05/10/2025 নানা শর্তে ঝুলছে আইএমএফের ঋণ, উভয় সংকটে বাংলাদেশ
রাজটাইমস ডেস্ক
৬ নভেম্বর ২০২২ ২১:০১
আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএমএফ এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের হিসাবায়ন নিয়ে আপত্তি তুলেছে। পাশাপাশি ঋণ প্রদানে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। খবর বণিক বার্তার।
সংস্থাটির বক্তব্য হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেখানো ৩৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বিনিয়োগকৃত প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে রিজার্ভের হিসাবায়ন করতে হবে। এছাড়া ব্যাংক খাতের সুশাসনের ঘাটতি, খেলাপি ঋণ, ঋণ ও আমানতের সুদহার বেঁধে দেয়াসহ দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনা সম্পর্কেও সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।
এনবিআরকে করহার বাড়ানো এবং কর অব্যাহতির সুবিধা তুলে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে আইএমএফ। এজন্য করজাল বাড়িয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে করদাতাদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে কর আহরণ এবং তামাক খাতে করহার আরো বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া সক্ষমতা তৈরির জন্য এনবিআরকে সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছে আইএমএফ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকির বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে।
ভর্তুকি বন্ধ করে দিলে বিপিডিবির উপায় কী, তাও জানতে চেয়েছেন আইএমএফের প্রতিনিধিরা। বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন খরচ ও বিক্রির মধ্যে ঘাটতি কমাতে মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। এর পরিবর্তে বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি পেমেন্ট) হ্রাসের উপায়, বিপিডিবির আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব ও বিদ্যুতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের কিছু পণ্য আমদানিতে এখনো শুল্কহার বেশি। শুল্ক কাঠামোটিও ‘জটিল’। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের ট্যারিফ লাইনের যৌক্তিকীকরণ এবং কাঠামোর সহজীকরণ করতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে ট্যারিফ হার বেশি, যার গড় ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ডব্লিউটিওর হিসাব অনুযায়ী, তা ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। তা না হলে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর বাংলাদেশের রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বৈঠকে এ বিষয়ে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যও চাওয়া হয়েছে।
নিট পোশাক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, অর্থনীতি কীভাবে পরিচালিত হবে তা নির্ধারণ করবে সরকার। সরকার যেভাবে ভালো মনে করবে সেভাবেই পরিচালিত হবে। আইএমএফ যে শর্তগুলো দিচ্ছে, যেসব খবরদারি করছে, সেগুলো কেন করছে বোধগম্য নয়। সরকার দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে কোন খাতে ভর্তুকি রাখবে আর কোন খাতে রাখবে না, এ বিষয়ে আইএমএফের শর্তারোপ গ্রহণযোগ্য নয়। তবে আইএমএফের ঋণ কাজে লাগানোর সুযোগ ও প্রয়োজন আছে।