04/30/2025 ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত সাজেদা চৌধুরী
রাজটাইমস ডেস্ক
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:২৫
জাতীয় সংসদের উপনেতা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রতি জাতীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
সোমবার (১২সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টায় সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। এসময় সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, জাসদ কেন্দ্রীয় সংসদ, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি, ছাত্রলীগ ঢাবি শাখা, আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, রেজাউর রশীদ খান আহ্বায়ক বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, নরসিংদী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ,জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশন, ইসমত কাদির গামা, জাতীয় মহিলা শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ গণআজাদী লীগ, অরুণ রানার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, তারিক সুজাত ও কবি হানিফ খানের নেতৃত্ব জাতীয় কবিতা পরিষদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগ,বাংলাদেশ যুব মৈত্রী,কে এম খালিদের নেতৃত্বে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, লিয়াকত আলী লাকী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় পার্টি (জেপি), উপাচার্য ড. শরফুদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলা আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ,উপ-পুলিশ কমিশনার (রমনা), মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশ জাদুঘর, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি,জাতীয় শ্রমিকলীগ,নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, সংগীত ভবন, বাংলাদেশে গার্লস গাইড,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ব্যক্তি পর্যায়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণী, জাতীয়তাবাদী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ।
দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলের সংকটে তিনি সাহসী নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক এবং আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সহকর্মী। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক বড় অধ্যায় জুড়ে রয়েছেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি রণাঙ্গণেও ছিলেন সৈনিক। স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। তারপর আবার সংকট, রক্তাক্ত পঁচাত্তরের পর প্রত্যেকটি সংকটে তিনি ছিলেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেকে জানে না, তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অনেক দিন বন্দি ছিলেন। তার শূন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়।’
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে সাজেদা চৌধুরীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। পঁচাত্তরের পর দলকে সংগঠিত করার জন্য তিনি কাজ করেছেন। ৮১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দলের সভাপতি হয়েছেন, তখন সাজেদা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছায়ার মতো ছিলেন।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০০৭-৮ সালে যখন অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, তখন নেত্রীর পাশে ছিলেন সাজেদা চৌধুরী। আওয়ামী লীগের ইতিহাসতো বটেই, বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে হলেও সাজেদা চৌধুরী থাকবে। তার এই বিদায় আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার। দেশ একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়েছে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় নারী সংগঠক হলেন সৈয়দ সাজেদা চৌধুরী, এটা আমরা ভুলে গেছি। তার অবদান আমাদের মনে রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা যখন হাসপাতাল করি, যখন লোক পাচ্ছিলাম না, তখন তিনি মেয়েদের পাঠিয়েছিলেন। আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধে নারী নেতৃত্বের মধ্যে উনি ছিলেন এক নম্বরে।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘তিনি একজন অকুতোভয় নির্ভীক সৈনিক ছিলেন। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। ছয় দফা আন্দোলনে তিনি সাহসী ভূমিকা রেখছেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি মহিলাদের সংগঠিত করা, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং অনুপ্রাণিত করে মুক্তিযুদ্ধে পাঠানোসহ তিনি সেসময় মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সহায়তা করে করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যখন বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছেন, সেসময় সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তখন তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠিনভাবে বিরোধিতা করেন। তখন তার সুদৃঢ় অবস্থানের কারণে আমরা বঙ্গবন্ধুর নামে রাজনীতি শুরু করতে পেরেছিলাম।’
আমু বলেন, ‘সাজেদা চৌধুরী অকুতোভয় ছিলেন। সংকটকালে তিনি সরে যাননি। আপোস নিয়ে রাজনীতি করেননি। নতুন প্রজন্মকে উনার নেতৃত্ব অনুসরণ করা উচিত। তার এই প্রস্থান দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’
শ্যামা ওবায়েদ বলেন, ‘সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আজকে আমাদের মাঝে নেই। উনার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তিনি মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এদেশের রাজনীতিতে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের রাজনীতে তিনি অবশ্যই অবিস্মরণীয়। উনার অবদান অবশ্যই মানুষ স্মরণ করবে। আমার বাবার সঙ্গে তিনি রাজনীতি করেছেন, একে অপরের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে যখনই কোথাও দেখা হয়েছে, রাজনীতির ওপরে ওঠে গিয়ে তাদের সম্পর্ক ছিল। আমি নিজে উনার সঙ্গে ২০০৯ সালে ও ২০১৮ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি এবং যখনই উনার সাথে আমার দেখা হয়েছে, উনি আমাকে স্নেহের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন।’
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দাঁড়িয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর বিকাল ৪টায় সাজেদা চৌধুরীর মরদেহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ নেওয়া হবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বাদ আছর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মরহুমের দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সিনিয়র সদস্য সাজেদা চৌধুরী দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে রবিবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।