10643

04/28/2025 মোংলায় ভারতের ট্রায়াল জাহাজ

মোংলায় ভারতের ট্রায়াল জাহাজ

রাজটাইমস ডেস্ক

৯ আগস্ট ২০২২ ১৮:০০

পরীক্ষামূলকভাবে ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় মোংলা সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ করল ভারতীয় জাহাজ। পণ্যের চালান নিয়ে প্রথমবারের মতো পৌঁছেছে এই জাহাজ। সোমবার (৮ আগস্ট) সকালে বাংলাদেশী পতাকাবাহী এমভি রিশাদ রায়হান নামে জাহাজটি নোঙর করে বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে । মোংলা বন্দর ব্যবহারের চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই সেটি ভারতের কলকাতা বন্দর থেকে ছেড়ে আসে। খবর বণিক বার্তার।

প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে চার বছর আগে করা চুক্তির প্রথম চালানটি এসেছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। দুই বছর বাদে গতকাল মোংলা বন্দর ও সড়কপথ ব্যবহারের ট্রায়াল রান হিসেবে ‘সেভেন সিস্টার্সের’ তথা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দুটি রাজ্যের জন্য পণ্য এল দুই কনটেইনারে করে। একটি মোংলা-তামাবিল (সিলেট) সড়কপথ ব্যবহার করে যাবে মেঘালয় রাজ্যে। অন্যটি মোংলা-বিবিরবাজার (কুমিল্লা) সড়কপথ দিয়ে আসামে যাবে।

মোংলা বন্দর সূত্রে জানা যায়, ‘এগ্রিমেন্ট অন দি ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া (এসিএমপি)’ শীর্ষক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানির ট্রায়াল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এমভি রিশাদ রায়হান নামে জাহাজটি গতকাল পণ্যবাহী দুটি কনটেইনার নিয়ে আসে। এর একটিতে ইলেকট্রোস্টিল কাস্টিংস লিমিটেডের ৭০ প্যাকেজে ছিল ১৬ দশমিক ৩৮০ টন লোহার পাইপ। আরেকটি কনটেইনারের ২৪৯ প্যাকেজে প্লাস্টিক তৈরির উপকরণ ৮ দশমিক ৫ টন প্রিফোম ছিল।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, নৌযানটি থেকে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় কনটেইনার ও স্টিল পণ্য খালাসের কাজ শুরু হয়। পরে সেগুলো সরাসরি টার্মিনাল ট্রাক্টরে ওঠানো হয়। এরপর নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ১২টার দিকে সেই পণ্য নিয়ে টার্মিনাল ট্রাক্টরটি সড়কপথে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে গতকাল একটি মাইলফলক সৃষ্টি হলো। ফলে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দুই দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে ট্রান্সশিপমেন্টের উদ্যোগ নেয় ভারত ও বাংলাদেশ। ফলে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে আরো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারত থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য মোংলা বন্দর ব্যবহার-সংক্রান্ত একটি চুক্তি এবং স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত মার্চে অনুষ্ঠিত ১৩তম ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস (জেএসসি) বৈঠকের পর ট্রায়াল রান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে চুক্তি হয়। এক বছর পর ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে এ-সংক্রান্ত পরিচালন পদ্ধতির মান বা এসওপি সই হয়। এর পরই পরীক্ষামূলক চার কনটেইনারের একটি চালান কলকাতার শ্যামপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে ২০২০ সালের ২১ জুলাই। চালানটি পরে সড়কপথে ভারতের ত্রিপুরায় নেয়া হয়, যাতে ছিল রড ও মসুর ডাল।

ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের চারদিনের মাথায় ওই বছরের ২৫ জুলাই ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যের একটি চালান পৌঁছে চট্টগ্রাম বন্দরে। মোট ৪৫ কনটেইনারের ভারতীয় পণ্যের চালানটি চীনের নিংবো, ভিয়েতনামের হো চি মিন, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দর হয়ে ওই বন্দরে পৌঁছে। বন্দরে এক জাহাজ থেকে আরেক জাহাজে স্থানান্তর করে তা নেয়া হয় কলকাতায়। এরপর করোনাভাইরাস মহামারীসহ নানা জটিলতায় চুক্তির আওতায় আর কোনো ট্রায়াল রান হয়নি। মোংলা বন্দর ব্যবহারবিষয়ক চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে চারটি ট্রায়াল রানের প্রথমটি শুরু করেছে ভারত। জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে জেএসি শিপিং এবং সিঅ্যান্ডএফ হিসেবে আছে সুইফট লজিস্টিক সার্ভিসেস লি.।

কলকাতার হলদিয়া বন্দর থেকে ১ আগস্ট ছেড়ে আসা জাহাজটির পণ্য মোংলা বন্দর জেটিতে খালাসের সময় ভারতের সহকারী হাইকমিশনার ইন্দ্রজিৎ সাগর, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ তরফদার, মোংলা কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। জেটি পরিদর্শন শেষে মোংলা বন্দর সভাকক্ষে আলোচনাসভা হয়। সেখানে ভারতের সহকারী হাইকমিশনার ইন্দ্রজিৎ সাগর বলেন, ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে আরো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ২০২২ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ১৩তম ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস (জেএসসি) বৈঠকের পর ট্রায়াল রান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তারই প্রথম ট্রায়ালের পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস ও পরিবহন শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ট্রানজিট ব্যবস্থার কার্যকারিতা নির্ভর করে বিনিয়োগ, লজিস্টিকস ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর। ট্রান্সশিপমেন্ট একটি মালটিমোডাল ব্যবস্থা, যার প্রক্রিয়া ট্রানজিট ব্যবস্থার চেয়ে কিছুটা জটিল। ভারত-বাংলাদেশ ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থায় তিনটি ধাপে পণ্য মূল গন্তব্যে পৌঁছে। প্রথমে সমুদ্রপথে, এরপর বাংলাদেশী যানে করে ভারতীয় সীমান্তে, তারপর আবার ভারতীয় যানে আনলোড-লোড করে পণ্য মূল গন্তব্যে পৌঁছবে। এ লোড-আনলোড করতে হলে পণ্য বহনের খরচ ও সময় দুটোই বেড়ে যায়। তাই যদি বাংলাদেশের যান ভারতের কাছ থেকে ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে মূল গন্তব্য পর্যন্ত পণ্য নিয়ে যেতে পারে, তাহলে খরচ ও সময় উভয়ই সাশ্রয় হয়।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]