12381

05/03/2024 রাশিয়ার মূল্যছাড়ের তেল আমদানি বাতিল করল বিপিসি

রাশিয়ার মূল্যছাড়ের তেল আমদানি বাতিল করল বিপিসি

রাজটাইমস ডেস্ক

৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:৫৫

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ কমানোর উদ্যোগ হিসেবের রাশিয়ার বিশাল মূল্যছাড়ের জ্বালানি তেল কেনার উদ্যোগ থেকে সরে গেছে ঢাকা। একই সাথে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিবিসি) মস্কোর তেল সরবরাহের প্রস্তাব আপাতত বাতিল করেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, প্রযুক্তিগত, আর্থিক ও কূটনৈতিক কারণে প্রস্তাবটি বিবেচনা করা যায়নি।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, ভারত ও চীনের মতো রাশিয়ার তেল আমদানি করতে পারলে বাংলাদেশ সরকারও জ্বালানি আমদানির খরচ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ উভয়ই কমাতে পারত। তবে বিপিসি এখন রাশিয়ার প্রস্তাবগুলো বাদ দিয়েই আগামী ক্যালেন্ডার বছরের জন্য তাদের জ্বালানি আমদানির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে।

টাইমস অভ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন অনুসারে, ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশাল মূল্যছাড়ে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি করে ভারত প্রায় ৪৩৩.৬৭ মিলিয়ন সাশ্রয় করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিপিসির পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড প্ল্যানিং) খালিদ আহমেদ বলেন, 'আমরাও রাশিয়ার তেল আমদানি করতে আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু রাশিয়ার তেলে সালফারের পরিমাণ বেশি থাকায় এবং মূল্য পরিশোধের পদ্ধতি নিয়ে জটিলতার কারণে প্রস্তাবটি বাতিল করতে হয়েছে।'

রাশিয়ার ওপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আরোপের পরপরই রাশিয়ার তেলের দাম পড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে ভারত ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কম দামে রাশিয়ার তেল কিনছে।

গত মার্চে রাশিয়া প্রথম বাংলাদেশকে অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করার প্রস্তাব দেয়; এর দুই মাস পর পরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব দেয়।

এরপর গত ২৪ আগস্ট মস্কোভিত্তিক রুশ রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানি জারুবেঝনেফ্ট অপরিশোধিত তেলের একটি নমুনা বাংলাদেশে পাঠায়, ওই তেল বাংলাদেশের পরিশোধনাগারে পরিশোধন করা সম্ভব কি না পরীক্ষা করে দেখতে। উল্লেখ্য, জারুবেঝনেফ্‌ট মূলত রাশিয়ার ভূখণ্ডের বাইরে তেল ও গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং পরিচালনা করে থাকে।

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে বিস্তারিত ল্যাব পরীক্ষার পর বিপিসি দেখতে পায় যে রাশিয়ার তেলে সালফারের পরিমাণ প্রতি মিলিয়নে ৫,০০০ পার্টসের (পিপিএম) বেশি, যা পরিশোধন প্রক্রিয়ার পরেও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মানদণ্ড পূরণ করতে পারবে না।

বর্তমানে বাংলাদেশ বিএসটিআই কর্তৃক নির্ধারিত ৩৫০ পিপিএম বেঞ্চমার্কের বিপরীতে ৫০ পিপিএম মিশ্র পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে থাকে।

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, 'যানবাহনে যদি এই জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, তাহলে কালো ধোঁয়ায় শহর অন্ধকার হয়ে যাবে। তাই আমরা আপাতত [রাশিয়ার তেল আমদানির] পরিকল্পনা বাতিল করেছি।'

জারুবেঝনেফ্ট ছাড়াও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি প্রতিষ্ঠান পিজেএসসি রোসনেফ্ট অয়েল কোম্পানিসহ মস্কোতে সদর দপ্তর আছে এমন আরও কয়েকটি রুশ কোম্পানি বাংলাদেশে পরিশোধিত রুশ তেল সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিল।

মূল্য পরিশোধজনিত জটিলতা ও কূটনৈতিক কারণ

রাশিয়ার তেল সরবরাহের প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৬ আগস্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রাশিয়ার তেল আমদানির জন্য বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে মুদ্রা বিনিময়ের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বলেন।

তবে পর্যালোচনা কমিটি দেখতে পায়, প্রস্তাব অনুযায়ী রাশিয়ার তেল আমদানি করতে যে পরিমাণ রুশ রুবল লাগবে, তা জোগাড় করা বাংলাদেশের পক্ষে কঠিন হবে। কারণ দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ খুব বেশি নয়।

এরপর মূল্য পরিশোধের জন্য বিকল্প মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারের নাম প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি করলে তা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর কীরকম প্রভাব ফেলবে, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত ছিল না।

এ কারণে সরকার অবশেষে ওই প্রস্তাবগুলোও বাতিল করে দেয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জিটুজি পদ্ধতিতে ৩২ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করছে বিপিসি

২০২৩ সালের জন্য বিপিসি ৬৪ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানির চাহিদা প্রাক্কলন করেছে। এই জ্বালানি সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) মডেল ও উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ার আওতায় কেনা হবে।

জিটুজি পদ্ধতিতে জ্বালানি কেনার জন্য বিপিসি ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুর, ভারত, চীন, মালয়েশিয়া ও কুয়েতের নয়টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রিমিয়াম হার নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।

প্রিমিয়াম হলো ফ্রেইট ও সরবরাহকারীর জ্বালানি সরবরাহের মার্জিন, যা পণ্যের দামে যোগ করা হয়।

বিপিসিকে জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—সিঙ্গাপুরের পেট্রোচায়না পিটিই লিমিটেড, এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (ইএনওসি), পিটিটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং পিটি লিমিটেড, ইউনিপেক সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড, পিটি বুমি সিয়াক পুসাকো জাপিন (বিএসপি), ইন্ডিয়ান নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড ও ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড, মালয়েশিয়ান পেটকো ট্রেডিং লাবুয়ান কোম্পানি লিমিটেড, এবং কুয়েত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন।

বর্তমানে দেশে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ টন, যার ৯০ শতাংশের বেশি পরিশোধিত ও অপরিশোধিত উভয় আকারে আমদানি করা হয়।

টিবিএসের প্রতিবেদনটির লিঙ্ক

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]