18240

03/15/2025 ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জে নির্বাচন কমিশন!

ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জে নির্বাচন কমিশন!

রাজটাইমস ডেস্ক:

২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৫৬

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমনিতেই নির্বাচন বর্জন করে ভোট ঠেকানোর চেষ্টা করছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তার ওপর বিভিন্ন আসনে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

অনেক এলাকায় দুপক্ষের রেষারেষি সংঘাতে রূপ নিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের ঘটনা বাড়তে পারে। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বিদ্যমান সব বাধা অতিক্রম করে দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা।

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভোটারদের মন জয় করতে এরই মধ্যে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। কিন্তু ভোট গ্রহণের মাত্র ১১ দিন বাকি থাকলেও নানামুখী চাপে আছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিদিনই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

বিএনপিসহ নিবন্ধিত বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় এ নির্বাচনে অনেকটা শূন্যতা রয়ে গেছে শুরু থেকেই। ওই দলগুলো এখন ভোট ঠেকানোর কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত। তপশিল ঘোষণার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করছে তারা। এরই মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে অসহযোগ আন্দোলনেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।

যদিও এখন পর্যন্ত এসব কর্মসূচির তেমন কোনো প্রভাব নেই। তবে ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করতে পারে তারা। ভোট বাধাগ্রস্ত করতে জ্বালাও-পোড়াওসহ সহিংসতা বাড়তে পারে। সে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলা করে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ করা ইসির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আবার সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাতে ভোটারদের মধ্যে ভীতি তৈরি হবে। এতে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলোর বর্জন সত্ত্বেও নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা ও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর কৌশল হিসেবেই দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দেয় আওয়ামী লীগ। এ সুযোগ গ্রহণ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়েও ভোটের লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন পদধারী নেতা, সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যরা। নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় বেশিরভাগ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগেরই মনোনীত ও মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্ররা। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন ওই সব আসনের নেতাকর্মীরা।

ভোটের লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে না চাওয়ায় দুপক্ষের মধ্যে চলছে টানটান উত্তেজনা। বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। প্রতিদিনই চলছে হুমকি-ধমকি। এতে ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এসব ঘটনায় আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে শোকজ, তলব ও মামলা করেও পরিস্থিতি শান্ত করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। শেষ পর্যন্ত বেপরোয়াদের প্রার্থিতা বাতিলের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের হুমকি দিয়েছে তারা।

বিশ্লেষকদের মতে, পদ-পদবি কিংবা কর্তৃত্বকে কেন্দ্র করে অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে আগে থেকেই চরম বিরোধ রয়েছে। এসব এলাকায় আওয়ামী লীগ দুই বা তার অধিক ভাগে বিভক্ত। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় নির্বাচনে এর প্রতিফলন ঘটেছে। তবে আগের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে বেশিরভাগ আসনে দলের একক প্রার্থী ছিল। কোথাও কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও তার পক্ষে কাজ করলে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুঁশিয়ারি ছিল। ফলে বাধ্য হয়েই বেশিরভাগ নেতাকর্মী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতেন। কেউ কেউ নীরব থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলের প্রতীকে ভোট দিতেন।

কিন্তু এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। দলীয় মনোনয়নের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত করা এবং নেতাকর্মীদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকায় বেশিরভাগ আসনে পুরোনো বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচন ঘিরে নতুন বিরোধে জড়িয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দুপক্ষের এই মরিয়া চেষ্টা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ালে তাদের কেন্দ্রে আসা কমে যেতে পারে।

এদিকে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগীদের দীর্ঘদিনের চাপ রয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ভোটে না আসায় শুরুতেই অংশগ্রহণমূলক ভোটের বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় প্রার্থী সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, তেমনি সারা দেশে ভোটের একটি উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের ছাড়াই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনে ভোটারদের সন্তোষজনক উপস্থিতি নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ভোট প্রদানের হার অস্বাভাবিক মাত্রায় কম হলে তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেই কিছুদিন আগে বলেছেন, ‘এবারের নির্বাচন বিদেশি শক্তির থাবা পড়েছে। সেজন্য দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের কোনো বিকল্প নেই।’

জানা গেছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন। এবারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ সদস্য। এর মধ্যে আনসার ৫ লাখ ১৬ হাজার, পুলিশ (র্যাবসহ) ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১, কোস্টগার্ড ২ হাজার ৩৫৫ ও বিজিবির সদস্য ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন নিয়োজিত থাকবেন। আর স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ২৯ ডিসেম্বর থেকে মাঠে নামবেন সেনাসদস্যরা। ভোট অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে এরই মধ্যে বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার, ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি, এসআইসহ সারা দেশে পুলিশ ও প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল করেছে নির্বাচন কমিশন। এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের চাপ ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে কমিশনের। সরকারবিরোধীদের বর্জন ও ভোট ঠেকানো ছাড়াও সারা দেশে প্রার্থীদের দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিয়ন্ত্রণ করে শেষ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ঠিক রেখে ভোটের হার বাড়ানো হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এবারের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিগত দুটি নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্কের পর এবার বিরোধী দলগুলো বর্জন করায় শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে কমিশন। সারা দেশে যেভাবে সহিংসতা শুরু হয়েছে, তা দমন করাই এখন ইসির প্রধান কাজ। অন্যদিকে বহির্বিশ্ব এবারের নির্বাচন নিয়ে অতীতের তুলনায় বেশ সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। সেজন্য তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সব হুমকি ও আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে আনার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।’

তবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ভোট করতে যা যা করার কমিশন তার সবই করে যাচ্ছে এবং যাবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হয়, সে জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রয়াসের কোনো ঘাটতি থাকবে না।’

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]