12074

04/29/2024 ২য় দফায় আবারও খরচ বাড়ছে কর্ণফুলী টানেলের

২য় দফায় আবারও খরচ বাড়ছে কর্ণফুলী টানেলের

রাজটাইমস ডেস্ক

১৫ নভেম্বর ২০২২ ২০:১৩

২য় দফায় বাড়তে যাচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ। ডলার সংকটের প্রভাবে বাড়তে যাচ্ছে প্রকল্প ব্যয়। ৭ বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৭ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৭৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। খবর যুগান্তরের।

ডলারের দাম বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার পরিবর্তনে নানা খাতে বেড়েছে খরচ। এতে বাড়ছে প্রকল্প মেয়াদও। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ফলে এটি চালু হবে আগামী বছরের (২০২৩) ডিসেম্বরে। আর মূল অনুমোদিত ব্যয়ের তুলনায় দুদফায় অতিরিক্ত ব্যয় বাড়ছে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এজন্য ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। আগামী বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) এ প্রস্তাবটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশীদ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ডলারের দাম বেড়েছে সেজন্য মোট প্রকল্প ব্যয়ের ওপর এটার প্রভাব আছে। এছাড়া এই ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও যৌক্তিক কারণ আছে।

সূত্র জানায়, টানেল নির্মাণের মূল প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি এবং চীনের ঋণ থেকে ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি ৪৪ লাখ ব্যয়ের কথা ছিল। সেই সঙ্গে ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুনে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পরবর্তীকালে এটির প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এতেও শেষ হয়নি কাজ।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, চীন সরকারের সঙ্গে জিটুজি চুক্তি হয় তখন ডলারের রেট ধরা হয়েছিল ৮০ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ডলারের দাম বাড়িয়ে ধরা হয় ৮৩ টাকা ৭৮ পয়সা করে। কিন্তু এখন প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধনীতে ডলারের দাম আরও বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৯৫ টাকা করে। ফলে ঋণ প্রদানকারী সংস্থা চীনা এক্সিম ব্যাংক দেওয়া অর্থের ডলারের সঙ্গে মূল্য অবমূল্যায়ন ঘটেছে। এজন্য চুক্তি নবায়ন করতে হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিভিন্ন কাজে ভেরিয়েশনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কিছু অংশে কাজের পরিমাণ ও ব্যয় কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে মেয়াদ এক বছর বাড়ানোও দরকার। এজন্য সেতু বিভাগ ১৬৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার ৫৪৩ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রাক্কলন করে দ্বিতীয় সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে নতুন করে ব্যয় বাড়ছে ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। পাশাপাশি বাস্তবায়নকাল এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনে একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় পিইসি সভার বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-প্রকল্পটি প্রায় ৪ বছর ধরে চলছে। প্রথম সংশোধিত অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী এটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে সমাপ্তের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু এখনো ভৌত অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করা সম্ভব হবে কিনা। এ বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসা করা হবে। এছাড়া টানেল এপ্রোচ অঙ্গে প্রায় ৭২ কোটি ২৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা বেশি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হবে। সংশোধনী প্রস্তাবে দুটি পুলিশ স্টেশন (আনোয়ারা প্রান্তে ৪ তলা, পতেঙ্গা প্রান্তে ২ তলাবিশিষ্ট বিল্ডিং) এবং দুটি ফায়ার স্টেশন (উভয় প্রান্তে ২ তলা বিল্ডিং) বাবদ ৩০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ব্যয় প্রস্তাবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের রেইট শিডিউল অনুসরণ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়টিও জানতে চাওয়া হবে। পাশাপাশি টোল প্লাজা অঙ্গে ২৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) দেখা যায় এ খাতে এখন পর্র্যন্ত কোনো অর্থই ব্যয় হয়নি। ফলে এই ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। প্রকল্প ঋণ খাতে ৪১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি নিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিনিধির কাছে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হবে পিইসি সভায়।

শেষ পর্যায়ে এসে প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে সেতু বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের কার্যক্রমের পরিধি পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া সার্ভিস এরিয়ার তৈজসপত্র, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং গৃহসজ্জা সামগ্রী ক্রয়, নতুন অঙ্গ সংযোজন এবং বিনিময় হার কম বা বৃদ্ধি পাওয়া। আরও আছে ভ্যাট ও আইটি খাতে ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা কারণ।

প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম শহর কর্ণফুলী নদী দিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত। মূল শহর ও বন্দর এলাকা কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত। অন্যদিকে ভারী শিল্প এলাকা পূর্বপাশে অবস্থিত। বর্তমানে সচল দুটি সেতুর মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান যান চলাচল সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর তলায় পলি জমার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পলি জমার সমস্যা সমাধানের জন্য কর্ণফুলী নদীতে নতুন সেতু নির্মাণের পরিবর্তে নদীর নিচ দিয়ে টানেল নির্মাণের প্রয়োজন। চলমান এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এটি জি টু জি ভিত্তিতে নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে ২০১৪ সালের জুনে চীন সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং এক্সিম ব্যাংক অব চায়নার সঙ্গে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৭০৫ দশমিক ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তি হয়। প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলমান আছে এবং এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। এ টানেলটি এশিয়ান হাইওয়ের মধ্যে অবস্থিত এবং এটি চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

যুগান্তরের প্রতিবেদনটির লিঙ্ক

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]