালিক আগের চেয়ে কম বেতন দিচ্ছেন। আগে বেতন পাইতাম চৌদ্দ হাজার টাকা আর এখন পাই বারো হাজার টাকা। একদিকে জিনিসপত্রেরর দাম বাড়ছে আর অন্যদিকে বেতন কমছে। সংসারের হিসাব কেমনে কি করি? আমার মেসে সিট ভাড়া খাওয়া বাবদ খরচ ৫ হাজার টাকা। বাড়িতে পাঠাই সাত হাজার টাকা। দুই ছেলে একজন পড়ে এইটে আর একজন ফাইভে। এদের পড়াশোনার পেছনে খরচ মাসে তিন হাজার টাকা। দুই হাজার টাকায় কষ্ট করে বাজার খরচ চলতো। কিন্তু এখনতো আর দুই হাজার টাকার বাজার খরচে চলে না। হয় ছেলেদের পড়াশোনা বন্ধ কইরা দিতে হইবো না হয় এক বেলা খাইতে হইবো।’
জেসমীন আক্তার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টিউশনি করান। তার আয়ে চলে সংসার। জেসমীনের স্বামী পলাশ সরকারি চাকরির চেষ্টা করছেন। জেসমীন বলেন, আমি আর আমার স্বামী একসঙ্গে পড়তাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত দু’বছর আগে মার্স্টাস শেষ করে আমরা বিয়ে করেছি। বিয়ের পরই করোনা শুরু হওয়ায় আমরা কোনো চাকরিতে ঢুকতে পারিনি। আমার স্বামী বিসিএস এর জন্য লেখাপড়া করছে আর আমি টিউশনি করছি। আমার টিউশনির টাকায় ভালোই আমাদের সংসার চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কেন এভাবে দাম বাড়ছে। দেশে তো এখন করোনা কমে গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা কোনোটাই নেই। বাজারে পণ্যসরবরাহ রয়েছে তাহলে দাম বৃদ্ধি কেন। এখন ভয়ে আছি সামনে আবার বাড়ি ভাড়া না বাড়িয়ে দেয়। করোনার কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় তো বাড়ি ভাড়া বাড়ায়নি। এখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে রিকশা ভাড়াও বেড়ে গেছে। যেখানে ফার্মগেট থেকে কাওরানবাজার ভাড়া ছিল ২০ টাকা সেখানে এখন ভাড়া ত্রিশ টাকা।

আজিজুল হক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মাসে বেতন ৩৫ হাজার টাকা। আজিজুল হক বলেন, বেতনের সিংহভাগ টাকা খরচ হয় বাড়ি ভাড়ায়। এর পর যে টাকা থাকে এখান থেকে দুই মেয়ে পড়ার খরচ আর বাজার খরচ করে হাতে এক টাকাও থাকে না। ভবিষ্যতের জন্য যে কিছু টাকা রাখবো তাও সম্ভব হয় না। এখন যে জিনিসপত্রের দাম সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সামনে দুই মেয়ে নতুন ক্লাসে ভর্তি বই, খাতা, ড্রেস এসব কোথা থেকে জোগান দেবো তাই ভাবছি। এখনি মাঝে মাঝে দেনা করতে হয়। রুঞ্জু আর নীপা স্বামী-স্ত্রী দু’জন চাকরি করেন। মাসে আয় পঞ্চাশ হাজার টাকা। তাদের একমাত্র ছেলে পড়ে একাদশ শ্রেণি বিজ্ঞান বিভাগে আরেক মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে। নীপা বলেন, দু’জনে চাকরি করেও সংসারের খরচ কুলিয়ে উঠতে পারছি না। বাসা ভাড়া দেই বাইশ হাজার টাকা। তারপর ছেলেমেয়ের বেতন, কোচিং, টিউটর মিলিয়ে খরচ প্রায় বিশ হাজার। আর দশ হাজার টাকায় চলে খাওয়ার খরচ। কিন্তু এখন যে অবস্থা এ টাকায় অর্ধেক মাসের খাওয়ার খরচও চলবে না।

সূত্র: মানবজমিন




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top