12028

04/28/2024 যেসব কারণে কমছে ডলার আয়

যেসব কারণে কমছে ডলার আয়

রাজটাইমস ডেস্ক

১৩ নভেম্বর ২০২২ ২০:১৩

দেশের ডলার আয়ের প্রধান উৎস পোশাক শিল্প। এই শিল্পের রপ্তানি ক্রমশ কমে আসছে। আমদানিকারক দেশগুলোরও ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। অন্যদিকে জ্বালানি সংকটে ব্যাহত হচ্ছে এই শিল্পের উৎপাদন। খবর যুগান্তরের।

এসবের পাশাপাশি, শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে বেশি টাকায় ডলার কিনতে হচ্ছে। কিন্তু রপ্তানি আয় (ডলার) নগদায়নের ক্ষেত্রে মিলছে কম টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমদানি বিল পরিশোধসংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন। সম্প্রতি এটা জারি করা হয়।

উল্লিখিত কারণগুলো রপ্তানি আয়ের প্রধান খাতে বড় ধরনের সংকট তৈরি করছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমএই এবং বিকেএমইএ। বিদ্যমান সংকট মোকাবিলায় দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাবসহ অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্রমতে, সংকট কাটিয়ে উঠার প্রস্তাবে বলা হয়েছে ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণের এখতিয়ার শুধুই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। অন্য কোনো সংগঠনের নয়। ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে বৈষম্যের কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে পোশাক শিল্পকে। সেখানে রপ্তানি আয় (মার্কিন ডলার) নগদায়নের ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য রেমিট্যান্স নগদায়নের মূল্যের সমান করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এছাড়া রপ্তানিতে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করার বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

জানতে চাইলে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে বলেন, ১০৫ থেকে ১০৭ টাকায় প্রতি ডলার কিনে এখন পোশাক শিল্পের জন্য কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে হচ্ছে। আবার রপ্তানি আয় ভাঙানোর ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৯৯ টাকা।

আবার রেমিট্যান্স ভাঙানোর ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের মূল্য পাওয়া যাচ্ছে ১০৭ টাকা। সঙ্গে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা মিলে ডলারের মূল্য দাঁড়ায় ১১০ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) কাছে। তারা ডলারের মূল্য নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে একটি লুটপাটের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো তাই করছে। এখন রপ্তানি খাতে ডলারের মূল্য পুনর্নিধারণ করতে হবে।

একটি শীর্ষ রপ্তানিকারক যুগান্তরকে বলেন, ডলার সংকটের কারণে ইতালি থেকে একজন বায়ার তাদের অর্ডারের পণ্য নিতে দেরি হবে এমন বার্তা দিয়েছেন। তার কারখানায় প্রায় সাড়ে ৮ লাখ ডলারের পোশাক পড়ে আছে রপ্তানির অপেক্ষায়।

এ উদ্যোক্তার মতে, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নির্দেশনা জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে নির্ধারিত সময়ে আমদানি বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা বাণিজ্যের অনুমোদিত ডিলার (এডি) লাইসেন্স বাতিল করবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এরপর অনেক ব্যাংক ভয়ে এলসি খুলছে না। তিনি (ওই রপ্তানিকারক) বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন এই মুহূর্তে এমন নির্দেশনা দেওয়া সঠিক হয়নি।

এদিকে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক থেকে ডলার আয় কমে যাওয়ার তথ্য উঠে আসছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রতিবেদনে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবরে পোশাক খাতে প্রায় ১২৬ কোটি মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। এদিকে বিজিএমইএ’র আগাম পূর্বাভাসে বলা হয়েছে-রপ্তানির গতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে, আগামী মাসগুলোতে এ ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত থাকবে।

সূত্রমতে, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে তৈরি পোশাক শিল্পের সার্বিক সংকট তুলে ধরে সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান। সেখানে তিনি বলেছেন, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মূল্যস্ফীতির চরম আকার ধারণ করেছে। যার প্রভাবে শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে। এছাড়া জ্বালানি সংকটের কারণে ব্যয় বৃদ্ধিসহ উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিদেশি ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ কমিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া ইতঃপূর্বের দেওয়া রপ্তানি আদেশ ধীরগতিতে শিপমেন্ট করতে বলা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বাতিল করছে রপ্তানির আদেশও।

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, এর বিরূপ প্রভাব কিছু সংখ্যক রপ্তানিমুখী শিল্প তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ করতে পারছে না। এতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। বর্তমান এই সংকটকালীন দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আর্থিক সহায়তা প্রদান একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে চলতি বাজেটে উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। সেটি পুনরায় কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। এ প্রস্তাব আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর করার কথা বলা হয়।

এদিকে ডলার বিনিময় হার জটিলতা তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে চিঠি দিয়েছে বিকেমএই। সেখানে বলা হয়, আমদানির দেনা পরিশোধের জন্য ১০৮.৫০ টাকা ডলারের মূল্য নির্ধারণ করা হলেও ব্যাক টু ব্যাক এলসি বা অন্য যে কোনো আমদানির দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ১০৫ থেকে ১০৬ টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হয়।

অন্যদিকে রপ্তানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে ৯৯ টাকা দেওয়া হচ্ছে। ডলার বিনিময় হারে এ নীতির কারণে বিশাল অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পোশাক রপ্তানিকারকরা। এক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় ইডিএফ’র মাধ্যমে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দেনা পরিশোধ সমন্বয় করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

যুগান্তরের প্রতিবেদনটির লিঙ্ক

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]