11511

03/16/2025 খুলনায় পরিবহন ধর্মঘটে কর্মহীন হাজারো শ্রমিক

খুলনায় পরিবহন ধর্মঘটে কর্মহীন হাজারো শ্রমিক

রাজটাইমস ডেস্ক

২২ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৪৯

খুলনায় বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে পরিবহণ ধর্মঘটে কর্মহীন হাজার হাজার শ্রমিক। দিনে আনে দিনে খায় এমন শ্রমিকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। খবর টিবিএসের

আগামীকাল খুলনায় বিএনপির সমাবেশের আগে বিভিন্ন দাবিতে খুলনায় জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণায় একাত্মতা প্রকাশ করেছে খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।

তবে সাধারণ মোটর শ্রমিকরা বলছেন, এই দুইদিন তারা কর্মহীন হয়ে থাকবেন। কারণ, বাস না চললে মালিক তাদের বেতন দেন না।

অন্যদিকে বিএপির নেতারা বলছেন, তাদের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতাদের চাপে গণ পরিবহন বন্ধ করা হয়েছে।

খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, তাদের সংগঠনে পরিবহন সেবার সাথে জড়িত প্রায় সাড়ে ১০ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। বাস বন্ধ থাকায় তারা অলস দিন পার করছেন।

আজ শুক্রবার সকাল ও বিকেলে খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা অধিকাংশই আড্ডা দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আবার একদল শ্রমিক স্ট্যান্ডের মাঠে ক্রিকেট খেলছেন, কেউ কেউ বাসে ঘমুয়ে আছেন। আবার অনেকে বাস পরিষ্কার করছেন।

নয়ন নামের এক বাস চালক বলেন, 'দুই দিন আগে আমাদের জানানো হয়েছে ২১ ও ২২ অক্টোবর বাস চালানো যাবে না। মালিক সমিতি বা ইউনিয়নের নেতাদের কথা বাইরে আমাদের যাওয়ার সুযোগ নেই।'

তিনি বলেন, 'বাসের চাকা ঘুরলে আমাদের বেতন হয়। না ঘুরলে আমরা একটি টাকাও পাই না। মালিকরা যখন খুশি বাস বন্ধ করে দিতে পারেন। তখন বিপদে পড়ি আমরা। কারণ আমরাও এক ধরনের দিন মজুর।'

ইসরাফিল নামের এক বাস কন্ডাক্টর বলেন, 'শ্রমিকরা কখনো চায় না বাস বন্ধ থাকুক। একদিন বাস না চললে আমাদের পরিবার চলে না। আবার দুই একদিনের জন্য আমরা অন্য কোন কাজেও যেতে পারি না। তাই বাস বন্ধ করা হলে আমাদের পেট চলে না। এখন নেতারা বন্ধ করলে আমরা তো আর চালাতে পারি না।'

সৈকত নামের আরেক বাস হেল্পার বলেন, 'আমাদের যদি মাসিক বেতন থাকতো, তাহলে বাস বন্ধ থাকলেও আমাদের কোন সমস্যা হত না। আর মালিকরা যখন ইচ্ছা বাস বন্ধ করতে পারতো না।'

নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন মোটর শ্রমিক বলেন, বাস বন্ধের ঘোষণা আসলে তারা মালিকদের কাছে প্রতিবাদ করেছিলেন।
'তবে মালিকরা চায় সংগঠনের নেতাদের নির্দেশ অমান্য না করতে। তাই আমরা অসহায়,' বলেন তারা।

তারা আরও বলেন, 'আমাদের সংগঠনের অনেক নেতা আছেন, তারা বাস মালিক না। বা পূর্বে বাস মালিক ছিলেন, এখন সংগঠনে থাকলেও বাসের ব্যাবসায় নেই। তারাই মূলত সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। তারা কখনো মোটর শ্রমিকদের কষ্ট বুঝবেন না।'

খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কে র্দীঘদিন ধরে অবৈধ ভাবে নসিমন, করিমন, মহেন্দ্র ও ইজিবাইক চলাচল করছে। ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রশাসন এগুলি বন্ধ না করায় ২১ ও ২২ অক্টোবর খুলনার সকল রূটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, 'এই সিদ্ধান্তটা মালিক সমিতি নিয়েছে। আমরা তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছি।'

খুলনা জেলা বাস-মিনি বাস মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও খুলনা -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান।

তিনি বলেন, 'বাস বন্ধ ঘোষণার সময়ে আমি ঢাকাতে ছিলাম। মালিক সমিতির অন্যান্য সদস্যরা আমার সাথে আলোচনা করেই ঘোষণা দিয়েছেন।'

বাস বন্ধ করতে দলীয় প্রভাব ছিল কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'দেখুন আমরা গত একমাস ধরে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধের জন্য প্রশাসনকে বলে আসছি। গত একমাসে আমরা কয়েকটি মিটিংও করেছি। আর বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে তাতে আমাদের অসুধিধা কোথায়। তারা যদি কোন বিশৃঙ্খলা না করেন, আমরা কেন করতে যাব।'

এদিকে,বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের মিডিয়া উপ-কমিটি আহবায়ক এহতেশামুল হক শাওন বলেন, ২২ অক্টোবর বিএনপির বিভাগীয় গণ সমাবেশ কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতাদের চাপে বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে ট্রেনের টিকিটে।

তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের নেতাদের চাপে খুলনাকে অচল করে দেওয়া হচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য আমাদের সমাবেশে যাতে কম লোক হয়। তবে তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে বা সাঁতার কেটে হলেও সমাবেশে আসবে।'

এ প্রসঙ্গে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা বলেন, 'বাস বা লঞ্চ আমরা চালাই না। শ্রমিকরা তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বন্ধ করেছে। এখানে আমাদের কোন হস্তক্ষেপ নেই।'

নিউজের লিঙ্ক

 

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]