04/19/2025 চাঁদা না পেয়ে গৃহবধূকে পেটালেন কৃষকলীগ নেতা
রাজটাইমস ডেস্ক:
১৮ মার্চ ২০২৪ ২০:০৬
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাড়ি নির্মাণের চাঁদা না পেয়ে এবার বাড়ির মালিক গৃহবধূকে পিটিয়েছেন স্থানীয় কৃষকলীগ নেতা। এতে কৃষকলীগ নেতাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী।
অভিযুক্ত কৃষকলীগ নেতার নাম বদরুল আলম শিপলু। এ ঘটনায় আহত গৃহবধূ রেবেকা সুলতানা ডলি উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের মাধবপাশা গ্রামে দম্পতি আমির হোসেনের স্ত্রী।
ডলির দাবি বাড়ি নির্মাণের শুরু থেকেই নানা অজুহাতে শিপলু ও তার সহযোগীরা বিভিন্নভাবে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা না দেওয়ায় প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছিলেন তারা।
থানায় অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আমির ও ডলি দম্পতি নিজেদের উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জমিতে একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করেন। ভবন নির্মাণের পর থেকেই এলাকার কিছু লোক চাঁদা দাবি করে আসছিল। গত ১৪ মার্চ বৃষ্টির সময় পাহাড়ি ঢলে ঘরের ক্ষতি হবে এমন শঙ্কায় বাড়ির পেছন ঘেঁষে খালের পাড়ে গাইড ওয়ালের কাজ শুরু করেন তারা। এতে ওই সংঘবদ্ধ চক্রটি এসে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
টাকা না দেওয়ায় ওইদিন দুপুরে গৃহবধূ রেবেকা সুলতানার বাড়িতে গিয়ে হুমকি-ধমকি, ভাঙচুরসহ নানা ভয়ভীতি প্রদান করে কৃষকলীগ নেতা বদরুল আলম শিপলু (৪৮), তার ভাই আকলিছ মিয়া (৩৫), বর্তমান মেম্বার মোহাম্মদ আলী (৫০), জাহাঙ্গীর মিয়া (৫৫), সেলিম মিয়া (৫০)।
আহত ডলি বলেন, শিপলু ও তার ভাই আকলিছ আমার বাড়িতে এসে রড, লাঠি, ইটসহ দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র, হেলমেট দিয়ে আমাকে মারধর করেছে। রাস্তার লোকজনের সামনে ইট দিয়ে মেরেছে। এও বলেছে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যসহ আমার বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে। আমাকে বলেছে যদি এ বিষয়ে কোনো প্রকার মামলা মোকাদ্দমা করি তাহলে আমাকে ও আমার স্বামী সন্তাদের প্রাণে হত্যা করবে। তাদের ভয়ে আমি পরিবার নিয়ে শঙ্কিত।
গৃহবধূ রেবেকা সুলতানা বলেন, আমি যখনই আমার বাড়িতে কাজ শুরু করি তাদের সঙ্গে কথা বলে চাঁদা না দেওয়ায় শিপলুর নেতৃত্বে মুখোশধারী আইসা আমার বাড়িতে ভাঙচুর করে। আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এখানে আমি একা। দুই মেয়ে নিয়ে থাকি।
রেবেকা বলেন, শিপলু অত্যন্ত ভয়ংকর ও চতুর প্রকৃতির লোক। তার মা ও ভাইকে আমার কাছে প্রস্তাব দিয়ে পাঠায় ৫ লাখ টাকা দিলে ঝামেলা হবে না। বলেছে এখন ৫০ হাজার দিতে। বাকিটা পরে দিতে। আমি বলেছি তার তো এখানে কোনো জমি নেই। আমার বাড়ির পাশের লোকদের সাথে ঝামেলা নেই। তাহলে তার এত মাথাব্যথা কেন। আমরা তো কারও জমি দখল করছি না। আমাদের এখানে অপরাধ কী। সে কেন আমার কাছে চাঁদা চাইবে। ভাঙচুর করবে। আমি একজন নারী মানুষের ওপর হাত তুলবে। মারধর করবে।
ঘটনার পর ৯৯৯ কল করে পুলিশকে আমি নিয়ে এসেছি। পুলিশ কোনো কাজ বন্ধ করেনি। ইউএনও সাহেবও আমাকে কোনো নোটিশ করেননি। পুলিশ আসার পরে কাজ শুরু করি। পরে ওরা আবার কাজ বন্ধ করে দেয়।
ডলির স্বামী আমির হোসেন বলেন, আমার স্ত্রীর পৈতৃক সম্পত্তিতে কয়েক বছর আগে বাড়িটি নির্মাণ করি। এরপর থেকেই একটি চক্র চাঁদা না দেওয়ায় আমাদের পেছনে লেগে যায়। সে বলে, সরকারি রাস্তার জায়গা আমাদের বাড়িতে আছে। কিন্তু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ কেউ সার্ভে করে এর সত্যতা পাননি।
পুলিশের কাছে আমরা অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু থানায় গিয়ে দেখি তারা আমাদের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখিয়েছি। কীভাবে আমাদের বাসায় আমার স্ত্রীর ওপর হামলা করেছে।
তিনি আরও বলেন, এই বদরুল আলম শিপলু কখনো যুবলীগ, কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো কৃষকলীগ নেতা পরিচয় দেয়। এমপি তার মামা বলে এমপির সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি তুলে সাধারণ মানুষের কাছে এমপি সাব তার ঘনিষ্ঠ বলে প্রচার করে বেড়ায়। এভাবে সে মানুষকে প্রতিনিয়ত পুলিশের ভয় দেখিয়ে ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও হয়রানি করে।
অভিযুক্ত বদরুল আলম শিপলু বলেন, এখানে চাঁদাবাজির কোনো প্রশ্নই উঠে না। এলজিইডির রাস্তা দখলের অভিযোগ আছে ওই মহিলার বিরুদ্ধে। মহিলাকে কোনো মারধর করা হয়নি। আমার গ্রামের মানুষের বিরুদ্ধে গেলে প্রতিবাদ করাটা কী অন্যায়।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি বিনয় ভূষণ রায় বলেন, এখানে বাড়ির পেছনে সরকারি জমির খালে স্থাপনা নির্মাণের জন্য এলাকার মানুষের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশে পুলিশ পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করা হয়।