12549

03/14/2025 হুইলচেয়ার বসেই আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন রাবির রিফাত

হুইলচেয়ার বসেই আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন রাবির রিফাত

রাবি প্রতিনিধি

১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:১৮

জন্মগত বিকলাঙ্গ আমার দুটি পা। মনের জোরে হুইলচেয়ার বসেই শুরু করেছিলাম পড়াশোনার হাতেখড়ি। শুধু পা নয় ডান হাতেও কোন কাজই করতে পারি না আমি। বাম হাতেই সকল কাজ করতে হয় আমাকে। এমন প্রতিবন্ধকতা দেখে মানুষের নানান কটু কথা শুনতে হয়েছে আমাকে।

এমন শারীরিক সমস্যা নিয়েও আমি দমে যায়নি। নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর মায়ের সর্বাত্মক সহযোগিতায় এখন আমি আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। জীবনে অনেকের অনেক কটু কথা শুনেছি সেগুলোককে পুঁজি করেই আজ আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যায়ন করছি।

কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী রিফাত রহমান। তার দুটো পা বিকলাঙ্গ। শুধু তাই নয় তার ডান হাতও প্যারালাইসড। বাম হাতেই সব কাজ করতে হয় তার। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি পড়াশোনা বাদ দেননি।

রিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী। বাড়ি চুয়াডাঙ্গার পিটিআই মোড়ে। তার বাবা মো.সাইদুর রহমান ২০১৯ সালে এক দুর্ঘটনায় মারা যান। এখন বাড়িতে তার মা মোছা. রহিমা খাতুন ও বড় ভাই মো.জুবায়ের রহমান আছেন।

জন্মের পর প্রায় তিন বছর কথা বলতে পারেন নি রিফাত। কিন্তু তার মা হাল ছাড়ে নি। তিনি রিফাতের কথা বলার জন্য যা করার সব কিছু করেছেন। এখন সে কথা বলতে পারলেও সমস্যা হয়। তাই প্রায় সময় একাই কথা বলে জড়তা কাটানোর অনুশীলন করেন।

দুই ভাইয়ের মধ্যে রিফাত সবার ছোট। গ্রামের স্কুল নীলমণিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। অষ্টম শ্রেণি ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বৃত্তি পায় রিফাত। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ফলাফলের দিক দিয়ে থাকে সবার থেকে এগিয়ে ছিলো এ অধম্য মেধাবী। পঞ্চম শ্রেণিতে ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৫৭৩ নম্বর পেয়ে বৃত্তি পায় এ লড়াকু যোদ্ধা। অনেক প্রতিকূলতা পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত আসতে হয়েছে তাকে।

বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনলাইন কোচিং করেন রিফাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দেয় সে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় না থাকলেও রাবিতে ১৪৪তম মেধা তালিকা অর্জন করে সে। গুচ্ছতে ৬৬ নম্বর পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন রিফাত। সিদ্ধান্ত নেন রাবিতে আইন বিভাগে পড়বেন।

তার সফলতার বিষয়ে জানতে চাইলে রিফাতের রহমান বলেন, আমার শারীরিক সমস্যা আমাকে খুব পীড়া দিতো। সমাজের লোকেরাও আমাকে দিয়ে কিছু হবে না বলতো। একদিন আমার সামনেই একজন বলে উঠলো, তুমি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে কি করবে, তোমার বড় ভাই হলে কিছু একটা করতে পারতো। আমি কিছু করতে পারবো না এটা মেনে নিতে পারিনি। তাই কিছু করার জন্য পড়াশোনা করছি।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী ধরমপুর এলাকায় মা-সহ বাসা নিয়ে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেকটা দূর হওয়ায় আমার যাওয়া আসা সমস্যা হয়। অন্যদিকে রাস্তাটাও ভালো না। বাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মৃত্যুর পর তার পেনশন দিয়েই আমাদের সংসার চলছে। সেই টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা আমাদের জন্য কষ্ট হয়।

দুই সপ্তাহ হলো আমি বৈদ্যুতিক হুইলচেয়ার ব্যবহার করছি। তাতে কিছুটা উপকার হচ্ছে। কিন্তু একাডেমিক ভবনগুলোতে একাই যেতে পারি না কারণ প্রবেশ সিঁড়ি গুলো হুইলচেয়ার উঠার মতো চওড়া নয়। তাই ক্লাস করতে আসার সময় বন্ধুদের মাধ্যমে সিঁড়ি উপরে উঠি। বন্ধুরাই আমাকে ক্লাসে যেতে সাহায্য করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি হলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আমার জন্য খুব উপকার হয়।

তার স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মেধা ও ভাগ্যক্রমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাই। তাই স্বপ্ন দেখি একদিন অনেক বড় আইনজীবী হবো।

রিফাতের বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, তাকে আমি চিনি এবং জানি। এজন্য ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের পর থেকে ব্যক্তিগত ভাবে রিফাতের খোঁজ খবর রাখি। বিভাগের সকলেই যাতে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয় তার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। তার যেকোনো সমস্যা আমরা গুরুত্বের সাথে দেখবল। কারণ সে অনেক মেধাবী তালিকা থেকে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। আমি তার ভবিষ্যত সফলতা কামনা করি।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]