12240

03/29/2024 হজ্বের এক-পঞ্চমাংশ টাকা যায় ভ্যাট ও চার্জের পেছনে

হজ্বের এক-পঞ্চমাংশ টাকা যায় ভ্যাট ও চার্জের পেছনে

রাজটাইমস ডেস্ক

২৪ নভেম্বর ২০২২ ২১:০৯

প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে লক্ষাধিক ব্যক্তি সৌদি আরবে হজ্ব পালন করতে যান। পবিত্র ধর্মকার্য পালনে তাদের খরচের পাশাপাশি গুনতে হয় মোটা অঙ্কের ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জ। দুই দেশের ভ্যাট গুনতে হয় মোট ১ লাখ ৮ হাজার টাকা। খবর যুগান্তরের।

একজন হজযাত্রীর মোট ব্যয়ের ২১ শতাংশই চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জের পেছনে। টাকার অঙ্কে এটি ১ লাখ ৮ হাজার টাকা।

এর মধ্যে দেশে ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জে গুনতে হয় প্রায় ৫৭ হাজার টাকা। আর ৫১ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয় সৌদিতে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে একজন ব্যক্তির হজের প্যাকেজ ৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

তবে ভ্যাট ও চার্জের অংশ বাদ দেওয়া গেলে প্যাকেজের আকার নেমে আসবে ৪ লাখ ১৯ হাজার টাকায়। এতে অধিকসংখ্যক ব্যক্তি হজ করতে আগ্রহী হবেন।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম যুগান্তরকে বলেন, সৌদি আরব যে ভ্যাট আরোপ করেছে সেটি দেশটির সারকারি সিদ্ধান্ত। ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে বাংলাদেশ সৌদি সরকারের কাছে আবেদন করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা কতটুকু উদার হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর ব্যাপারে আমরা দীর্ঘদিন দাবি করে আসছি। এক্ষেত্রে তেমন সাড়া মেলেনি।

হাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ওমরা গমনে ট্রানজিট বিমান ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ফ্লাইটে ৮০-৮৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। যদিও ডলারের কারণে দাম কমে-বাড়ে। কিন্তু গত হজের সময় প্রত্যেক হজযাত্রীর কাছ থেকে বিমান ভাড়া ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করে হজযাত্রীদের জন্য সব বিমান সংস্থা উন্মুক্ত করে দিতে পারে। এতে যাত্রী বহনে প্রতিযোগিতা চলে আসবে। বহনকারী সংস্থা বেশি হলে ভাড়া এমনিতেই কমে আসবে।

ইসলামি ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধনের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজারের কোঠায় পৌঁছেছে। যেটি প্রতিবছর হজে যাওয়ার ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ। আবেদনের সংখ্যা এত বেশি বাড়ছে যে, এখন কেউ হজে যেতে চাইলে দুই থেকে তিন বছর আগে প্রাক-নিবন্ধন করতে হয়।

জানা যায়, নিজ দেশ ও সৌদি আরবে বড় অঙ্কের ভ্যাট পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন হাজিরা। সৌদি সরকারকে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচের সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। হজ মৌসুমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গমনেচ্ছু প্রত্যেক যাত্রীর হজ প্যাকেজ-১ এর সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৩ লাখ ৪২ হাজার ১১৮ টাকা পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে সৌদি সরকারকে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচে ভ্যাট পরিশোধ করতে হয় ৫১ হাজার ৩১৭ টাকা। এছাড়া গত মৌসুমে বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর মধ্যে নিট বিমান ভাড়া ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। ভাড়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে ভ্যাট ও অন্যান্য ফি দিতে হয় প্রায় ৭ হাজার ৩৪৫ টাকা। যেমন-এজেন্ট কমিশন ২ হাজার ১২৮ টাকা, এম্বারকেশন ফি ৫০০ টাকা। এম্বারকেশন ফির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ৩৩১ টাকা, আফগারি শুল্ক ২ হাজার টাকা, বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি ৮৫১ টাকা, যাত্রী সুরক্ষা ফি ৮৫১ টাকা, হজ টার্মিনাল সার্ভিস চার্জ ৬৮৪ টাকা দিতে হয়। এছাড়া সৌদি আরবে বিমানবন্দর বিল্ডিং চার্জ ৩ হাজার ৯৬০ টাকা ও সুরক্ষা চার্জ ৩৮৪ টাকা দিতে হয়। সবমিলে ৪ হাজার ৩৪৪ টাকা ফি যোগ হয়েছে। হজে যেতে প্রতি হজযাত্রীকে প্রায় ১২ হাজার টাকা ভ্যাট ও অন্যান্য ফি দিতে হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক হজযাত্রীর আইডি কার্ড ও লাগেজ ট্যাগ বাবদ ১০০০ টাকা ও কল্যাণ তহবিল ২০০ টাকা, প্রশিক্ষণ ফি ৩০০, খাওয়া খরচ ৩২ হাজার টাকা, হজ গাইড বাবদ ১১ হাজার ৭২২ টাকা দিতে হয়েছে। এই হিসাবে প্রত্যেক হাজিকে হজে যেতে নিট বিমান ভাড়া ছাড়া ভ্যাটসহ অন্যান্য খরচ বাবদ বাংলাদেশে পরিশোধ করতে হয়েছে ৫৭ হাজার টাকা।

দুই দেশে মোট ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৩১৭ টাকা। এমনিতে হজের ব্যয় অনেক বেড়েছে তার সঙ্গে বড় অঙ্কের ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জ টাকা বহন করা অধিকাংশ হাজির কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অথচ সরকার চাইলে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করে এই খরচ মওকুফ অথবা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। এদিকে গত মৌসুমে সরকারি খরচে ২৫৪ জন ফ্রি হজে গেছেন। এই খরচ হজ প্যাকেজ থেকে সমন্বয় করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে হজের খরচ ছিল সর্বনিম্ন ১ লাখ ৯৬ হাজার। ২০১৫ সালে হজের তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ২০১৭ সালে আরও বেড়ে ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকায় হয়। ২০১৯ সালে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ২০২০ সালে হয় ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা। আর গত হজ মৌসুমে খরচ লেগেছে গড়ে ৫ লাখ টাকার বেশি। এর বাইরেও হজযাত্রীদের নানা খরচ আছে। গত হজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজে-১ সর্বোচ্চ ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা লেগেছে। প্যাকেজের বাইরে ব্যক্তিগত ভোগবিলাস করতে হলে আরও বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়।

আবাসনসহ অন্যান্য খরচ সৌদি মুদ্রা রিয়ালে দিতে হয়। সৌদি রিয়ালের দাম বাড়লে এ খাতে খরচও বেড়ে যায়। গত মে মাসে হজের প্যাকেজ চলার সময় প্রতি রিয়ালের দাম ছিল ২৪ টাকা ৩০ পয়সা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকায়। ফলে রিয়ালের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আগামী হজে মৌসুমে খরচ আরও বাড়বে।

সূত্র জানায়, সরকারি ‘এ’ প্যাকেজে গত বছরে তুলনায় চলতি বছর হজে বাড়ি ভাড়া ৫০ হাজারের বেশি টাকা বেড়েছে। উন্নত বাস সার্ভিস তিনগুণ বেড়েছে। জেদ্দা বিমানবন্দরে আপ্যায়ন খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। হাজিদের বাড়ি ভাড়া ছাড়া অন্যান্য ফি এক বছরের ব্যবধানে অনেক বেড়েছে। জানা যায়, বাংলাদেশে সরকারিভাবে হজ করতে পারে শুধু ৪ শতাংশ হাজি। বাকি ৯৬ শতাংশ বেসরকারিভাবে হজ পালন করেন। দেশে মোট অনুমোদিত হজ এজেন্সি ১ হাজার ১৭০টি। প্রতিবছর ১ লাখ ৩৫ হাজার জন হজে যান। গতবার মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত আকারে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ পালন করেন।

যুগান্তরের প্রতিবেদনটির লিঙ্ক

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]