11213

03/29/2024 যেভাবে নতুন উচ্চতায় দেশের গার্মেন্ট এক্সেসরিজ উৎপাদন

যেভাবে নতুন উচ্চতায় দেশের গার্মেন্ট এক্সেসরিজ উৎপাদন

রাজটাইমস ডেস্ক

২ অক্টোবর ২০২২ ১৯:১৬

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ক্রমাগত উন্নতির যাত্রা শুরু বিগত শতাব্দীর শেষের পর্যায় থেকে। বর্তমানে শুধু পোশাক নয়, পোশাক তৈরীর প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজ সরবরাহ সফলতা দেখছে বাংলাদেশ। খবর টিবিএসের।

১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি করুগেটেড কার্টন উৎপাদনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করার পর– বাংলাদেশের গার্মেন্ট এক্সেসরিজ উৎপাদন খাত বর্তমানে রেডিও ফ্রিকয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি)'র মতো সরবরাহ চক্রে ট্র্যাকিং এর কাজে ব্যবহৃত স্মার্ট পণ্য (কম্পোনেন্ট) উৎপাদন করছে। উন্নততর পণ্যের এ তালিকায় আরও যুক্ত হয়েছে পরিবেশবান্ধব পচনশীল বা বায়োডিগ্রেডেবল প্যাকেজিং।

ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ এই শিল্পটি রপ্তানিযোগ্য পোশাক পণ্যের ৯০ শতাংশ দরকারি এক্সেসরিজ সরবরাহ করছে। এখন খাতটি বিশ্ববাজারের চাহিদা পূরণের একটি হাব হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখছে।

বর্তমানে প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তাানিতে দরকারি উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি এক্সসরিজ ও প্যাকেজিং খাতটি সরাসরি রপ্তানি অর্জন করেছে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের। আর এই খাত থেকে ক্রমে চীনের সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায়– শিল্প সংশ্লিষ্টরা ভবিষ্যৎ রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়ে আরও আশাবাদী।

এ কারণেই নতুন বিনিয়োগ আসছে খাতটিতে; আবার বিদ্যমান কোম্পানিগুলি– ব্র্যান্ডেড গার্মেন্টস ও অন্তর্বাসের বিশেষ বক্সের জন্য অর্নামেন্টাল লেইস, হুক, স্পেশালাইজড লেইসের মতো পণ্য উৎপাদনে আরও বেশি জোর দিতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন মতি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আরএসএস অ্যাকসেসরিজ নামের একটি কোম্পানি ইতিমধ্যেই বিশেষায়িত কম্পোনেন্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে।

তিনি বলেন, বিদ্যমান বেশ কয়েকটি কোম্পানি এখন এই ধরনের আইটেম তৈরির লক্ষ্যে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৩৩টি কোম্পানি নতুন বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস এক্সেসরিজ খাতের আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে– কারণ চীন আর এ ধরনের কম দামের আইটেম তৈরিতে আগ্রহী নয়, বরং দেশটি অত্যাধুনিক আইটেমের দিকে বেশি মনোযোগী।

একই মত পোষণ করেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) এর চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক।

এ বিশেষজ্ঞ টিবিএসকে বলেন, আরও উন্নত প্রযুক্তির খাতে জোর দেওয়ায়– চীন ধীরে ধীরে এক্সেসরিজ খাত থেকে দূরে সরে যাবে। বাংলাদেশ এ সুযোগটি নিতে পারে।

ক্রমবর্ধমান সামর্থ্য

সুরক্ষা ট্যাগের বিকল্প স্মার্ট ট্র্যাকিং সিস্টেম আরএফআইডি তৈরির দক্ষতা বিকাশের পাশাপাশি, এক্সেসরিজ শিল্পের পণ্য তালিকায় রয়েছে বারকোড স্টিকার এবং পলি স্টিকার। অথচ পাঁচ বছর আগেও বাংলাদেশ চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে এ ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর জিনিসপত্র আমদানি করত।

ডিম্ড এক্সপোর্ট হিসেবে গত তিন দশকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী হয়ে উঠেছে প্যাকেজিং ও এক্সেসরিজ শিল্প। বর্তমানে প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তাানির মধ্যে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের এক্সেসরিজ আইটেম রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে সরবরাহের ক্ষমতা এখন ৯০ শতাংশের বেশিতে পৌঁছেছে। স্থানীয় বাজার থেকে সরাসরি এক্সসরিজ এবং প্যাকেজিং সংগ্রহ করতে পারায় পোশাক রপ্তানিকারকদের রপ্তানির লিডটাইমেও উন্নতি হয়েছে।

এক্সেসরিজ তৈরির কারখানার সংখ্যা এখন ১,৪০০টি। বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতে, এই শিল্পের বিনিয়োগের পরিমাণ ৭০০ কোটি ডলার। আর কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫ লাখ মানুষের।

এ খাতে অন্তত ৩০টি কোম্পানি রয়েছে, যেগুলোর একেকটির বিনিয়োগের পরিমাণ পাঁচশ কোটি টাকার উপরে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে।

২০৩০ সাল নাগাদ রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দেশের পোশাক খাত।

এটি অর্জিত হলে, এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং খাত ১৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট শিল্পের ব্যক্তিরা।

মোয়াজ্জেম হোসেনের মতে, 'আমাদের এক্সেসরিজ রপ্তানির হাব হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের পোশাক ছাড়াও অন্যান্য পণ্যের প্যাকেজিং বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সক্ষমতা রয়েছে'।

এজন্য বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের এ খাতের প্রতিযোগী সক্ষমতা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের ইতিবাচক মনোভাব তুলে ধরতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহায়তা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

শুরুটা যেভাবে

১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ে দেশে এক্সেসরিজ উৎপাদনে সক্ষম কোনো কারখানা না থাকায়– স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারীরা পুরানো এবং ব্যবহৃত করুগেটেড কার্টনে পণ্য রপ্তানি করত বলে অবহিত সূত্রগুলি জানিয়েছে।

মূলত, বিভিন্ন আমদানিকৃত পণ্যের কার্টন রপ্তানিমুখী পোশাক পণ্য বহনের জন্য প্রস্তুত করার জন্য ম্যানুয়ালি কেটে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা হতো।

১৯৮৬ সালের দিকে খান এন্টারপ্রাইজ (বর্তমানে খান এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং কোম্পানি)-সহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে আসা কার্টন পুনঃপ্রস্তুত করে পোশাক কারখানায় সরবরাহ করতো, যার পরিমাণ ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

এরপর কার্টন পুনঃপ্রস্তুতের ব্যবসায় আসে– প্যানারোমা প্রিন্টার্স, রূপসা প্যাকেজিং, হাবিব বক্স, ম্যাক প্যাকেজিং, মডার্ন প্যাকেজিং, সাইমন প্যাকেজিং, কুলশী প্যাকেজিং, খান এন্টারপ্রাইজ, মোহাম্মদী প্যাকেজিং এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং।

কুলশী প্যাকেজিং এর সত্ত্বাধিকারী শফিউল্লাহ চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, দেশে প্রথম সেমি-অটো মেশিনে কার্টন তৈরি শুরু করে প্যানারোমা প্রিন্টার্স এবং প্রথম বড় আকারের কারখানা ছিল ম্যাক প্যাকেজিং। দুটি প্রতিষ্ঠানই ১৯৮৮ সালের দিকে শুরু হয় এবং উৎপাদনের একটি অংশ রপ্তানি করতো।

১৯৯০ সালের আগপর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৮টি এক্সেসরিজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ছিল এবং ওই সময়ে এ খাতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ডলারেরও কম।

১৯৯৫ সালের পর থেকে কার্টনের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে– ব্যাকবোর্ড, নেক বোর্ড, কলার বোন, কলার সেট, সিউইং থ্রেড, ইলাস্টিক, বোতাম, জিপার, পলি ব্যাগ, প্লাস্টিকের হ্যাঙ্গার, মেইন লেবেল, সোজ লেবেল আর কেয়ার লেবেল ইত্যাদি।

মোয়াজ্জেম হোসেন মতি বলেন, ২০০০ সালের পর ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করায় করায় এ খাতটি নতুন গতি লাভ করে।

স্থানীয় কোম্পানিগুলি– বোতাম, ইলাস্টিক, ইন্টারলাইনিং, মোটিফ, পকেটিং ফ্যাব্রিক, লাইনিং, ইন্টারলাইনিং ইলাস্টিক, কর্ড, রিবন, রিভেট এবং টগলের মতো বিভিন্ন শৈলী এবং ডিজাইনের জিনিসপত্র তৈরি করতে শুরু করে। এসব পণ্য এর আগে চীন, হংকং, কোরিয়া থেকে আমদানি করতে হতো।

আর গত চার বছর আগে এসে দুটি বহুজাতিক কোম্পানি– চেকপয়েন্ট সিস্টেমস বাংলাদেশ লিমিটেড, এভেরি ডেনিসন এবং এবং স্থানীয় আদজি ট্রিমস লিমিটেড— আরএফআইডি'র মতন প্রযুক্তিনির্ভর এক্সেসরিজ আইটেম তৈরি করতে শুরু করে।

এক্সেসরিজ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হলো– পলিপ্রোপিলিন রেজিন, কাগজ, মুদ্রণ কালি, রাসায়নিক, কার্টন পেপার ও জিপার ধাতু।

উদ্যোক্তারা বলছেন, করুগেটেড কার্টন তৈরির মাধ্যমে যে কারখানাগুলি ব্যবসা শুরু করেছিল– প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে প্রয়োজনীয় বড় বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের অর্ধেকেরও বেশি এখন ব্যবসায় নেই।

অনেক পোশাক কারখানাও এক্সেসরিজ খাতে বিনিয়োগ করেছে। শীর্ষস্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারকদের মধ্যে একটি মন্ডল গ্রুপ– মন্ট্রিমস লিমিটেড নামে একটি কারখানা স্থাপন করেছে।

এছাড়া এনভয় গ্রুপ, ডেকো গ্রুপ, কেডিএস, এপিলিয়ন, ব্যাবিলন, ফোর গ্রুপ, সাদমা ফ্যাশন, ওনাস গ্রুপ, ডিজাইনটেক্স গ্রুপ, ওয়েল গ্রুপসহ অন্তত ৫০টি কারখানা এক্সেসরিজ খাতে বিনিয়োগ করেছে।

মূল খবরের লিঙ্ক

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]