10143

04/24/2024 প্রতিদিন বেচা-কেনা হচ্ছে ৬ কোটি টাকার আম

প্রতিদিন বেচা-কেনা হচ্ছে ৬ কোটি টাকার আম

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ জুন ২০২২ ০৫:০২

রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিন বেচা-কেনা হচ্ছে অন্তত ৬ কোটি টাকার আম। বানেশ্বর বাজারের বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, ‘পুঠিয়া উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে বানেশ্বর। এখানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আমের মৌসুমে লেনদেন কয়েকগুন বেড়ে যায়। এবারও তাই হয়েছে। প্রতিদিন আমাদের ব্যাংকে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা লেনদেন হলেও এই সময়ে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এ হিসেবে বাণেশ্বর বাজরেই অন্তত ৬ কোটি টাকার আম কেনা-বেচা হচ্ছে।

বানেশ্বর বাজারের স্থানীয় আড়ৎদার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বানেশ্বরের আমের আড়ৎগুলোতে প্রতিদিন কয়েক হাজার ক্রেতা আসছেন। আমাদের এখানে গাছ থেকে নাহলে হাট থেকে আম কিনে নিয়ে এসে বিক্রি করছি। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে আম কিনছেন। এই আমগুলো ট্রাক নাহলে কুরিয়ারে পাঠানো হচ্ছে। প্রতিদিন এই বাজার থেকে প্রায় ১০০ ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে আম নিয়ে যাচ্ছে।’ প্রতিদিন ভোর থেকে চলছে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে বানেশ্বর হাটে চলছে আমের বেচাকেনা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে বানেশ্বর এখন গত কয়েক বছরের চেয়ে অনেক বেশি সরগরম। রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকেও ক্রেতারা আসছেন আম কিনতে। ক্রেতা-বিক্রেতা আড়ৎদাররা বলছেন, বানেশ্বরসহ প্রতিদিন রাজশাহীতে প্রায় ৬ কোটি টাকার আমের ব্যবসা হচ্ছে। একই কথা বলছেন বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এ মাসে লেনদেন অনেক বেড়েছে। বানেশ্বর বাজারের বিভিন্ন ব্যাংক, এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংও আগের তুলনায় লেনদেন কয়েকগুন বেশি হচ্ছে।

বানেশ্বর বাজারের বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ বলেন, ‘পুঠিয়া উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে বানেশ্বর। এখানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আমের মৌসুমে লেনদেন কয়েকগুন বেড়ে যায়। এবারও তাই হয়েছে। প্রতিদিন আমাদের ব্যাংকে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা লেনদেন হলেও এই সময়ে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে গত বৃহস্পতিবার ও রোববার।’

বানেশ্বর বাজারের মোবাইল ব্যাংকিং দোকানের স্বত্তবধিকারী অজয় দাস বলেন, ‘আমের মৌসুমের আগে দিনে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লেনদেন হতো। এখন সেই লেনদেন প্রতিদিন দুই লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার ও শনিবার ব্যাংক বন্ধের কারণে ৫ লাখ টাকাও ছাড়িয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টাকা পাঠানো হচ্ছে। আমি বাদে অন্য ব্যবসায়ীদেও একই অবস্থা। আমাদের এখান থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে।’ বানেশ্বর বাজারের ইজারদার ওসমান আলী বলেন, ‘বানেশ্বর আমের মোকাম মধ্যে সর্ববৃহৎ। এখানে আম কিনতে আসছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। আমরা, বাজার কমিটি ও উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের সাথে বৈঠক করেছিলাম। এই বাজারে ব্যবসায়ীসহ ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।’

বানেশ্বর বাজার বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘আমের জন্য বানেশ্বর বাজার বেশ জমজমাট। বর্তমানে এই বাজারে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে চার থেকে ৫ কোটি টাকার আম কেনা বেচা হয়। সেই সঙ্গে বাজারের আশপাশের ছোট দোকান ও আড়ৎগুলোতে আরও প্রায় অর্ধকোটি টাকার কেনা বেচা হচ্ছে।’

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীর ৯ উপজেলা ও মহানগরে এবার ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৫৯ মেট্রিক টন। আমের মোট উৎপাদন হতে পারে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন। এর মধ্যে অনেক আম বাজারে চলে এসেছে। ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি; ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারী-৪, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামবে। আম দিয়ে রাজশাহীর অর্থনীতিতে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা যোগ হবে।

বর্তমানে ক্ষিরসাপাত আম ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকা মণ ও ল্যাংড়া আম ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত দুই বছর করোনার কারণে আমের দাম না পেলেও এ বছরের আমের দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। গতবারের তুলনায় এবার লাভ বেশিই হচ্ছে। বানেশ্বর হাট ও রাজশাহী শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গুটি জাতীয় আমের দাম অন্য আমের চেয়ে অনেক কম। এ আম বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকায়। গোপালভোগ প্রায় শেষের পথে। তাই তার দাম এখন অনেক বেশি। ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়।

ক্ষীরসাপাত ও ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। লক্ষণভোগ প্রতিমণ ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দুধস্বর, কালুয়াসহ কয়েক প্রজাতি আম ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিখ্যাত ফজলি ও আম্রপালি আম আসবে ১৫ জুন থেকে।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]