10849

04/23/2025 ছবি-টিকটক পোস্ট, শিক্ষিকাকে স্কুলে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস!

ছবি-টিকটক পোস্ট, শিক্ষিকাকে স্কুলে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস!

রাজটাইমস ডেস্ক

২৬ আগস্ট ২০২২ ০৬:৫৪

রাজশাহীতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকাকে ফেসবুকে ছবি শেয়ার দেয়ায় প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস করানোর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পবা উপজেলার হাড়ুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষিকা রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ রায়পাড়া এলাকার বাসিন্দা। ২০০৮ সাল থেকে তিনি হাড়ুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত। ২০০৬ সাল থেকে শিক্ষকতায় যুক্ত হন তিনি। ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি।

ওই শিক্ষিকা জানান, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক নাজমা ফেরদৌসি। অন্যান্য শিক্ষকরাও এ সময় স্কুলে ছিলেন। শিক্ষার্থীরাও ছিল ক্যাম্পাসে।

এ সময় ফেসবুকে ছবি দেওয়া নিয়ে সবার সামনেই তাকে তিরস্কার করেন প্রধান শিক্ষক। এরপর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি সোহেল জুবেরি সুজনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল আজিজকে ফোন দিয়ে ডাকেন প্রধান শিক্ষক নাজমা ফেরদৌসি। এরপর আব্দুল আজিজ সেখানে উপস্থিত হয়ে ওই শিক্ষিকাকে কান ধরে ওঠবস করতে বাধ্য করেন।

এর আগে ওই শিক্ষিকাকে আব্দুল আজিজ গালাগাল দেন এবং মারতেও উদ্যত হন বলে দাবি করেন ওই স্কুলশিক্ষিকা।

ওই শিক্ষিকা অভিযোগ করে বলেন, স্কুল সভাপতির বাবা আব্দুল আজিজ সবার সামনে প্রকাশ্যে অপমানজনক কর্মকাণ্ড ঘটালেও প্রতিবাদ জানাননি প্রধান শিক্ষক। উল্টো ঘটনা জানাজানি হলে বদলি, এমনকি চাকরিচ্যুতিরও হুমকি দেন প্রধান শিক্ষক নাজমা ফেরদৌসি।

ভুক্তভোগী শিক্ষিকা জানান, এ ঘটনায় তিনি চরমভাবে অপমানবোধ করেছেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ঘটনার পর বিষয়টি তিনি সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুনা লায়লাকে জানিয়েছেন। প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বিদ্যালয় ছুটির পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরেও গিয়েছিলেন; কিন্তু অফিস ছুটি হয়ে যাওয়ায় অভিযোগ দেওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী শিক্ষক দাবি করেন, তিনি মূলত বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তার একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনও আছে। তাতে ফেসবুক আইডি চালু থাকলেও সেটি তিনি ব্যবহারে অভ্যস্ত নন। ওই ফোনটি বাসায় থাকে। বাচ্চারা সেটিতে গেম খেলে, ছবি তোলে। তার অজান্তে মোবাইলে থাকা সব ছবি দিয়ে টিকটক ভিডিও বানিয়েছিল শিশুরা; কিন্তু জানতে পেরে সেগুলো মুছে দিয়েছিলেন তিনি।

ওই শিক্ষিকা জানান, শনিবার রাতে তাকে বান্ধবীর সঙ্গে তোলা একটি ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান প্রধান শিক্ষক। ফোনটি ওই সময় তার বোনের কাছে ছিল। অসাবধানতায় ছবিটি ফেসবুকের মাই-স্টোরিতে চলে যায়। রোববার সকালে তিনি স্কুলে যান। সেদিন প্রধান শিক্ষক নাজমা ফেরদৌসি ছুটিতে ছিলেন। তাকে প্রধান শিক্ষকের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করা নিয়ে জেরা করেন আরেক সহকারী শিক্ষক ইসমত আরা শিউলি। বিষয়টি অসাবধানতাবশত উল্লেখ করে তিনি ক্ষমা চান। তারপরও বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানান ইসমত আরা শিউলি। তার বাড়িতে আরেক সহকারী শিক্ষিকা জেসমিন সুলতানা ববিকে পাঠিয়ে জোর করে মোবাইল ফোনটি আনান। রোববার পর্যন্ত ফোনটি তাদের কাছেই ছিল।

তবে ওই শিক্ষিকাকে কান ধরে ওঠবস করানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক নাজমা ফেরদৌসি। তিনি পালটা অভিযোগ করেন, ওই শিক্ষিকা দীর্ঘদিন ধরেই তার ব্যক্তিগত ছবি নিজের ফেসবুকে দিয়ে আসছিলেন। টিকটক ভিডিও বানিয়ে ফেসবুকে প্রচারও করে আসছিলেন। বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি তা আমলেই নেননি। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জানিয়েছেন।

শিক্ষিকাকে কান ধরে ওঠবসের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি সোহেল জুবেরি সুজন। তিনি বলেন, আমার বাবা আব্দুল আজিজ একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। বয়স্ক মানুষ। এলাকার মানুষ উনাকে মুরব্বি বলেই মানেন। তাকে প্রধান শিক্ষক ডেকেছিলেন বলে সেখানে গেছেন। আমার বাবা ওই শিক্ষিকাকে কান ধরে ওঠবসের নির্দেশ দেননি। বরং ওই স্কুলশিক্ষকই তার ভুল হয়েছে বলে ক্ষমা চেয়ে নিজেই কান ধরে ওঠবস করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষক আমার কাছে অভিযোগ দিলে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বৃহস্পতিবার বিকালে ভুক্তভোগী শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডিসি স্যার মিটিংয়ে আছেন। মিটিং শেষ হলে স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেব।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]