23952

09/19/2024 পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক

পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক

রাজটাইমস ডেস্ক

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:২৭

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে স্থবির হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে দুই দেশ সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে নীরবে কাজ করছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে টেলিফোনে যোগাযোগও হয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্ক আরও ভালো হওয়ার আশা পুনরুজ্জীবিত করেছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে দুই দেশের প্রধানদের মধ্যে বৈঠক হবে বলেও শোনা যাচ্ছে।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভের পর গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘটনাটি অবশ্যই ইসলামাবাদের জন্য ঢাকার সাথে সম্পর্ক উন্নত করার ‘দরজা’ খুলে দিয়েছে।

পাকিস্তানি এই সংবাদমাধ্যম বলছে, শেখ হাসিনার আমলে কোনো সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করাটা ছিল পাকিস্তানি কূটনীতিকদের জন্য খুবই কঠিন কাজ। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানি কূটনীতিক এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাসহ অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে টেলিফোনে যোগাযোগও হয়েছে। ব্যাপকভিত্তিক যোগাযোগের এই বিস্তৃতি দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে শীতল সম্পর্ক আরও ভালো হওয়ার আশা পুনরুজ্জীবিত করেছে।

ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মধ্যে সম্প্রতি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও প্রক্রিয়া পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়াও রয়েছে। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ ফোরাম। তবে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এই কমিশন কার্যত অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। উভয় দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০০৭ সালে।

তবে পাকিস্তান এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সেই যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের পুনরুজ্জীবন চাইছে। এ উদ্দেশ্যে সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধও করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার।

বাংলাদেশি মিডিয়ার মতে, বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ গত ১০ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকের সময়, পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছুক পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা সহজ করার দাবি জানান। এছাড়া পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইটও চালু করতে চাইছে।

এদিকে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে পাকিস্তানের হাইকমিশনার বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া যেমন পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা এবং যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

একইভাবে (বাংলাদেশের সঙ্গে) সম্পর্ক মেরামত ও উন্নত করার চলমান প্রচেষ্টায় গতি আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই মাসের শেষের দিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বৈঠক করতে পারেন।

আর এই বৈঠক হলে তা হবে বহু বছরের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে প্রথম উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক। কারণ শেখ হাসিনা কার্যত তার শাসনামলে পাকিস্তানের সঙ্গে এই ধরনের যোগাযোগ ছিন্ন করেছিলেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এই মুহূর্তে পাকিস্তান সম্পর্কে অসাধারণ মনোভাব ও শুভেচ্ছা রয়েছে।

সেই ইতিবাচক অনুভূতির দৃষ্টান্ত দেখা যায় যখন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। এছাড়াও সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ভারতীয় নীল-নকশার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে অধ্যাপক শহীদুজ্জামান পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব করেন। তিনি পাকিস্তানকে ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার এই বক্তব্য সামনে উপস্থিত দর্শকরা ব্যাপক করতালির মাধ্যমে গ্রহণ করেন। আর এটি বাংলাদেশে পাকিস্তান সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণাকে আরও শক্তিশালী করেছে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে সতর্কতার কথা বলা হয়েছে। সরকারকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে পাকিস্তান সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও ১৯৭১ সংক্রান্ত বিষয়গুলো এখনও বাংলাদেশিদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও গভীর সহযোগিতার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের দুর্বিষহ স্মৃতি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কাটিয়ে উঠতে পারে বলে বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]