03/15/2025 রাত পোহালেই রেলে গুনতে হবে বাড়তি ভাড়া, যাত্রীদের ক্ষোভ
রাজটাইমস ডেস্ক:
৩ মে ২০২৪ ২০:৩২
রেলে চলাচলকারী যাত্রীরা এতদিন দূরপাল্লার যাত্রায় যে রেয়াতি সুবিধা ভোগ করতেন তা আগামীকাল শনিবার (৪ মে) থেকে আর থাকছে না। ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো না হলেও রেয়াতি সুবিধা উঠে যাওয়ায় আগামীকাল থেকে যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। এতে অনেক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা রেয়াতি সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরাও রেয়াতি সুবিধা বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।
বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বাদে অন্য রুটের যাত্রীরা ১০০ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণে ভাড়ায় ২০ শতাংশ রেয়াত পান। ২৫১ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরত্বে রেয়াত পান ২৫ শতাংশ। ৪০০ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণে ৩০ শতাংশ রেয়াত পান।
গত মাসে বাংলাদেশ রেলওয়ে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি প্রদান করা হয়। ২০১২ সালে ‘সেকশনাল রেয়াত’ রহিত করা হলেও দূরত্বভিত্তিক রেয়াত বলবৎ থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে ভাড়া বৃদ্ধি না করে শুধু বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পরিপ্রেক্ষিতে সকল প্রকার যাত্রীবাহী ট্রেনে বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি আগামী ৪ মে ২০২৪ থেকে কার্যকর করা হবে।
রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেছেন, রেলের ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে বলে যে খবর প্রচারিত হয়েছে তা সঠিক নয়। মূলত ভাড়া বাড়ানো নয়, রেয়াতি সুবিধা তুলে নেওয়া হচ্ছে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মতোই করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
তবে রেয়াতি সুবিধা তুলে নেওয়ার খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। তাদের একজন হাবিবুন নবী। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই যুবক বলেন, বর্তমানে সব কিছুর দাম বাড়ছে। মানুষের ওপর জুলুম হচ্ছে। আবার এদিকে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের হাতে চলে যায়। সাধারণ যাত্রীরা টিকিট পায় না। এই অবস্থায় রেয়াতি সুবিধা বহাল রাখা উচিত। রেল খাতে যে দুর্নীতি হয় তা কমানোর দিকে কর্তৃপক্ষ নজর দিলে এর চেয়ে বেশি উপকার হবে।
নিম্ন আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে আগের ভাড়া পুনর্বহালের দাবি জানান নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করা সিরাজগঞ্জের ইউসুফ বিশ্বাস। বলেন, রেলের ভাড়া এখনো তুলনামূলক কম। এখন সেটা বাড়লে তা নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে। কোনোভাবেই এই মুহূর্তে রেলে ভ্রমণের খরচ বাড়ানো উচিত নয়।
রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রেলওয়ে অব্যাহতভাবে লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দেননি প্রধানমন্ত্রী। এজন্য তার নির্দেশনায় লোকসান কমাতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যথায় রেলসেবার মান উন্নয়ন করা সম্ভব নয় বলে জানান মহাপরিচালক।
রেয়াত সুবিধা প্রত্যাহার করলে জনসাধারণের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও তা মানতে নারাজ যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। তাদের একজন অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান। তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, মোট ভাড়ার ওপর রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের প্রভাব পড়বে। কিন্তু নীতিনির্ধারকরা বলার চেষ্টা করছেন রেলের ভাড়া বাড়ছে না। আসলে রেলের ভাড়া বাড়ছে। এর প্রভাব সাধারণ জনগণের ওপর পড়বে।
এই বিশেষজ্ঞের মতে, এখনো উন্নত বিশ্বে ট্রেন ভ্রমণে যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়। গণপরিবহন হিসেবে রেলের এই সুবিধা বাংলাদেশেও বহাল রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।