11911

03/15/2025 দুদকের শুভেচ্ছা দূতই কেলেঙ্কারিতে জড়িত

দুদকের শুভেচ্ছা দূতই কেলেঙ্কারিতে জড়িত

রাজটাইমস ডেস্ক

৮ নভেম্বর ২০২২ ১৯:১৬

নানা বিতর্কে বাংলাদেশের শীর্ষে ক্রিকেট অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না এই তারকার। আর্থিক কেলেঙ্কারি সহ নানা অভিযোগ এই তারকার বিরুদ্ধে। খবর যুগান্তর

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শুভেচ্ছাদূত তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিংয়ে কাজ করছেন তিনি। কিন্তু শুভেচ্ছাদূত হয়ে একে একে অশুভ কাজ করে যাচ্ছেন। শেয়ার কেলেঙ্কারি, অনুমোদন না নিয়ে স্বর্ণ ব্যবসা এবং বাবার নাম জালিয়াতি করে কোম্পানি গঠনের তথ্য মিলেছে। এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরু।

প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার পোর্টফোলিও ম্যানেজ করছে এ চক্র। বাজারে প্রচলিত আছে-হিরুর ‘জ্বর’ হলে শেয়ারবাজারে ‘সর্দি’ নামে। অন্যদিকে জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে আসা এক বাংলাদেশির সঙ্গে ব্যবসায় জড়িয়েছেন সাকিব। ওই ব্যক্তির নাম জাবেদ আজিজ মতিন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি সংস্থার শুভেচ্ছাদূত থেকে শিগগিরই বাদ পড়তে যাচ্ছেন সাকিব। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

আরও জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে কারসাজির ১৭টি ঘটনায় এ পর্যন্ত ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ২০ কোটি ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি ঘটনাই হিরু সিন্ডিকেটের। তবে সরাসরি জরিমানার তালিকায় হিরুর নাম রয়েছে শুধু আইপিডিসির শেয়ারের কারসাজিতে। অন্যগুলোয় হিরুর পরিবারের সদস্যদের নাম। আবার বিএসইসির হিসাবেই ২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা জরিমানার বিপরীতে গ্রুপগুলো মোট রিয়ালাইজড (শেয়ার বিক্রি হয়েছে) মুনাফা করেছে ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ। এছাড়া আনরিয়ালাইজড (শেয়ার বিক্রি করা হয়নি) মুনাফা ১০৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ তদন্তের দিন পর্যন্ত গ্রুপগুলোর মুনাফা ১৯৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শেয়ারবাজারে কারসাজির কারণে কয়েক বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৭টি ঘটনায় জরিমানা করেছে কমিশন। এছাড়াও ৮১টি ঘটনা প্রক্রিয়াধীন। ওই তালিকায় হিরু চক্রের নাম রয়েছে।

জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম যুগান্তরকে বলেন, বিএসইসি সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে কাজ করে। এর বাইরের বিষয়গুলো আমাদের আওতায় নয়। আর দেশের বাইরে কেউ অপরাধ করলে সেটিও আমাদের বাইরে। এক্ষেত্রে জাবেদ আজিজ মতিনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) একটি প্রতিবেদন আছে। আর তারা এ ব্যাপারে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনের (আইওএসসিও) মাধ্যমে কেউ আবেদন করলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ভবিষ্যতেও কারও বিরুদ্ধে কারসাজির তথ্যপ্রমাণ পেলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্প্রতি যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো, সাকিব আল হাসানের শেয়ার কেলেঙ্কারি। এক্ষেত্রে এ পর্যন্ত ৬টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে সাকিব আল হাসানের সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এগুলো হলো-এশিয়া ইস্যুরেন্স, ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন শুজ, বিডিকম, আইপিডিসি এবং এনআরবিসি ব্যাংক। এসব বিষয় নিয়ে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক যুগান্তরে। এরপরই গ্রুপটির কারসাজির বিষয়টি সামনে চলে আসে।

পরবর্তীকালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিএসইসিতে একাধিক তদন্ত প্রতিবেদন পাঠায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এসব কারসাজির ঘটনায় উচ্চ লেনদেনে আবুল খায়ের হিরুর সঙ্গে আরও কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, বোন কনিকা আফরোজ, তার সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান ক্যান্ডেলস্টোন ইনভেস্টমেন্টস পার্টনার্স, ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেড, দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভ, এনআরবিসি ব্যাংক, ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিল। এ দুই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া আছে-জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড, একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান চৌধুরী ফজলে ইমাম ও ফরচুন শুজ। আর বিনিয়োগকারী হিসাবে যাদের নাম আছে, তারা হলেন-সায়েদুর রহমান, আবু নাসের দুলাল, খোরশেদ আলম ও সানোয়ার খান। কারসাজিতে এদের সবার একাধিক বিও হিসাব ব্যবহার করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, আবুল খায়ের হিরুর নিজ নামে ৪টি এবং অন্যান্য নামে ৩০টির বেশি অ্যাকাউন্ট খুলে অস্বাভাবিক শেয়ার লেনদেন করেছেন। নিজ নামে ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজে বিও অ্যাকাউন্ট নম্বর ১২০৫৫৯০০৭১০৯১১১৬, অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে ১৬০৫১১০০৭১০৯১১১৬, প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজে ১২০৪৫৯০০৬৭৭১২৭৮১, ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেড (চেয়ারম্যান আবুল খায়ের) এবং এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টে তার নিজ নামে ১৬০৪৫৩০০৬৫৭৫৭৮১১ নম্বর অ্যাকাউন্টে শেয়ার লেনদেন করেন। ৫টি কোম্পানি ফরচুন শুজ, ওয়ান ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স এবং আইপিডিসির শেয়ার কারসাজিতে হিরুকে সরাসরি অপরাধে অভিযুক্ত করা হলেও জরিমানার ক্ষেত্রে তার নাম নেই।

জানতে চাইলে আবুল খায়ের হিরু যুগান্তরকে বলেন, আমরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেছি। সেখানে কিছু ভুলত্রুটি হয়েছে। এই ভুল ইচ্ছাকৃত নয়। তবে সবকিছুই বাজারের স্বার্থে আমি করেছি। তিনি বলেন, আমি এটা স্পষ্ট করে বলতে পারি-বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য কিছুই করিনি। এরপরও আমাদের পরিবারকে জরিমানা করেছে কমিশন। ইতোমধ্যে ৪ কোটি টাকার মতো পরিশোধ হয়েছে। বাকিটা পর্যালোচনার জন্য আবেদন করেছি। আশা করি, কমিশন বিবেচনা করবে। আর বিবেচনা না করলে বাধ্য হয়েই আমাকে আদালতে যেতে হবে।

অন্যদিকে ৬টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততা মিলেছে। এর মধ্যে রয়েছে এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন শুজ, বিডিকম, আইপিডিসি এবং এনআরবিসি ব্যাংক। সাকিব আল হাসান নিজ নামে ৪টি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে অস্বাভাবিকভাবে শেয়ার লেনদেন করেছেন। এর মধ্যে ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টে ১৬০৫৫৪০০৭৪১৪০৭১৯ বিও অ্যাকাউন্ট, ইবিএল সিকিউরিটিজে ১২০১৯৫০০৬৪৯৭৬২৩৭, এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টে ১৬০৪৫৩০০৬৯৫৮৫৫৭৪, আইআইডিএফসিতে ক্লায়েন্ট কোড ০৮০৪৯ এবং মোনার্ক হোল্ডিং লিমিটেডের অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে ১৬০৫১১০০৭১২১২০১০ বিও অ্যাকাউন্টে শেয়ার লেনদেন করেছেন। তবে কারসাজি গ্রুপে তার নাম থাকলেও সরাসরি তাকে কোনো ধরনের শাস্তি দেয়নি কমিশন। তবে সাকিব দীর্ঘদিন থেকে দেশের বাইরে থাকায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু যুগান্তরের প্রতিবেদনের বিষয়টি খুদে বার্তার মাধ্যমে তাকে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, সাকিবকে শুভেচ্ছাদূত হিসাবে রাখা হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

এছাড়া এই গ্রুপের লেনদেনের ক্ষেত্রে যে অ্যাকাউন্ট ব্যবহার হয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলের (এসবিএল) ক্যাপিটালে অ্যাকাউন্ট নম্বর ১৬০৪৫৩০০৭৩৫৮৩২২৭, ইবিএল সিকিউরিটিজে ১২০১৯৫০০৭৩৫৮৩২২৭, শাহজালাল ব্যাংক সিকিউরিটিজ তার নিজস্ব ব্রোকারেজ হাউজে ১২০৪০৯০০০৫৬৮৫৬০৭, উভয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনূসের ইবিএল সিকিউরিটিজে বিও অ্যাকাউন্ট নম্বর ১২০১৯৫০০০০০৮৩৮০৫, এনআরবিসি ব্যাংক নিজস্ব হাউজে ১২০৫৯৫০০৫২১২৩২০৯, ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল নিজ প্রতিষ্ঠান এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজে ১৬০৫১১০০৬৪৮১৫০৮৮ নম্বর অ্যাকাউন্ট এবং অগ্রণী ইক্যুইটিতে পারভেজ তমালের ১৬০৫১১০০৬৪৮১৫০৮৮ নম্বর অ্যাকাউন্ট, মো. সায়েদুর রহমানের ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজে অ্যাকাউন্ট নম্বর ১২০৪২২০০০০১০১৫৩৯, জেনেক্স ইনফোসিসের সাউথ ইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসে বিও অ্যাকাউন্ট ১৬০৫৫৯০০৭৩৪৪৭২২২ এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান চৌধুরী ফজলে ইমামের ১২০৫৫৯৪৩৬০২০৯৪ নম্বর অ্যাকাউন্টে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য মিলেছে।

এদিকে বেসরকারি পিপলস ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছেন সাকিব। ইতোমধ্যে ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ব্যাংকটিতে ২টি পরিচালক পদ নিয়েছেন। একটিতে তিনি নিজে, অপরটিতে তার মা শিরিন আক্তারের নাম রয়েছে। ব্যবসায়ী হিসাবে সাকিব আল হাসানের হাতেখড়ি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে। এরপর দ্রুত নিজের ব্যবসার বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন। স্বর্ণ আমদানি ও বিপণন, প্রসাধনী, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল, কাঁকড়া ও কুঁচিয়ার খামারসহ বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে তার। এছাড়া দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছেন তিনি। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল রাজধানীর বনানীতে সাকিবের দুই প্রতিষ্ঠান রিলায়েবল কমোডিটি এক্সচেঞ্জ এবং বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্বর্ণ ব্যবসার শোরুম চালু করে। কিউরিয়াস লাইফ স্টাইলের সঙ্গে যৌথভাবে স্বর্ণ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। নিয়ম অনুসারে কোনো প্রতিষ্ঠানের কমোডিটি পণ্যসংক্রান্ত ব্যবসা করতে হলে বিএসইসির অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু সাকিবের প্রতিষ্ঠান এ অনুমতি নেয়নি। এরপর তাদের ব্যাখ্যা তলব করে বিএসইসি। কারসাজিতে যে ২০ জনকে ২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, তারা রিয়ালাইজড এবং আনরিয়ালাইজ মিলিয়ে ১৯৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের কারসাজির ঘটনায় আবদুল কাইয়ূম ও তার সহযোগীকে ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা রিয়ালাইজড মুনাফার বিপরীতে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ফরচুন শুজের কারসাজির ঘটনায় হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবর ও তাদের সহযোগীকে ৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা মুনাফার বিপরীতে ১ কোটি ৫০ লাখ, বিডিকম অনলাইনের কারসাজির ঘটনায় হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও তাদের সহযোগীদের ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার বিপরীতে ৫৫ লাখ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের কারসাজিতে হিরুর আরেক প্রতিষ্ঠান দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভকে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা মুনাফার বিপরীতে ৭২ লাখ, এনআরবিসি ব্যাংকের কারসাজিতে হিরুর বোন কনিকা আফরোজকে ১৫ কোটি ২২ লাখ টাকার বিপরীতে ৩ কোটি ৭৫ লাখ, ওয়ান ব্যাংকের কারসাজিতে হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরকে ১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বিপরীতে ৩ কোটি, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের কারসাজিতে হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিপরীতে ৪২ লাখ, ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের কারসাজিতেও কাজী সাদিয়া হাসানকে ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বিপরীতে ৯৫ লাখ এবং আইপিডিসির শেয়ার কারসাজিতে আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীদের ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা রিয়ালাইজড মুনাফার বিপরীতে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে ঘটনাগুলোয় এই চক্রের আনরিয়ালাইজড মুনাফা রয়েছে ৯২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

এছাড়াও ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা মুনাফার বিপরীতে আরেক চক্র এজি মাহমুদকে ৩ কোটি, মো. সাইফুল্লাহ মিজান ৮৩ লাখ এবং এসএম মোতাহারুল জান্নানকে ১৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই কোম্পানির শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা মুনাফার বিপরীতে মোহাম্মদ জাহেদুল আবেদীনকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন। আবার প্রতাভী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা মুনাফার বিপরীতে মো. জসিম উদ্দিনকে ৫০ লাখ, ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা মুনাফার বিপরীতে মো. সাইফুল্লাহ মিজানকে ১৫ লাখ ও এজি মাহমুদকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা মুনাফার বিপরীতে মো. জসিম উদ্দিনকে ১ কোটি এবং জাহিন স্পিনিংয়ের কারসাজির ঘটনায় ১ কোটি ১ লাখ টাকা মুনাফার বিপরীতে মো. সাইফুল্লাহ মিজানকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আবার এ ঘটনায় গ্রুপগুলোর আনরিয়ালাইজড মুনাফা ছিল ১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে সরকারি কোম্পানি শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে নেসার উদ্দিন ও শারমিন আক্তার লাভলী জড়িত। তারা তদন্তের দিন শেয়ার বিক্রি করেননি। তবে আনরিয়ালাইজড মুনাফা ছিল ৩৮ লাখ টাকা। এ ঘটনায় মো. নেসার উদ্দিনকে ৫ লাখ এবং শারমিন আক্তার লাভলীকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

শেয়ারবাজারে নতুন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান সাকিব আল হাসান। প্রতিষ্ঠানের ৩৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। বাকি সমপরিমাণ শেয়ারের মালিক যুক্তরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে আসা জাভেদ আজিজ মতিন এবং আবুল খায়ের হিরু। হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ডিএসইর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর ৫৯ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে এবং চলতি বছরের ৭ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে ব্যাপক কারসাজি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা তুলে নিয়েছিলেন হিরু ও তার স্বজন-সহযোগীরা। গত বছরের নভেম্বরে মাত্র ১৫ দিনের কারসাজিতে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেনে ১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা মুনাফা তুলে নেন। নিজেদের মধ্যে শেয়ার কেনাবেচা করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে এই মুনাফা তুলে নেন তারা। আর কারসাজির জন্য হিরু তার নিজের, বাবার, স্ত্রীর ও বোনের এবং সহযোগী মিলে ১৪টি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দামে বড় ধরনের উত্থানের সময় ব্যাংকটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কেনাবেচার সঙ্গে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিল।

ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ২০ টাকা ১০ পয়সা হয়েছে, শতাংশের হিসাবে বেড়েছে ৫৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত বছরের ১৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির শীর্ষে ছিলেন কাজী সাদিয়া হাসান। তিনি ৩ কোটি ৯৮ লাখ ২৯ হাজার ৯৩৬টি শেয়ার কিনেছেন এবং তদন্তের সময় ব্যাংকটির ২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৬ হাজার ১১০টি শেয়ার বিক্রি করেছেন, যা এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকটির মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত বছরের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বরের ওই ১৫ দিনে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম সাড়ে ৭ টাকা বা ৬০ শতাংশ বেড়ে যায়। তাতে হিরু চক্রের ১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা মুনাফা হয়। এছাড়া চলতি বছরের ৭ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত সময়ে বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম ২৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩৪ টাকা ৩০ পয়সা হয়েছে। শতাংশের হিসাবে ৪৫ শতাংশ বেড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার দর। বিডিকম অনলাইনের পাঁচজন শীর্ষ ক্রেতা ছিলেন এই চক্রের।

এদিকে সাকিবের কোম্পানি মোনার্ক হোল্ডিংসের আরেক অংশীদার জাভেদ আজিজ মতিন জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। এসব জালিয়াতির তথ্য যুগান্তরের হাতে এসেছে। বর্তমানে তাকে খুঁজছে দেশটির ব্যাংক। মোনার্কের ১ লাখ ৬৫ হাজার শেয়ারের মালিক তিনি। সমপরিমাণ শেয়ার রয়েছে সাকিব আল হাসান এবং আবুল খায়ের হিরুর। যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একটি নথি থেকে জানা যায়, কমিশন বাদী হয়ে জাভেদ এ মতিন এবং উইলশায়ার ইক্যুইটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। নথিতে বলা হয়েছে, মামলাটি ভেলটেক্স করপোরেশনের শেয়ার কেলেঙ্কারিসংক্রান্ত। অভিযুক্ত কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জাভেদ এ মতিন। বলা হয়, ভেলটেক্স যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও বাংলাদেশে ব্যবসা করবে। জাভেদ মতিন ভেলটেক্সের ৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন শেয়ার অবৈধভাবে মাজহারুল হক নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে উইলশায়ারের নামে হস্তান্তর করেন। মোট মূল্য ৬৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৬৫ কোটি টাকার বেশি। কোনো ধরনের সিকিউরিটি লাইসেন্স ছাড়াই কাগজপত্রও জাল করে তিনি এ কাজ করেছেন। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও শেয়ারহোল্ডারদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন মতিন। তিনি যন্ত্রাংশ কেনা ও বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের জন্যও টাকা নিয়েছিলেন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে; কিন্তু ভেলটেক্স কখনোই কোনো কারখানা বাংলাদেশে স্থাপন করেনি। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশি নম্বরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

যুগান্তরের প্রতিবেদনটি পড়তে চাইলে ক্লিক করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]