10974

05/01/2024 ঘোড়ায় চড়ে স্কুলে যান শিক্ষক

ঘোড়ায় চড়ে স্কুলে যান শিক্ষক

রাজটাইমস ডেস্ক

৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪৭

পরনে শার্ট-প্যান্ট, পায়ে পাদুকা। হাতে লাগাম ধরে ঘোড়ার পিঠে চেপে ছুটে চলেন তিনি। গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে নিয়মিত তাঁর যাতায়াত। প্রায় তিন বছর ধরে এভাবে প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন স্কুলশিক্ষক এ টি এম লাল মোহাম্মদ। ঘোড়ায় চড়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন তিনি। তবে শখে নয়, নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছার জন্য তিনি বাহন হিসেবে ব্যবহার করছেন ঘোড়া।

লাল মোহাম্মদ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার উত্তর জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তাঁর বাড়ি উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের নানছোর গ্রামে। তিনি বলেন, তিন বছর আগে বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে দুর্গম এলাকার এক বিদ্যালয়ে বদলির কিছুদিন পর ঘোড়াটি কেনেন তিনি। অবশ্য প্রথমে মোটরসাইকেলে করে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতেন। পরে নানা অসুবিধার কারণে ঘোড়ায় চড়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছেন।

লাল মোহাম্মদ বলেন, দীর্ঘদিন বাড়ির আশপাশের বিদ্যালয়ে চাকরি করেছেন। বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেলে করে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতেন। সর্বশেষ উত্তর জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয় তাঁর। বিদ্যালয়ে যাওয়ার ১০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে হুলিখালী থেকে জামালপুর পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার রাস্তা বেহাল। বর্ষকালে কাদা আর গ্রীষ্মকালে বালুতে যাতায়াত করতে সমস্যা হয় মোটরসাইকেলে চড়ে। মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে গেলে বাকি পথ মোটরসাইকেল ঠেলে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে হয়। এতে যাতায়াতের সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছানো সম্ভব হতো না।

এরপর সিদ্ধান্ত নিলেন, বিকল্প কোনো বাহনে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করবেন, যাতে দুর্ভোগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছানো যায়। সে ভাবনা থেকে নওগাঁর মহাদেবপুরে ঘোড়ার সন্ধানে যান। সেখান থেকে একটি ঘোড়া কিনে নিয়ে আসেন। এরপর ঘোড়াকে নিজের মতো করে পোষ মানিয়ে নেন। এরপর ঘোড়া নিয়ে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ, লাইলাতুন নেসা বলে, তারা ঘোড়ায় চড়ার বায়না ধরলে ওই শিক্ষক সে শখ পূরণ করেন। তারা শিক্ষকের ঘোড়াকে খেতে দেয় মাঝেমধ্যে। স্যার এভাবে স্কুলে আসায় তাদের খুব ভালো লাগে।

উত্তর জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বয়েন উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, লাল মোহাম্মদ একজন ব্যতিক্রম ও দায়িত্বশীল শিক্ষক। তিনি ঘোড়া নিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়ে আসেন।

শিক্ষক লাল মোহাম্মদ আরও বলেন, প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে জেগে ঘোড়াকে খাওয়ানো ও যতœ নেওয়ার পর ছোটেন বিদ্যালয়ের উদ্দেশে। প্রথম দিকে অনেকে হাসাহাসি করলেও এখন আর করেন না। সহকর্মী, শিক্ষার্থী ছাড়াও এলাকার লোকজন বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। অন্য বাহনের চেয়ে ঘোড়ায় যাতায়াত পরিবেশের জন্য যেমন ভালো, তেমনি নিরাপদও। ঘোড়াকে খাওয়ানোসহ সব পরিচর্যা নিজেই করেন। মাঝেমধ্যে পরিবারের সদস্যরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ভবানীগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষক শাহিনুর রহমান বলেন, লাল মোহাম্মদ একজন দায়িত্ববান শিক্ষক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি নিয়মিত ঘোড়ার পরিচর্যাও করেন।

সোনাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাহারুল হক বলেন, হুলিখালী থেকে জামালপুর পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা হওয়ার কারণে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে অচিরেই রাস্তাটি পাকা করার ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী খলিলুর রহমান জানান, তিনি এ বিষয়ে খোঁজ–খবর নিয়ে রাস্তাটি পাকা করার চেষ্টা করবেন।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]