21695

09/17/2024 মোদির জনপ্রিয়তাকে টেক্কা দিচ্ছেন, কে এই ধ্রুব রাঠি

মোদির জনপ্রিয়তাকে টেক্কা দিচ্ছেন, কে এই ধ্রুব রাঠি

রাজটাইমস ডেস্ক:

৩১ মে ২০২৪ ১৭:১০

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইউটিউবের সাবস্ক্রাইবার (গ্রাহক) ২ কোটি ৩০ লাখ। ভিডিও শেয়ারিং এই প্ল্যাটফর্মে বর্তমানে ভারতে তাঁর সমান আর কারও সাবস্ক্রাইবার নেই। মোদির পরেই রয়েছেন ২৯ বছরের এক তরুণ। ধ্রুব রাঠি নামের এই ইউটিউবারের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা দুই কোটির বেশি। ইউটিউবে দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীরও এত অনুসারী নেই। ধ্রুব রাঠির ভিডিওতে এমন কী জাদু আছে, যা বিশেষ করে ভারতের মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে?

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ওই বছরই দিল্লির পার্শ্ববর্তী হরিয়ানা রাজ্যের বড় কৃষক পরিবারের সন্তান রাঠি জার্মানিতে যন্ত্রকৌশল বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে যান। সেখানেই তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু। এই চ্যানেলের জন্য তিনি প্রথম ভিডিও শুট করেছিলেন তাঁর আইফোন ৫এস দিয়ে। ওই ভিডিও ছিল ভ্রমণ নিয়ে।

তবে অ্যানিমেশন কৌশল ব্যবহার করে নিজের প্রথম ভিডিওটি রাঠি বানিয়েছিলেন বেশ আগে, ২০০৩ সালে। একটি সাধারণ ওয়েবক্যাম বা ভিডিও ক্যামেরা দিয়েই সেটি বানানো হয়েছিল।

মোদির ভক্ত থেকে সমালোচক

২০১৪ সালে দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। শুরুর দিকে মোদিকে পছন্দই করতেন রাঠি, তাঁকে সমর্থনও করতেন।

২০১১ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ভারতজুড়ে আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। তখন আরও লাখ লাখ কিশোর-কিশোরীর মতো রাঠির মধ্যেও কংগ্রেসবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়। তাই ২০১৪ সালে মোদিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন রাঠি।

কিন্তু এক বছরের মাথায় বিজেপি নিয়ে রাঠির মনোভাব বদলাতে শুরু করে। ওই বছর দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টি (এএপি) দুর্নীতিবিরোধী একটি হেল্পলাইন চালু করে। কিন্তু কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা মোদি সরকার হেল্পলাইনটি নিয়ন্ত্রণে উঠেপড়ে লাগে। মূলত এ ঘটনা রাঠির চোখ খুলে দিয়েছিল। তাঁকে করেছিল বিজেপিবিমুখ; ক্রমেই তিনি হয়ে ওঠেন বিজেপিবিরোধী।

রাজনৈতিক ভিডিও

ভ্রমণ নিয়েই ইউটিউবে ভিডিও বানানো শুরু করেছিলেন রাঠি। এখনো ভ্রমণ নিয়ে তিনি ভিডিও তৈরি করেন। ঐতিহাসিক কোনো স্থান, ঘটনা বা স্থাপত্যের নিদর্শন ইত্যাদি নিয়ে তাঁর বানানো ভিডিওগুলোর দর্শক আকাশছোঁয়া। তবে রাজনৈতিক ভিডিওগুলোর কারণে তিনি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।

কিছুটা ভৌতিক ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড দিয়ে শুরু হওয়া রাঠির প্রতিটি রাজনৈতিক ভিডিওতে মোদি সরকারের ফাঁকা বুলি, দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। সঙ্গে থাকে অ্যানিমেশনের মনোরম কাজ ও গ্রাফিকসের দুর্দান্ত উপস্থাপনা।

২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাঠি প্রথম রাজনৈতিক ভিডিওটি আপলোড করেন। নিজের মুঠোফোনে ধারণ করা এই ভিডিওতে বিজেপির আইটি সেল, ভুয়া তথ্য, সম্পাদিত ছবি, ভুল উদ্ধৃতি ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন হরিয়ানার এই তরুণ।

প্রথম রাজনৈতিক ভিডিও বানানোর পর গত আট বছরে রাঠি শুধু এগিয়ে গেছেন। দিনে দিনে তাঁর ভিডিওর কৌশলগত কাজ ও বিষয়বস্তু দুটিরই ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনি ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় ৬৫০টি ভিডিও আপলোড করেছেন। এসব ভিডিওর অনেকগুলো কয়েক মিলিয়ন মানুষ দেখেছে।

গোপন রহস্য

বিশাল জনসংখ্যার দেশ ভারতে অসংখ্য ইউটিউবার রয়েছেন, যাঁরা রাঠির চেয়ে অনেক বেশি দিন ধরে ভিডিও তৈরি করছেন। অনেকের বিষয়বস্তু তাঁর অনুরূপ। তাঁদের অনেকেরও কয়েক লাখ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। কিন্তু তুলনামূলক অল্প সময়ে রাঠি কীভাবে মোদির পর ভারতের দ্বিতীয় জনপ্রিয় ইউটিউবার হলেন? এমন বিশেষ কী কৌশল আছে, যা রাঠিকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে?

ভাষা: রাঠির জন্মস্থান উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে। কৃষিভিত্তিক রাজ্যটির ছেলে রাঠি তাঁর ভিডিওতে সাদামাটা হিন্দিতে কথা বলেন। বিজেপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সারা উত্তর ভারতের প্রধান ভাষা হিন্দি। গ্রাম অধ্যুষিত এ অঞ্চলে রাঠির ভিডিওগুলো বেশ জনপ্রিয়।

জাতীয়তাবাদী ভাষ্য: রাঠি একসময় মোদির সমর্থক ছিলেন। তাই বিজেপির জাতীয়তাবাদী ভাষ্যগুলো তাঁর ভালো জানা আছে। এসব ভাষ্য বিজেপি এক কাজে ব্যবহার করে। রাঠি করেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজে।

রাজনৈতিক ব্যঙ্গ লেখক আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় হরিয়ানার তরুণ রাঠির এই জাতীয়তাবাদী ভাষ্যকে একটি শক্তিশালী যোগাযোগ কৌশল বলে মনে করেন। আকাশ বলেন, তিনি জনগণের ভাষায় কথা বলেন।

আকাশ বলেন, রাঠি এমন এক ভাষায় কথা বলেন, মোদির সমর্থকদের কাছে যেটার আবেদন আছে। তাঁর এই ভাষায় কথা বলাটা শ্রোতাদের মধ্যে এই ধারণার জন্ম দেয় যে তিনি জাতীয়তাবাদবিরোধী নন; বরং তিনি ঘৃণা ও দলপূজা করার বিরোধী।

সময়ের সঙ্গে বিকাশ: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাঠির ভিডিওগুলোর মান ক্রমেই ভালো হয়েছে। কাজ করতে করতে ভুলত্রুটির মধ্য দিয়ে তিনি আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন। এখন তিনি আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর। কয়েক বছর আগেও তাঁর এই আত্মবিশ্বাস ছিল না।

অন্য দিকে সাংবাদিক না হয়েও নিজের ভিডিওতে সাংবাদিকসুলভ বিভিন্ন বিষয় বজায় রাখতে চেষ্টা করেন রাঠি। বিশেষ করে তথ্য-উপাত্তের সত্যতা নিয়ে তিনি বিশেষভাবে সতর্ক থাকেন।

রাঠির ভাষায়, ‘যেকোনো গঠনমূলক সমালোচনা আমি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করি। শুরুর দিকের ভিডিওগুলোতে ব্যক্তিগত মতামতের সঙ্গে বিভিন্ন তথ্য মিলিয়ে ফেলতাম। বর্তমানে আমি তা করি না।’

টিম গঠন: ২০২০ সাল পর্যন্ত ভিডিওর জন্য গবেষণা, স্ক্রিপ্ট তৈরি, শুটিং ও সম্পাদনা থেকে শুরু করে সবকিছুই করতেন রাঠি নিজে। সবকিছু একা করার দুর্বলতা ছিল, এতে ভুল বেশি হতো।

বর্তমানে একটি দল তৈরি করেছেন রাঠি। এখন গবেষণা, স্ক্রিপ্ট তৈরি, ভিডিও সম্পাদনার জন্য আলাদা আালাদা পেশাদার কর্মী রেখেছেন তিনি। এসবের ফলে তথ্য নির্ভুলের পাশাপাশি ভিডিওর মানও সার্বিকভাবে অবিশ্বাস্য রকমের উন্নত হয়েছে বলে মনে করেন রাঠি।

উপস্থাপনার স্টাইল: সবকিছুতে স্টাইল একটি বড় ভূমিকা রাখে। রাঠির আলাদা করে চোখে পড়ার মতো বা সিগনেচার স্টাইল হলো, সব সময় এক রঙের টি-শার্ট গায়ে দিয়ে ভিডিও তৈরি করা। আর ‘নমস্কার দোস্ত’ বা স্বাগতম দোস্তরা সম্ভাষণের মাধ্যমে ভিডিও শুরু করা তাঁর আরেকটি সাধারণ কৌশল।

সহজ করে বলা: রাজনীতির মতো জটিল বিষয়কে সহজে মজা করে উপস্থাপন করা রাঠির আরেকটি শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য। জটিল বিষয় সহজ করতে গিয়ে তিনি কিন্তু তথ্য ও ভিডিওর সার্বিক মান নিয়ে কোনো আপস করেন না।

আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মানুষের বড় একটা অংশ নির্ভুল তথ্য জানতে চায়। রাঠির ভিডিওগুলো সেই চাহিদা পূরণ করে। তাই বিজেপির অপপ্রচারমূলক আইটি সেল তাঁর কাছে মার খেয়ে যাচ্ছে।

তবে রাঠি নিজে মনে করেন, নিজের ব্যক্তিগত, আবেগময় ও পাশের বাড়ির ছেলের মতো স্টাইল তাঁর ভিডিওগুলো জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে কিছুটা হলেও ভূমিকা রেখেছে। এসবের কারণে দর্শকেরা সহজে তাঁর সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারেন। এই স্টাইল তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। তা ছাড়া এই স্টাইলের কারণে তাঁকে দর্শকেরা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলেও মনে করেন না বলে বিশ্বাস করেন ধ্রুব রাঠি।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]