04/20/2025 বগুড়ায় নিহত ৪, দুই শতাধিক আহত, গুলিবিদ্ধ ৯০
রাজটাইমস ডেস্ক:
৪ আগস্ট ২০২৪ ২৩:৫০
বগুড়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ চারজন নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৯০ জন গুলিবিদ্ধ। তবে বগুড়ার পুলিশ সুপার নিহতদের সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেন নি।
সংঘর্ষ চলাকালে বগুড়া শহর, শেরপুর এবং দুপাঁচিয়ায় একাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি-ঘরে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়।
নিহতদের মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- জেলার কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকার শামছুল হকের ছেলে কলেজছাত্র মনিরুল ইসলাম (২২), বগুড়ার গাবতলী উপজেলার গোড়দহ এলাকার মৃত মোনা সরদারের ছেলে জিল্লুর রহমান (৪৫) ও দিনাজপুরের হিলির আনিছুর রহমানের ছেলে সেলিম (৪৫)। নিহত কলেজছাত্র মনিরুল ইসলাম নওগাঁর বদলগাছী বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। অপর দিকে সেলিম পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি বগুড়া শহরের হরিগাড়ি এলাকায় বসবাস করতেন।
গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতদের মধ্যে ৬৫ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ১৫ জনকে বগুড়া ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১০ জনকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, রোববার (৪ আগস্ট) বেলা ১০টার দিকে যুবলীগের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা এলাকায় অবস্থান নেয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে বিভিন্ন স্থান থেকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথার দিকে যাওয়া শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় এবং বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে। সংঘর্ষকালে পুলিশ টিয়ারশেল, ছররা গুলি ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। এতে শহরের বিভিন্ন স্থানে তিনজন নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। আহতদের মধ্যে অন্তত ৯০ জন গুলিবিদ্ধ হন।
সংঘর্ষ চলাকালে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়, টিএন্ডটি ভবন, আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম মোহনের কার্যালয় ও বগুড়া-৬ আসেনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুর বাসভবন ভাঙচুর চালানো হয়। পরে তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে টহলরহত সেনা সদস্যরা শহরের কালিতলা এলাকায় সংসদ সদস্য রাগেবুল আসান রিপুর গাড়িতে দেয়া আগুন নিভিয়ে ফেলে। সেনা সদস্যদের উপস্থিতিকে স্থানীয় জনতা স্বাগত জানিয়ে ‘এই মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’ বলে স্লোগান দেন।
সকালে দুপচাঁচিয়ায় সংঘর্ষকালে আন্দোলনকারীরা থানা ভবনে হামলা চালায়। তখন পুলিশ গুলি চালায়। এতে কলেজছাত্র মনিরুল ইসলাম নিহত হন। আহত হন আরও ১২ জন। তাদের মধ্যে ৮ জন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকি চারজনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে বিক্ষোভকারীরা নিহত মনিরুল ইসলামের লাশ নিয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদে হামলা চালায়। তারা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ মনিরুলের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
শেরপুরেও সংঘর্ষ চলাকালে থানা ভবনে আক্রমণের চেষ্টা চালানো হয়। পরে হামলাকারীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অন্তত চারজন নেতার বাড়িতে হামলা চালায়।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই হাসপাতালে সন্ধ্যা পর্যন্ত আহতদের মধ্যে মোট ৭৩ জন ভর্তি হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। নিহত তিনজনের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া সেলিম নামে নিহত ব্যক্তির লাশ প্রথমে হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়। কিন্তু সমর্থকরা পরে তার লাশ নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত আনসাররা বাধা দিয়েও ব্যর্থ হয়। তিনি বলেন, ওই লাশ ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জাকির হাসান জানান, ঠিক কতজন মারা গেছেন সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত তার কাছে কোনো তথ্য জানা নেই।