04/22/2025 রাজশাহীতে জাতীয় যুব গেমসের ১১ খেলোয়াড় গ্রেফতার
রাজটাইমস ডেস্ক :
৬ মার্চ ২০২৩ ২০:১৫
রাজশাহী রেল স্টেশনে এক পুলিশ কনস্টেবল ও তার স্ত্রীকে মারধরের ঘটনায় জাতীয় যুব গেমসে অংশ নেওয়া ১১ খেলোয়াড় ও কোচসহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে নামার সময় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কর্মরত গোলাম কিবরিয়া নামের ওই পুলিশ কনস্টেবল ও তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা জয়াকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় ১৩ খেলোয়াড়ের নামে কিবরিয়ার স্ত্রী জয়া মামলা করেন। খবর যুগান্তরের।
মামলার পর পুলিশ ১২ জনকে গ্রেফতার করে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কোচকেও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার দেখিয়ে রাতে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঁচ খেলোয়াড় সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত জামিন পেয়েছে। এদিকে, আহত কিবরিয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রেফতার ১১ খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনজন ছেলে ও আটজন মেয়ে। এদের মধ্যে ছয়জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি। তারা হলেন-আলী আজম (১৯), আকাশ আলী মোহন (২০), রিমি খানম (১৯), পাপিয়া সারোয়ার পূর্ণিমা (১৯), মোছা. দিপালী (১৯) ও সাবরিনা আক্তার (১৯)। অন্য পাঁচজনের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। গ্রেফতার কোচের নাম আহসান কবীর (৪৫)।
রাজশাহী রেলওয়ে থানায় করা মামলার আসামিরা হলেন-রাজশাহী মহানগরীর পাচানি মাঠ এলাকার আলী আজম, হাজরাপুকুর ডাবতলা এলাকার আকাশ আলী মোহন, আব্দুল আল জাহিদ ও রমজান, জিন্নানগর এলাকায় আহসান কবীর, নিউ কলোনি এলাকার ফারহানা খন্দকার, কয়েরদাড়া এলাকার রিমি খানম, বখতিয়ারবাদ মালদা কলোনি এলাকার পাপিয়া সারোয়ার পূর্ণিমা, ছোচবনগ্রাম উত্তরপাড়ার দিপালী, বড় বনগ্রাম রায়পাড়া এলাকার সাবরিনা আক্তার ও এলাকার জেমি আক্তার, শাহ মখদুম থানার মোড় এলাকার বৃষ্টি মণি এবং মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট এলাকার খাদিজা খাতুন। তাদের মধ্যে রমজান ছাড়া বাকি সবাইকে গ্রেফতার হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যকে মারধর এবং তার স্ত্রীর চেন চুরির মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে কিবরিয়ার ভাই গোলাম সারওয়ার এবং সারওয়ারের বন্ধু সাব্বির ইসলামকে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ভোর ৬টার দিকে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে কিবরিয়া ও জয়া রাজশাহী উদ্দেশে রওয়ানা দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ট্রেনটি রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেন থেকে নামার জন্য তারা দরজার কাছে যান। কিন্তু আসামিরা জটলা পাকিয়ে দরজা ঘিরে রেখেছিল। সেখান থেকে তাদের সরে যাওয়ার জন্য কিবরিয়া ও জয়া অনুরোধ করেন। কিন্তু আসামিরা তাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। এর জের ধরে দুজনকে বেদম মারধর করা হয়। কিবরিয়া মুখ, পিঠ ও অন্ডকোষে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এতে কিবরিয়ার নাক ফেটে গেছে। তার স্ত্রী দাবি করেছেন, স্বামীকে মারধরের সময় তার গলার চেন চুরি করে নেওয়া হয়েছে।
তবে গ্রেফতারদের স্বজনরা বলছেন ভিন্ন কথা। গ্রেফতার এক খোলোয়াড়ের চাচা বেলাল হোসেন বলেন, আমার ভাতিজিসহ সব খেলোয়াড় খেলা শেষে ট্রেনে আসছিল। ওদের সবার ২৬ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিল একটি লাগেজে। ট্রেনে সেটি খুঁজে পাচ্ছিল না। তখন তারা ট্রেনে লাগেজটি খুঁজছিল। ওই সময় সাধারণ পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে এক মেয়ে খেলোয়াড়ের কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই পুলিশ সদস্য মেয়েটিকে থাপ্পড় মেরে বসেন। এ ছাড়া আরেক ছেলে খেলোয়াড়কেও মারেন। পরে স্টেশনে তাদের আবার হাতাহাতি হয়। এরপরই পুলিশ দুই পক্ষকে মীমাংসার নামে থানায় আনে। পরে মামলা করা হয়। খেলোয়াড় জাহিদের মা বলেন, তার ছেলে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। পুলিশ তার ছেলের জীবনটা নষ্ট করে দিল। তিনি এর বিচার চান।
এ ব্যাপারে পাকশি রেলওয়ে জেলা রাজশাহী থানার ওসি গোপাল কুমার জানান, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি মামলা নিয়েছেন। বাকি একজনকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, জাতীয় যুব গেমসে অংশ নিয়ে তারা রাজশাহী ফিরছিল। কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটল-তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
রাজশাহী রেলওয়ে থানায় গ্রেফতারদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রকৃত ঘটনা কী ঘটেছে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রেফতার হওয়া খেলোয়াড়দের পরিবারের সদস্যরা। তারা থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন।