03/15/2025 জাপায় এবার লাঙ্গল নিয়ে টানাটানি, রওশনপন্থিদের চিঠি ইসিতে
রাজটাইমস ডেস্ক:
৩০ জানুয়ারী ২০২৪ ১১:৩৪
এবার দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’র নিবন্ধন নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে জাতীয় পার্টিতে। গত রোববার দলটির প্রধান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন করে জাপা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন এরশাদপত্নী রওশন। আগামী দুই মার্চ নতুন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে নতুন মহাসচিবও নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। নতুন কমিটি ঘোষণার পরদিনই নির্বাচন কমিশনে লাঙ্গল প্রতীকে দল পরিচালনার চিঠি দেওয়া হয়েছে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পক্ষ থেকে।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে জাতীয় পার্টির নিবন্ধন নং-১২। প্রতীক লাঙ্গল। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদের ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর নাম উল্লেখ রয়েছে। ৬৬, পাইওনিয়ার রোড, কাকরাইল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তথ্য আছে ইসির রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত তালিকায়।
নির্বাচন কমিশনে রওশনপন্থিদের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘বর্তমানে নিবন্ধন নম্বর-১২ (ইসির দেওয়া) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এবং মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশিদ জাতীয় পার্টির দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করা হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।’
এর অর্থ দাঁড়ায়—জাতীয় পার্টির নামেই লাঙ্গল প্রতীকে একই নিবন্ধনে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। নির্বাচন কমিশন বলছে, একই নামে বা দলীয় প্রতীকে দুটি দল পরিচালনার সুযোগ নেই। যে কারণে প্রতিটি দলের পৃথক নিবন্ধন রয়েছে। তবে জাপার একাংশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি উভয়পক্ষকে শুনানির জন্য ডাকবে। এ ব্যাপারে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই দলের নেতৃত্ব নিয়ে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের (দেবর-ভাবি) মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একপর্যায়ে রওশনপন্থিরা দুই বছর আগে দলের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা দিয়ে আবারও পিছু হটলেও নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। রওশনপন্থিদের মধ্যে ৬০ জনকে মনোনয়ন দেওয়ার তালিকা পাঠানো হয় জি এম কাদেরের কাছে। কিন্তু মাত্র তিনজনকে মনোনয়ন দিতে সম্মত হন জি এম কাদের। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন রওশন। যদিও তার অনুসারীদের তিনজন স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করলেও বিজয়ী হতে পারেননি।
সবশেষ দলে বহিষ্কারের ঘটনা রওশনপন্থিদের নতুন করে উজ্জীবিত করে। অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আবারও শুরু হয় নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া। যার ধারাবাহিকতায় রোববারের ডাকা বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে রওশন এরশাদ বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রের ২০-এর ১ ধারা অনুযায়ী জি এম কাদের ও চুন্নুকে অব্যাহতি প্রদান করলাম।’ এর পরপরই দলীয় প্রতীক দখলের নতুন যুদ্ধ শুরু হয়।
সোমবার জি এম কাদের অংশ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য শুনীল শুভ রায়ের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রওশনপন্থিদের চিঠি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যায়।
তাদের চিঠিতে বলা হয়, ২৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং একাদশ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবনে জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীর এক জরুরি বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই সভায় ‘তুমুল হর্ষধ্বনি ও করতালির মধ্যে উপস্থিত নেতাদের ঐকান্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে’ জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রওশন এরশাদ দলের গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। দলের চেয়ারম্যান তার ক্ষমতাবলে কাজী মো. মামুনুর রশিদকে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব নিয়োগ করেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ দলের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিইসিকে অনুরোধ করা হয়।
রওশনপন্থি দলের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, রওশন এরশাদ দলের চেয়ারম্যান। তিনি এখন থেকে দল পরিচালনা করবেন। প্রয়োজনীয় সব আইন ও বিধি অনুযায়ী রওশন এরশাদ দল পরিচালনা করার কথা জানিয়ে মামুন বলেন, দল যেহেতু আমাদের, সেহেতু প্রতীকও আমাদের কাছে। এ নিয়ে দ্বিধা-বিভক্তির কিছু নেই। পার্টির যিনি চেয়ারম্যান, তার কাছেই প্রতীক থাকবে। এটিই স্বাভাবিক। আমরা নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু ইসিতে জানিয়েছি। জি এম কাদেরপন্থিদের এ নিয়ে যদি কোনো কথা থাকলে, তাহলে তারা আদালতে যেতে পারে বলেও পরামর্শ দেন তিনি।
জানা গেছে, গত বছরের জুনে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১ ধারা উল্লেখ করে প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ তার সমর্থিত প্রার্থীর জন্য ইসিতে লাঙ্গল প্রতীকের আবেদন করেন। শুনানিতে তা নাকচ হয়ে যায়। ফলে লাঙ্গল প্রতীকে কোন প্রার্থী দিতে পারেননি রওশন। এরপরও নিজের বলয়ে লাঙ্গল প্রতীক নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
নিবন্ধিত দলের নামে আরেকটি দল পরিচালনা সম্ভব কি না—এমন প্রশ্নে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আরপিও অনুযায়ী এখন সব দলকে কাউন্সিলের পর কমিটি ও গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়। সে অনুযায়ী ইসির ওয়েবসাইটে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের নাম রয়েছে।
নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দলকে অন্য পক্ষ নিজেদের দাবি করে একই নামে পরিচালনার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এরকম আবেদন এলে দলের গঠনতন্ত্র দেখা হয়। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পরিবর্তনে দলের গঠনতন্ত্রে কী রয়েছে, তা যাচাই-বাছাই করা হবে। তারপর উভয়পক্ষকে শুনানির জন্য ডাকা হবে। মূলত পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান ইসির এই কর্মকর্তা।