12994

04/18/2024 ভুল-অসংগতি চিহ্নিত করছে এনসিটিবি

ভুল-অসংগতি চিহ্নিত করছে এনসিটিবি

রাজ টাইমস ডেস্ক :

২৪ জানুয়ারী ২০২৩ ২৩:২৯

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন পাঠ্যবইয়ের ভুল, অসংগতি ও বিতর্কিত বিষয় চিহ্নিত করার কাজ চলছে। বিষয়গুলোর সত্যতা নিরূপণ সাপেক্ষে খুব দ্রুতই সংশোধনী সার্কুলার আকারে জারির চিন্তা চলছে। পাশাপাশি নিষেধ করা সত্ত্বেও যেসব লেখক ও সম্পাদক পাঠ্যবইয়ে অপ্রত্যাশিত তথ্য ও ছবি রেখে সরকারকে বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলেছেন, তাদের ব্যাপারে গোয়েন্দা তদন্ত চলছে। খবর যুগান্তরের। 

শাস্তি হিসাবে তাদের ভবিষ্যতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোনো কাজে নেওয়া হবে না বলে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে পাঠ্যবইয়ে ভুল ও অপ্রত্যাশিত তথ্যের অভিযোগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। বিকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে (আমাই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি থাকবেন। তার সঙ্গে এতে যোগ দেবেন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই প্রণেতারা। এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন ডাকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পাঠ্যবইয়ে ভুলত্রুটি বা ইসলামবিরোধী তথ্য থাকাসংক্রান্ত অভিযোগের বিরুদ্ধে সোমবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, কিছু অভিযোগ একেবারেই মিথ্যাচার। কেউ কেউ বই না পড়ে এবং না দেখেই কেবল শুনে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে হিংসা ও বিদ্বেষপ্রসূত সমালোচনা শুরু করেছেন। ইসলামবিরোধী তথ্য থাকার যে কথা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। কাজ করতে গেলে ভুলত্রুটি হয়। পাঠ্যবই সবার জন্য উন্মুক্ত আছে। সবার মতামত গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে যেসব পরামর্শ যৌক্তিক ও বাস্তব, তা গ্রহণ করা হবে। সবই সংশোধন করা হবে। কিন্তু যারা মিথ্যাচার করছেন, তা মেনে নেওয়া হবে না। এ সময় তিনি আরও বলেন, কিছু ভুল ১০ বছর ধরে বইয়ে আছে। একাধিকার রিভিউ করার পরও তা রয়ে গেছে। তা এতদিন কারও নজরে আসেনি। এখন এসেছে। তার সংশোধনীও ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরির পর তা শিক্ষামন্ত্রীকে দেখানো হয়েছিল। তখন তিনি দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা সামনে রেখে সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান বইয়ে অন্তর্ভুক্ত কিছু বিষয় (কনটেন্ট) এবং ছবি না রাখতে পরামর্শ দেন। এবার যে নতুন বই যাচ্ছে এর মধ্যে বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের দুটি করে কপি দেওয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে অনুশীলনী (প্র্যাকটিস) বই বা সহায়ক পুস্তিকা, আরেকটি পাঠ্যবই। পাঠ্যবইয়ে পাঠের প্রক্রিয়া দেওয়া আছে। কিন্তু অনুশীলনী বইয়ে কীভাবে সেই পাঠের প্র্যাকটিস বা কাজটি করে আনতে হবে, তা উল্লেখ আছে। এ বিষয়টির প্রথম পাণ্ডুলিপি দেখার পর শিক্ষামন্ত্রী কিছু ছবি না দেওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি পাঠে ইতিহাস উল্লেখ করতে গিয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখারও নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু মূল পাঠ্যবই থেকে সেসব ছবি সরানা হলেও অনুশীলনী বইয়ে সেগুলো রেখে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, এই বইটির প্রচ্ছদে অন্তর্ভুক্ত ফুল-পাখি নিয়েও আপত্তি উঠেছে। এছাড়া ইতিহাসের ধারাবর্ণনা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। বিবর্তনবাদের মতো কঠিন বিষয় রাখা হয়েছে এ গ্রন্থে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দার্শনিক বিতর্কবিষয়ক এমন উচ্চতর গবেষণার বিষয় মাধ্যমিক পর্যায়ে আনা জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা গেছে। কেননা বিবর্তনবাদে মানুষ সৃষ্টি নিয়ে যে ব্যাখ্যা আছে, এর সঙ্গে ইসলাম ধর্মে পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা মেলে না। এছাড়া ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের সম্পর্কে সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টির জন্য একটি পাঠ রাখা হয়েছে। কিন্তু তাতে একটি ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির বৈবাহিক অবস্থার আলোচনা নিয়ে আপত্তি উঠেছে এবং তা দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির সঙ্গে বেমানান বলে দাবি উঠেছে। অন্যদিকে বিজ্ঞান বইয়ে মানুষের বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা এসেছে। কিন্তু আলোচনার ভাষা নিয়ে ঘোরতর আপত্তি উঠেছে। বিষয়টি শ্রেণিকক্ষে পড়ানো দূরের কথা, বাসায় মা-বাবার সামনে পড়ার মতো শব্দচয়ন হয়নি বলে সমালোচনা উঠেছে। এছাড়া নবম শ্রেণির অন্তত তিনটি পাঠ্যবইয়ে বিকৃত ও ভুল ইতিহাস থাকার তথ্য আছে বলে অভিযোগ ওঠে। অবশ্য শেষের অভিযোগটি এনসিটিবি কবুল করে ইতোমধ্যে ৯টি সংশোধনী দিয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই রচনা কার্যক্রমের কোর কমিটির সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম তারিক আহসান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান আর সামাজিক বিজ্ঞান বই নিয়ে আপত্তি দেখা যাচ্ছে। পরিবর্তিত নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে আগামী প্রজন্মকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে যে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই দরকার, তা এবার প্রবর্তন করা হচ্ছে। কিন্তু দুটি বইয়ের কারণে ভালো উদ্যোগের আলোচনা চাপা পড়ে যাচ্ছে। ভালো উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বই লেখকদের মনে কী কাজ করেছে, সেটা বলা সম্ভব নয়। তবে সবচেয়ে ইতিবাচক হবে যত দ্রুত সম্ভব ভুল ও বিতর্কিত বিষয় চিহ্নিত করে পরিমার্জন সংশোধনী দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো। এটা যত তাড়াতাড়ি করা সম্ভব হবে, তত ভালো হবে। তিনি আরও বলেন, বই দুটির পাঠ আর ছবি ব্যবহারে আরেকটু রক্ষণশীল হলে ভালো হতো। এখন বিতর্ক নিরসন করতে হলে ভালো ‘রিভিশন’ লাগবে।

নাম প্রকাশ না করে এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এবং শিক্ষাক্রম প্রণয়ন কমিটির সদস্য যুগান্তরকে জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাঠ্যবইয়ের ওপর যেসব মন্তব্য আসছে, তা সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি পাঠ্যবই ‘রিভিউ’ (পর্যালোচনা) চলছে। জনসমালোচনায় শিক্ষামন্ত্রী যতটা অসন্তুষ্ট, তার চেয়ে বেশি ক্ষিপ্ত হয়েছেন তার পর্যবেক্ষণ উপেক্ষিত হওয়ায়। তিনি ধর্মীয়ভাবে স্পর্শকাতর এবং দেশের সাংস্কৃতিক মানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সেসব ছবি ও পাঠ বাদ দিতে বলেছেন। কিন্তু সেসব একটি বই থেকে বাদ দেওয়া হলেও আরেকটিতে রাখা হয়েছে। সবচেয়ে গর্হিত কাজ হয়েছে মুদ্রণের জন্য প্রেসে পাঠানোর আগে সামাজিক বিজ্ঞান বইটির চূড়ান্ত নিরীক্ষা করা হয়নি। এখন বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক কি না, তদন্ত করা প্রয়োজন।

জানা যায়, উল্লিখিত বই দুটি বিশেষ করে সামাজিক বিজ্ঞান বইটি রচনায় জড়িতদের আদর্শিক পরিচয় নিয়ে এনসিটিবির ভেতরেই উষ্মা আছে। কাউকে কিছু না জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সদস্য (শিক্ষাক্রম) লেখক নির্বাচন করেছেন। এছাড়া পাঠ্যবই আর শিক্ষাক্রম রচনাসংক্রান্ত কাজে দুটি এনজিও সংস্থার দুই কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের মধ্যে ‘ই’ আদ্যাক্ষরের একজন ইউনিসেফ এবং ‘ম’ আদ্যাক্ষরের একজন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালে কর্মরত ছিলেন। যে সংস্থা দিয়ে পাঠ্যবইয়ের যৌক্তিক মূল্যায়ন করা হয়েছে, সেটি নিয়েও আপত্তি আছে খোদ এনসিটিবির ভেতরে। শুধু তাই নয়, এ খাতে যে বরাদ্দ এসেছে, তার ব্যয়ে উচ্চাভিলাষী পন্থা এবং হিসাবনিকাশ নিয়েও প্রশ্ন আছে। সূত্র জানায়, পাঠ্যবই এবং শিক্ষাক্রমের কাজে জড়িতদের তালিকা এবং অর্থায়ন ও ব্যয়সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।

এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি এনসিটিবির চেয়ারম্যান। তবে পাণ্ডুলিপি থেকে বিতর্কিত ছবি ও কিছু পাঠ মন্ত্রী বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি বলে নিশ্চিত করেন তিনি। আরও বলেন, পাঠ্যবই তৈরির কমিটিতে অতি বাম বা অতি ডানপন্থার কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়। আওয়ামী লীগ তা সমর্থনও করে না।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]