25388

03/14/2025 আসাদের পতনে ইসরায়েল কীভাবে লাভবান হলো?

আসাদের পতনে ইসরায়েল কীভাবে লাভবান হলো?

রাজ টাইমস ডেস্ক

১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৫২

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে ওই অঞ্চলে জোর সামরিক তৎপরতা শুরু করেছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যেই গোলান বাফার জোন 'সাময়িকভাবে' নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পাশাপাশি সিরিয়াজুড়ে বিমান হামলাও চালিয়েছে তারা।

সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি দল দামেস্কের ২৫ কিলোমিটার কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তবে, দামেস্ক অভিমুখে এগোনোর এই খবর নাকচ করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।

আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হবার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একে 'মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ঐতিহাসিক দিন' বলে মন্তব্য করেন। অবশ্য তার বক্তব্যে সতর্কতার সুরও শোনা গেছে।

তিনি বলেন, যারা ইসরায়েলের সাথে শান্তিতে বাস করতে চায় সেই সিরিয়ানদের প্রতি শান্তির হাত বাড়িয়ে দেবে তার দেশ। তিনি বলেছেন, সিরিয়ার নতুন শক্তির সাথে প্রতিবেশীসুলভ ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনই আমাদের ইচ্ছে। কিন্তু এটি না হলে ইসরায়েলের নিজেকে রক্ষার স্বার্থে যা করার তাই করবো।

আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনের অবসান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির জন্য কী বয়ে আনবে তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে।

বিবিসি'র আন্তর্জাতিক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন জানাচ্ছেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও জো বাইডেন দুইজনই বাশার আল আসাদের পতনের জন্য কৃতিত্ব দাবি করছেন। তারা ভূমিকা রেখেছেন ঠিকই, তবে তা যতটা না পরিকল্পনা অনুযায়ী, তার চেয়ে বেশি ঘটনাচক্রে হয়েছে।

তবে এর বিনিময়ে তাদের প্রাপ্তির খাতায় যোগ হতে পারে, ইরানের সামরিক যোগাযোগ ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলার মতো অর্জন। সর্বশেষ পটপরিবর্তনের পর মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল কি আগের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে?

বিদ্রোহীদের জয় ইসরায়েলের 'হামলার ফল'?

বাশার আল আসাদ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শক্তির জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হতো ইরান এবং হেজবুল্লাহকে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে হামলা করলে গাজা যুদ্ধের সূচনা হয় যা লেবাননেও ছড়িয়ে পড়ে।

যার প্রভাব পড়ে আসাদের সহযোগী হেজবুল্লাহর ওপর। হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হন। বছরব্যাপী লড়াইয়ের পর গত ২৭ নভেম্বর হেজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

সেদিনই বিস্ময়করভাবে হামলা করে দ্রুত আলেপ্পো দখল করে নেয় হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএস এর নেতৃত্বে সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠী। এর ১২ দিনের মাথায় ক্ষমতা ও দেশ ছাড়তে হলো সিরিয়ার শাসককে।

ইরান এবং হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের জোরদার হামলার 'প্রত্যক্ষ ফল' হিসেবে আসাদের পতন ঘটেছে বলে দাবি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। তিনি বলেছেন, যারা এই শোষণ ও অত্যাচার থেকে নিজেদের মুক্ত করতে চেয়েছেন তাদের জন্য এটা একটা চেইন রিঅ্যাকশনের মত কাজ করেছে।

বিবিসির আন্তর্জাতিক সম্পাদক জেরেমি বোয়েনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র ও নিরবচ্ছিন্ন সমর্থনের মাধ্যমে হেজবুল্লাহ ও ইরানকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিল ইসরায়েল। অন্যদিকে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে, আসাদকে রক্ষা করা তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে।

কিন্তু, আসাদকে কেবলই ইরানবিরোধী কৌশলের অংশ হিসেবে মোকাবেলা করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। যা থেকে স্পষ্ট, দিনকয়েক আগেও আসাদের পতন ঘটতে যাচ্ছে এমন বিশ্বাস ছিল না তাদের, অভিমত জেরেমি বোয়েনের।

গোলানের নিয়ন্ত্রণ

গোলান মালভূমি দামেস্কের ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত। পাথুরে জায়গাটি আয়তনে বেশি বড় নয়, মাত্র এক হাজার বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু এর কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। উচ্চতার কারণে এখান থেকে রাজধানী দামেস্ক শহর, এবং দক্ষিণ সিরিয়ার একটি বড় অংশ স্পষ্ট দেখা যায়।

সামরিক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য এটি আদর্শ স্থান। তাছাড়া পার্বত্য এলাকা বলে কোনো সম্ভাব্য আক্রমণের পথে একটা চমৎকার প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবেও কাজ করে গোলান।

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে সিরিয়ার সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধের সময় গোলান দখল করে এবং ১৯৮১ সালে একতরফাভাবে এটি নিজেদের সাথে যুক্ত করে নেয়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটিকে স্বীকৃতি না দিলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের মেয়াদে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র এর স্বীকৃতি দেয়। দখলের পর থেকে গোলানে ৩০টির বেশি ইহুদি বসতি স্থাপিত হয়েছে যাতে আনুমানিক ২০ হাজার মানুষের বসবাস।

বিদ্রোহীরা আসাদকে উৎখাতের পর, গত সোমবারই গোলানের বাফার জোন অর্থাৎ যেখানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা ছিল সেখানে নিজের সৈন্যদের প্রবেশের ছবি প্রকাশ করে ইসরায়েল। গোলানে ইসরায়েলে নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধিকেও দেশটির সুবিধার তালিকায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

গোলানে ইসরায়েলের দখলের স্বীকৃতি দানকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যের কুশীলবরা তাদের তৎপরতাকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের অনুপাতেই সাজাবেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]