03/15/2025 রাজশাহীতে কামড় দেওয়া রাসেল ভাইপার নিয়েই হাসপাতালে কৃষক
রাজটাইমস ডেস্ক:
৩১ মে ২০২৪ ১৮:১৪
রাজশাহীর চারঘাটে কাজ করার সময় রাসেল ভাইপার কামড় দেয় হেফজুল আলীকে। সে সময় তিনি সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। পরে সেই সাপ নিয়ে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
শুক্রবার (৩১) মে সকাল ১০টার দিকে উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। হেফজুল (৪৫) পিরোজপুর গ্রামের জসিম প্রামাণিকের ছেলে।
জানা গেছে, সকালে কৃষি জমিতে ধান কাটার কাজ করছিলেন হেফজুলসহ কয়েকজন। ধান কাটার একপর্যায়ে হঠাৎ একটি রাসেল ভাইপার হেফজুলের গলায় কামড়ে দেয়। এতে হেফজুল ভয় না পেয়ে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। এ সময় হেফজুলকে দ্রুত চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে তাকে সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বেলা ১১টার দিকে তিনি একটি সাপসহ রামেক হাসপাতালে চলে আসেন। তখনো তিনি মৃত রাসেল ভাইপার সাপের লেজ ধরে ঝুলিয়ে ধরেছিলেন। এ সময় তিনি নিজেই কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে ভর্তি হন হাসপাতালটির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তার এমন কাণ্ডে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেকে অবাক হয়েছেন।
আহত হেফজুল জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় ধানক্ষেতে কাজের জন্য গেলে একটি সাপ তাকে কামড় দেয়। এ সময় তিনি আতঙ্কিত না হয়ে তিনি নিজেই সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। পরে সাপসহ স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গেলে তাকে রাজশাহী মেডিকেলে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
পরে তিনি রামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। তার ধারণা, চিকিৎসকরা সাপ দেখলে দ্রুত সঠিক ওষুধ (এন্টিভেনম) দিতে পারবেন। তাতে তার চিকিৎসা ভালো হবে এমন আশায় সাপটি তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।
রামেক হাসপাতালে চিকিৎসকরা জানান, হেফজুলের অবস্থা বর্তমানে ভালো আছে। অনেকেই সাপে দংশনের পর কবিরাজ কিংবা ওঁঝার কাছে যান, তিনি সেটি না করে হাসপাতালে চলে এসেছেন। এটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল তার।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের শুরুতে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক রোগী সাপের কামড়ে মারা গেছেন। এর আগে একই উপজেলা রাসেল ভাইপারের কামড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে জানতে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদা খানমের মুঠোফোনে কল করা হলে ফোনটি রিসিভ হয়নি।
এদিকে রাসেল ভাইপার সম্পর্কে তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক এবং বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, রাসেল ভাইপার (Russell's Viper) সাপটি ‘চন্দ্রবোড়া’ বা ‘উলুবোড়া’ নামেও পরিচিত। আইইউসিএনের ২০১৫ সালের লাল তালিকা অনুযায়ী রাসেল ভাইপার বাংলাদেশে সংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে।
ধানক্ষেতে রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি নিয়ে জোহরা মিলা বলেন, ইঁদুর ও টিকিটিকি রাসেল ভাইপারের প্রিয় খাবার। যেহেতু ফসলের ক্ষেতে ইঁদুরের উৎপাত বেশি তাই খাবারের খোঁজে ক্ষেতে গিয়ে হাজির হয় রাসেল ভাইপার। তাছাড়া বসতবাড়ির আশেপাশে প্রাণীদুটির (ইঁদুর ও টিকটিকি) প্রাচুর্যতা বেশি থাকায় খাবারের খোঁজে রাসেলস ভাইপার অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে এবং মানুষকে দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কখনও কখনও আক্রমণও করে।
জোহরা মিলা বলেন, পদ্মার চরাঞ্চল, নদী অববাহিকা ও বরেন্দ্র এলাকায় উঁচু-নিচু ঘাস বা ফসলের জমিতে এই সাপটি বেশি দেখা যায়। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে এর প্রজননকাল। সাপটি ডিম দেওয়ার বদলে সরাসরি ৬-৬৩টি বাচ্চা প্রসব করে। দেখতে মোটা, লম্বায় ২ থেকে ৩ ফুট দৈর্ঘ বিশিষ্ট এই সাপের গায়ে ছোপ-ছোপ গোলাকার কালো দাগ থাকে। ঘন ঘন জিহ্বা বের করে হিসহিস শব্দ করে। সাপটি সম্পর্কে যার ধারণা নেই তিনি এটিকে অজগর ভেবেই ভুল করবেন।
জোহরা মিলা বলেন, এই সাপের বিষ ‘হেমোটক্সিন’ হওয়ায় মাংস পঁচেই আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সাপটির কবল থেকে বাঁচতে সচেতনতাই কার্যকর পথ। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী সাপটি সংরক্ষিত।