18842

03/15/2025 অর্ধেক বাংলাদেশি অনিরাপদ পানি পান করে

অর্ধেক বাংলাদেশি অনিরাপদ পানি পান করে

রাজটাইমস ডেস্ক:

১৯ জানুয়ারী ২০২৪ ১০:১৭

বাংলাদেশিরা যে পানি পান করছে তার অর্ধেকেই বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক রয়েছে। নতুন এক গবেষণায় এই ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে বিজ্ঞানীদের একটি দল বাংলাদেশিদের খাওয়া পানির ৪৯ শতাংশেই কার্সিনোজেনিক দূষণ শনাক্ত করেছে। এই গবেষণা দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির জনস্বাস্থ্য সংকটকে সামনে নিয়ে এসেছে। খবর দৈনিক মানবজমিন। 

বাংলাদেশ একটি বন্যাপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই দেশের বড় একটি অংশ পানির নিচে ডুবে যায়। ২০১৮ সালে সাইক্লোন আম্ফানের পর দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। প্রবল বৃষ্টির কারণে গড়ে প্রতি বছর দেশের ২১ শতাংশ এলাকা ডুবে যায়। দেশে আর্সেনিকের মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধির সঙ্গে এই বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সরাসরি সংযোগ রয়েছে। বুধবার ‘পিএলওএস ওয়ান’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটাই জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, যখন সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ভূমির মিঠাপানির সংস্পর্শে আসে, তখন আর্সেনিক উৎপন্ন হয়। গবেষকরা আর্সেনিক নিঃসরণের পেছনের গতিশীলতা বোঝার জন্য অক্সিজেনের ঘনত্ব, পিএইচ ও তাপমাত্রা পরীক্ষার জন্য সারা দেশে কূপ থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত পানীয় জলের নিরাপদ সীমা প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ ১০ মাইক্রোগ্রাম।

বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির প্রায় ৪৯ শতাংশে আর্সেনিকের ঘনত্ব ওই সীমার বেশি। কিছু নমুনায় আর্সেনিকের ঘনত্ব রেকর্ড করা হয়েছে প্রতি লিটারে প্রায় ৪৫০ মাইক্রোগ্রাম। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মাত্রার ৪৫ গুণ।

এই সংকট শুধু বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। গবেষণা দলের সদস্য ও নরউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেথ ফ্রিসবি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যেও আর্সেনিকের তীব্র প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তিনি দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেন, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আর্সেনিক ছড়িয়ে পড়ে, তা পশ্চিমবঙ্গেও ছড়িয়ে পড়বে। ড. ফ্রিসবি বলেন, আর্সেনিক বিষের প্রভাব বাংলাদেশে আবিষ্কৃত হওয়ার ১১ বছর আগেই পশ্চিমবঙ্গে উপমহাদেশের প্রথম হিসেবে শনাক্ত হয়েছিল।

এই আবিষ্কার বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্যই জরুরি বার্তা। দীর্ঘ সময় ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে ক্যান্সারসহ নানা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
এই গবেষণা প্রতিবেদন সম্পর্কে ইসলামিক রিলিফের দারিদ্র্য হ্রাস বিষয়ক সিনিয়র নীতি উপদেষ্টা জেমি উইলিয়ামস বলেন, কীটনাশক দূষণের কারণে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে।

দাতব্য সংস্থাটি বর্তমানে দেশে অনিরাপদ পানীয় জল নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। বাংলাদেশে অনেক মানুষ ভূমিহীন এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় বসবাস ও চাষাবাদ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে দেশটিতে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে।

বাংলাদেশে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাবের পেছনে সব থেকে বেশি দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। এ কারণে ক্রমশ বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা। পাশাপাশি ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায়ই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এতে বিপর্যয়কর বন্যা সৃষ্টি হয়। বর্ষা মৌসুমে প্রবল বর্ষণের কারণে বন্যার প্রকোপ আরও বেড়ে যায়।

এই কারণগুলো নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী ১৬৫ মিলিয়ন বাংলাদেশির জন্য নিরাপদ পানিকে দুর্লভ করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গবেষকরা ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ রোধে পানি পরিশোধন প্রযুক্তি এবং অবকাঠামো সহ সম্ভাব্য প্রতিকারগুলো দ্রুত নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]