04/29/2025 মজুরি বৃদ্ধি, বাড়ছে চায়ের দাম
রাজটাইমস ডেস্ক
২৯ আগস্ট ২০২২ ১৬:৩১
চা-শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হল নতুন মজুরি। এর আগে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে কার্যত অচল ছিল দেশের চা উৎপাদন খাত। দীর্ঘ অচলাবস্থায় ক্ষতি হয়েছে চা-উৎপাদন খাতেও। এর রেশ পড়তে শুরু করেছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চা-পাতার মূল্যে। খবর টিবিএসের। খবর টিবিএসের।
এক-দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বাজারে চায়ের প্রতি কেজি দাম সর্বনিম্ন ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। নিলামে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সর্বশেষ দুই নিলামে (১৫ ও ১৬তম নিলাম) কেজিপ্রতি চায়ের গড় দাম ছিল ২২০ টাকারও বেশি। যদিও ১০ থেকে ১৪তম নিলামে চায়ের গড় দাম ছিল ২০৭ থেকে ২১২ টাকার মধ্যে। শ্রমিক সংকট শুরু হওয়ার পর নিলামে চা সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কায় চায়ের দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে চায়ের প্রধান নিলাম কেন্দ্র চট্টগ্রামের চা প্রস্তাবের তথ্য বলছে, ভরা মৌসুমে আগের বছরের চেয়ে প্রতিটি নিলামে বাড়তি চা সরবরাহের ঘোষণা দেয়া হলেও আসন্ন নিলামে চা সরবরাহ কমে যাচ্ছে। আজ অনুষ্ঠেয় ১৭তম নিলামে বিক্রির জন্য চা প্রস্তাব করা হবে ৪৬ হাজার ৪৮৯ প্যাকেজে (প্রতি প্যাকেজে ৫০ কেজি) মাত্র ২৩ লাখ ১৯ হাজার ৮০১ কেজি। যদিও ২০২১-২২ অর্থবছরের একই নিলামে অর্থাৎ ১৭তম নিলামে বিক্রির জন্য চা প্রস্তাব করা হয়েছিল ৫৩ হাজার ২৯ প্যাকেজে ২৯ লাখ ৮ হাজার ১১০ কেজি, যা আগের বছরের একই নিলামের চেয়ে ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৩০৯ কেজি কম প্রস্তাব করা হবে। জুলাই-আগস্টে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদন হওয়ায় নিলামেও এর প্রভাব পড়ে। কিন্তু সম্প্রতি শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে চা বাগানের অচলাবস্থার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে আগামী কয়েকটি নিলামে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
জানা গিয়েছে, নিলামে চা সরবরাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি চায়ের দামও ক্রমেই বাড়ছে। চলতি বছরের শুরুতে কেজিপ্রতি চায়ের গড় দাম ২২২ টাকা হলেও এক পর্যায়ে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম ২০০ টাকার নিচে নেমে আসে। সর্বশেষ ১৩তম চট্টগ্রাম নিলামে চায়ের কেজিপ্রতি গড় দাম ছিল ১৯৫ টাকা। সম্প্রতি চা বাগানে শ্রমিক অসন্তোষের প্রভাব ছাড়াও সর্বোপরি চা উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। সর্বশেষ কয়েকটি নিলামে চায়ের কেজিপ্রতি দাম ছিল ২১৮ থেকে ২২০ টাকা। অর্থাৎ গত কয়েকটি নিলামে চায়ের কেজিপ্রতি গড় দাম অন্তত ২০ টাকা বেড়েছে।
চা খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের চা খাতে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়। ১৮ দিনের ধর্মঘটের কারণে বাগানগুলোতে ৬ থেকে ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত পাতা গজিয়েছে। ভালোমানের চা উৎপাদনের জন্য উত্কৃষ্ট হচ্ছে ৩ ইঞ্চি পরিমাণ পাতা। সময়মতো পাতা উত্তোলন না হওয়ায় ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত পাতা উত্তোলন করতে হচ্ছে। যার কারণে বাগানগুলোতে চায়ের গুণগত মান কমে যাবে। গতকাল কাজ শুরু হলেও বাগানের সব স্থান থেকে পাতা উত্তোলন করতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এ এক সপ্তাহে বিভিন্ন প্লটে পাতাগুলো আরো বেড়ে চা উৎপাদনের অনুপযোগী পাতায় পরিণত হবে। এতে দেশের বাগানগুলোতে আগামী অন্তত এক-দেড় মাস চা উৎপাদন কমে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ইউসুফ বণিক বার্তাকে বলেন, সরবরাহ কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই চাহিদার কারণে দামে প্রভাব পড়বে। দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে চায়ের চাহিদার প্রবৃদ্ধি থাকলেও উৎপাদন সে অনুপাতে বাড়ে না। তাছাড়া সাম্প্রতিক ধর্মঘটের ঘটনায় উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটেছে। অন্যদিকে বিগত বছরের মতো এ বছর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেটিও উৎপাদনে প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে মজুরি বৃদ্ধিসহ সাম্প্রতিক চা সংকটের মধ্যেই নিলাম, খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে চায়ের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠান, পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যে দেখা গিয়েছে, গত দুই নিলাম থেকেই চায়ের দাম বাড়ছে। এরই মধ্যে পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন বাগানের মোটা চায়ের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০ টাকা। অন্যদিকে ভালোমানের ক্লোনসহ বিভিন্ন গ্রেডের চায়ের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৪০ টাকা। ধর্মঘটের কারণে আগামী কয়েকটি নিলামে চাহিদা অনুপাতে চা সরবরাহ না হওয়ার শঙ্কায় চায়ের দাম প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।
জানতে চাইলে প্ল্যান্টার্স ব্রোকার্সের স্বত্বাধিকারী মো. করিম বণিক বার্তাকে বলেন, বাজারে চা সরবরাহ আপাতত স্বাভাবিক রয়েছে। তবে গত কয়েকটি নিলামে চায়ের গড় দাম কিছুটা বেড়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে চায়ের দাম বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে বাগানের চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিজনিত উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি আরো পরে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে নিলাম কিংবা বাগান মালিকরা লাভবান না হলেও খুচরা ও পাইকারি বাজারে এরই মধ্যে চায়ের দাম বেড়ে গিয়েছে। এটা মজুদপ্রবণতা কিংবা হুজুগের কারণেও হতে পারে।
ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সাপ্তাহিক নিলাম প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, চট্টগ্রামের নিলামে দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশেরও বেশি চা বিক্রি হয়। প্রস্তাব করা গড়ে ৭০ শতাংশ চা বিক্রি হয় নিলামে। তবে গত কয়েকটি নিলামে উত্তোলনকৃত চায়ের ৮৫-৯০ শতাংশই কিনে নিয়েছে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ নিলাম থেকে ফেরত গিয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ চা। আগামী নিলামগুলোতে চা সরবরাহ আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সংগ্রহ বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে নিলামে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়লেও খুচরা ও পাইকারি বাজারে এর কয়েক গুণ দাম বেড়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রামের মেসার্স পাবনা টি হাউজের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুর রহমান বলেন, বছরের মাঝামাঝিতে বাগান থেকে সবচেয়ে ভালোমানের চা সরবরাহ হয়। বছরব্যাপী ব্র্যান্ডিং করে বিপণন করতে এ সময়ই সবচেয়ে বেশি চা সংগ্রহ করেন মোড়কজাত কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী। কিন্তু গত দুই নিলামে চাহিদা অনুপাতে চায়ের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভালোমানের ক্লোন চায়ের দাম।