03/13/2025 বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরার দিন আজ
রাজটাইমস ডেস্ক:
১০ জানুয়ারী ২০২৪ ১১:৩১
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনো পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে পূর্ণতা পায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নেওয়ার আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। দেশ স্বাধীন হলেও বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে টালবাহানা করে পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা। আন্তর্জাতিক চাপের কারণে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে ৮ জানুয়ারি (৭ জানুয়ারি ভোর) মুক্তিলাভ করেন তিনি। পাকিস্তান থেকে বিমানে লন্ডনে যান বঙ্গবন্ধু। সেখান থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লি হয়ে ঢাকায় অপেক্ষায় থাকা লাখো লাখো জনতার মাঝে ফিরে আসেন জাতির পিতা।
এর আগে তিনি লন্ডনে হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছে ২৬ ঘণ্টা অবস্থান করেন। এ সময় তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের বাইরে অবস্থান করলেও সফর বাতিল করে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধু ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পৌঁছালে তাকে নজিরবিহীন সম্মান দেখান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথ।
বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানাতে গাড়ির দরজা খুলে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন, যতক্ষণ না বঙ্গবন্ধু গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। সে বৈঠকেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বীকৃতির বিষয়টি উত্থাপন করেন। ৯ জানুয়ারি ভোরে ব্রিটিশদের কমেট বিমানে করে দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন বঙ্গবন্ধু। ১০ জানুয়ারি সকালে ভারতের দিল্লি পৌঁছান তিনি। বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানানো হয়। এরপর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। দিল্লির রাস্তায় তার গাড়িবহরের ওপর পুষ্পবর্ষণ করা হয়েছিল।
ভারতে পৌঁছানোর পর বঙ্গবন্ধু অস্থির ছিলেন কখন দেশের মাটিতে পা রাখবেন, নিজের মানুষের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হবেন। অবশেষে এলো সেই সময়, ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকায় বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকেল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ভাষণ দেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। বাংলার মানুষের অস্তিত্ব ও ভালোবাসায় মিশে আছেন বঙ্গবন্ধু। তাই বাংলার মানুষের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিল একদিন এদেশের মানুষ নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নির্ধারণ করবে। সে লক্ষ্যেই তিনি গোটা জাতিকে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন এবং সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। ভিনদেশি শক্তির কাছে মাথানত করে নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ আজ বিশ্বের বুকে গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলছে সেটাই আওয়ামী লীগ সরকারের পরম পাওয়া।
জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করবে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্য সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভার আয়োজন করেছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ ছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করবে।