14727

03/16/2025 ন্যাটোর কাছে জেলেনস্কি কী চাইলেন এবং কী পেলেন

ন্যাটোর কাছে জেলেনস্কি কী চাইলেন এবং কী পেলেন

রাজ টাইমস ডেস্ক :

১৪ জুলাই ২০২৩ ১৪:৫৯

গত বছর মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে জোটটি আনুষ্ঠানিকভাবে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে তাদের দলে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। লিথুনিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে এই বছরের শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি আশা করেছিলেন, জোটটি তার দেশকে একইভাবে ন্যাটোতে ডাক দেবে।

সম্প্রতি জারি করা চূড়ান্ত এক বিবৃতিতে ন্যাটো দাবি করেছে, 'ভবিষ্যতে ন্যাটোতে ইউক্রেনের আসার সম্ভাবনা রয়েছে।' তবে সেই ভবিষ্যত কখন শুরু হতে পারে তা জানায়নি।

রাশিয়ার আগ্রাসনের সময় পশ্চিমা মিত্ররা কিয়েভকে সহায়তা অনুমোদন করবে কিনা তা নিয়ে ন্যাটো জোটে উদ্বেগ ছিল। প্রথমে আর্টিলারি, তারপর লেপার্ড ট্যাঙ্ক, এরপর এফ-১৬ যুদ্ধবিমান, এরপর ক্লাস্টার গোলাবারুদ দেওয়ার ঘোষণা। প্রতিবারই প্রথমে অস্ত্র সহায়তা দেওয়া নিয়ে ধোয়াশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত জোটের কিছু সদস্য অস্ত্র দিতে সম্মত হয়। কিন্তু এসব অস্ত্র সহায়তার চেয়ে ন্যাটোর সদস্যপদ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই কিয়েভের চূড়ান্ত ইচ্ছাটি পূরণ হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

জেলেনস্কি ন্যাটোর সাম্প্রতিক শীর্ষ সম্মেলন থেকে ঠিক কী চেয়েছেন, তার দাবিগুলো কি বাস্তবসম্মত, শেষ পর্যন্ত তিনি কী পেলেন? এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

জেলেনস্কি কী চেয়েছেন?

জেলেনস্কির উচ্চাকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট ছিল, তিনি ইউক্রেনের জন্য ন্যাটোর পূর্ণ সদস্যপদ চেয়েছেন। ২০২২ সালের জুলাইয়ের শীর্ষ সম্মেলনে তার অনুরোধ কম জোরালো ছিল। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল - লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন এবং জাপোরিঝিয়াকে আলাদা ভূখণ্ড হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরে জেলেনস্কি ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ন্যাটোতে যোগদানের জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেন।

পুতিনের ঘোষণার পরপরই জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য 'একটি ত্বরান্বিত প্রক্রিয়ার অধীনে' আবেদন করছে। এ বিষয়টি সম্প্রতি ন্যাটোর ভিলনিয়াস শীর্ষ সম্মেলনের এজেন্ডায় রয়েছে।

ন্যাটোর 'ওপেন-ডোর নীতি'র অধীনে যে কোনও ইউরোপীয় দেশ এই জোটে ঢুকতে আবেদন করতে পারে। এ কারণেই এর সংখ্যা ১২টি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য থেকে বর্তমানে ৩১টিতে উন্নীত হয়েছে। শিগগিরই সুইডেনের যোগদানের ফলে এই জোটের সদস্য ৩২-এ উন্নীত হবে।

ন্যাটোতে ইউক্রেনের পূর্ণ সদস্যপদ কি বাস্তবসম্মত?

ন্যাটোর সদস্যপদ বলতে কী বোঝায়, প্রথমে সে সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া যাক। চুক্তির ৫ নং অনুচ্ছেদে সম্মিলিত প্রতিরক্ষার নীতিতে বলা হয়েছে, এক সদস্যের উপর আক্রমণ সবার ওপর আক্রমণের সমান হিসেবে গন্য হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর ন্যাটোর ইতিহাসে অনুচ্ছেদ ৫ এর প্রয়োগ করা হয়েছে মাত্র একবার। যদি ইউক্রেন রাশিয়ার হামলার মধ্যেই ন্যাটতে যোগ দেয়, এই অনুচ্ছেদের ফলে ৩১টি দেশ রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়াতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভিলনিয়াস শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, পূর্ণ সদস্যপদ এখনও বাস্তবসম্মত নয়। সম্প্রতি সিএনএনের ফরিদ জাকারিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন, 'যুদ্ধের মাঝখানে ইউক্রেনকে ন্যাটো পরিবারে আনা হবে কি না, তা নিয়ে ন্যাটোর মধ্যে ঐকমত্য নেই। আমরা ন্যাটোর প্রতিটি ইঞ্চি এলাকা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। এটি এমন একটি অঙ্গীকার, যা আমরা সবাই করেছি। যদি ন্যাটভুক্ত কোনো দেশের সাথে যুদ্ধ চলতে থাকে, তাহলে আমরা সবাই যুদ্ধের অংশ। ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার অর্থ আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত।'

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, সংঘাতের মাঝখানে আমরা নতুন কোনো সদস্যকে জোটে আনতে পারি না। এটি কেবল জোটে যুদ্ধ আমদানি ছাড়া কিছুই নয়।

তবে ভিলনিয়াস থেকে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়ালেস বলেন, যখনই এই সংঘাত শেষ হবে, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে আনার জন্য আমাদের যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তুত থাকতে হবে।

জেলেনস্কি এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের কয়েক মাস আগে স্বীকার করেছিলেন যে ইউক্রেন যুদ্ধের সময় জোটের সদস্য হতে পারে না। গত ফেব্রুয়ারিতে কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেছিলেন, যুদ্ধ চলাকালীন আমরা ন্যাটোর সদস্য হব না। আমরা এটা চাই না বলে নয়, বরং এটা অসম্ভব।

ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে বাধা ছাড়াই জোটে প্রবেশের একটি স্পষ্ট পথ এবং ইউক্রেনকে কখন সদস্যপদ দেওয়া হবে তার একটি স্পষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু জেলেনস্কি ন্যাটোর এই বিষয়কে 'অযৌক্তিক' উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছেন।

এদিকে, শুধু যুদ্ধ শেষ হলেই নয়, ন্যাটোতে জায়গা পেতে যুদ্ধে 'জয়ী' হতে হবে ইউক্রেনকে- এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ইউক্রেনের জয় নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ। কারণ ইউক্রেন বিজয়ী না হলে ন্যাটোতে সদস্যপদ নিয়ে আলোচনার কোনো বিষয় নেই।

জেলেনস্কি কী পেলেন?

ভিলনিয়াসে ন্যাটোর এবারের সম্মেলন শেষে জোটের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'জোটের মিত্ররা সম্মত হলে এবং শর্ত পূরণ হলে আমরা ইউক্রেনকে জোটে যোগদানের আমন্ত্রণ জানাতে পারবো।'

জোটটি অবশ্য আবেদন প্রক্রিয়ার একটি বাধা অপসারণ করে ইউক্রেনকে একটি বড় ছাড় দিয়েছে। ন্যাটো বলছে, আমরা ইউক্রেনের জন্য মেম্বারশিপ অ্যাকশন প্ল্যানের প্রয়োজনীয়তা উঠিয়ে দিতে সম্মত হয়েছি। এর ফলে ইউক্রেনের সদস্যপদের পথ দুই ধাপের প্রক্রিয়া থেকে এক ধাপে নেমে আসবে।

মেম্বারশিপ অ্যাকশন প্ল্যান (এমএপি) অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সংস্কারের একটি রূপ। সম্প্রতি যুক্ত হওয়া অন্যান্য দেশগুলোকে ন্যাটোতে যোগদানের আগে এটি পূরণ করতে হয়েছে। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি ইউক্রেনের জন্য রাখা হচ্ছে না।

এসিকে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে গত বুধবার শীর্ষ সম্মেলনে জি-৭ দেশগুলোর নেতারাও ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনের একটি নতুন ঘোষণা উন্মোচন করেন। নতুন সামরিক প্যাকেকে রয়েছে ফ্রান্সের 'স্টর্ম শ্যাডো' ক্ষেপণাস্ত্র এবং জার্মানি থেকে ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের নানা অস্ত্র-সরঞ্জাম।

বাইডেন বলেন, এই ঘোষণায় এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু হবে, যার মাধ্যমে আমাদের প্রতিটি দেশ এবং অন্য যে কোনো দেশ যারা ন্যাটোতে অংশ নিতে ইচ্ছুক- তারা ইউক্রেনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা অঙ্গীকার নিয়ে আলোচনা করবে।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]