03/15/2025 রেলে নাশকতার আশঙ্কা
রাজটাইমস ডেস্ক:
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৩
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নিরাপদ বাহন রেলে আবারও ২০১৪ সালের মতো নাশকতার আশঙ্কা করছে রেল পুলিশ। ওই সময় ট্রেনে আগুন দেওয়া ও ট্রেন লাইন উপড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছিল। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকেই ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার রেলপথকে ঘিরে রেলওয়ে পুলিশ নিরাপত্তার ছক এঁকেছিল। খবরের কাগজ নিউজ।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইনে নাশকতায় ঘটনাটি তাদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। এই নাশকতার পর নড়েচড়ে ওঠে রেল পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা। কারণ ওই ঘটনার পর রেলে চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চলমান অবরোধে ঢাকা থেকে অন্য জেলাগুলোতে যানবাহন চলাচল না করলেও রেল যোগাযোগ বিছিন্ন ছিল না।
এতে অনেক যাত্রী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ভ্রমণের জন্য ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন। চলমান এই আতঙ্ক কাটাতে বহুমুখী নিরাপত্তার ছক এঁকেছে পুলিশ। ২০১৪ সালে রেললাইনকে রক্ষার জন্য যে তত্ত্ব তারা মাঠে প্রয়োগ করেছিল, সেগুলো ছাড়াও বর্তমান সময়ে যুগোপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তারা।
এ জন্য ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যেসব জেলার সঙ্গে রেললাইনের সংযোগ রয়েছে, সেসব জেলার লাইন ভাগ করে প্রতি ৩ কিলোমিটার পরপর রেল পুলিশের সদস্যরা টহল দেবেন।
স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনে যে বাড়তি পুলিশ সদস্য থাকেন, তাদের লাইন রক্ষার কাজে নিয়োজিত করা হবে। লাইন সুরক্ষিত আছে কি না, তার জন্য গ্যাং কারে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ট্রেনের চালকের ওয়াকিটকির সংযোগ থাকবে। যাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা না থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (রেলওয়ে) মো. দিদার আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, রেললাইন নিরাপত্তার জন্য আমরা অতিরিক্ত ফোর্স বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। আনসার নিয়োগের পরিকল্পনা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট রেল বিভাগ নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, যারা রেলপথকে ঘিরে নাশকতা করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের ঘটনার পর নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া গাজীপুরের রেললাইনের ওপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে দুর্বৃত্তরা। গত ২৮ অক্টোবরের পর হরতাল ও অবরোধে ঢাকাসহ সারা দেশে রেলে প্রায় ৫২টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এতে রেলের নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
সূত্র জানায়, রেললাইনকে সচল ও দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষার জন্য লাইনের পাশের বাসিন্দাদের সোর্স হিসেবে নিয়োগ করার উদ্যোগ নিয়েছে রেল পুলিশ। লাইনের ওপর কারও গতিবিধি সন্দেহজনক হলে তারা পুলিশকে খবর দেবে। পাশাপাশি যে মাঠ দিয়ে লাইন গেছে ওই সব মাঠে যেসব কৃষক কাজ করেন, তাদেরও সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, লাইন রক্ষার জন্য ৩ কিলোমিটার পরপর ওই এলাকাগুলোতে টহলে থাকবেন রেল পুলিশের সদস্যরা। তারা এক স্থানে বসে না থেকে ওই পথে চলাচল করতে থাকবেন। যাতে দুর্বৃত্তরা নাশকতার সুযোগ না পায়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশকেও লাইনে নজরদারি করতে বলা হয়েছে। তবে রেলকে রক্ষার জন্য যে ১ হাজার ৪০০ আনসার সদস্য নিয়োগের উদ্যোগ ছিল তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এতে রেলের নিরাপত্তা রক্ষায় হিমশিম খেতে হচ্ছে রেল পুলিশকে।
সূত্র জানায়, গাজীপুরের ঘটনা থেকে বাড়তি অভিজ্ঞতা পেয়েছে রেল পুলিশ। যে এলাকায় তারা রেললাইন কেটেছে, সেই এলাকায় লোকজনের আনাগোনা তুলনামূলক কম। এতে তারা রেলাইন কেটে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। এ জন্য বসতি কম এবং ঘন জঙ্গল রয়েছে এমন রেললাইনগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া পুলিশ রেললাইন কাটা ও ফিশপ্লেট ঠিক আছে কি না এবং রেলব্রিজ ঠিক আছে কি না সেগুলো লক্ষ রাখবে। যাতে দুর্ঘটনা ও নাশকতা এড়ানো যায়।
সূত্র জানায়, ট্রেনের ভেতরে যাতে পকিল্পিতভাবে কেউ আগুন লাগাতে না পারে, সে জন্য রেল পুলিশের সদস্যরা সাদাপোশাকে নজরদারি গড়ে তুলবেন। কাউকে সন্দেহ হলে তল্লাশি চালাবেন তারা।