04/19/2025 আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত পথ-প্রান্তর
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ জানুয়ারী ২০২৫ ১৪:৪৬
দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ৯টায় শহীদ সাকিব আনজুমের গর্বিত পিতা মাইনুল হক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এতে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও থানা ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এসময় লাখো কর্মীদের "আল্লাহু আকবার" ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজশাহী নগরীর পথ-প্রান্তর।
দেশে ন্যায়বিচার, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা বিষয়ে দিক নির্দেশনা পেতে রাজশাহী জেলা বিভিন্ন অঞ্চলের নেতা-কর্মীরা ভোর থেকেই দলে দলে মাদ্রাসা মাঠে উপস্থিত হতে থাকেন। এসময় নেতাকর্মীদের মাঝে ছিল উচ্ছ্বাস ও আনন্দের আমেজ। রাজশাহী নগরীর মাদ্রাসা মাঠ থেকে শুরু করে সাহেব বাজার বর্ণালী মোড়, লক্ষিপুর পার হয়ে সমাবেশ ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া নগরীর যানযট এড়াতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যানবাহন সমূহ তেরখাদিয়া মহিলা স্টেডিয়াম, ভদ্রা এবং কাশিয়াডাঙ্গা ও তালাইমারি এলাকায় পার্কিং করে রাখা হয়।
এদিকে শনিবার সকাল ৯ টার দিকে রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে সম্মেলন শুরু হবার কথা থাকলেও শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে আনেক নেতা-কর্মীরা রাজশাহী আসেন। আর শনিবার ভোর থেকেই জেলার পবা, মোহনপুর, তানোর, গোদাগাড়ী, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট ও বাগমারা উপজেলা থেকে কর্মী সম্মেলনে দলটির নেতাকর্মীরা যোগ দেন। এছাড়া মহানগরী ১২ থানা এবং ৩০টি ওয়ার্ড থেকে ব্যানার, ফেস্টুন ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা হাতে পৃথক মিছিল নিয়ে সম্মেলনে আসেন নেতাকর্মীরা। আমির ডা. শফিকুর রহমানকে স্বাগত জানিয়ে নানা স্লোগান দেন তারা। নগরীর সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন শৃঙ্খলা রক্ষায়।
শিবগঞ্জ থেকে আসা আব্দুল করিম বলেন, রাজশাহীতে ১৫ বছর পর মানুষের প্রাণ ফিরেছে। মানুষ কথা বলতে পারছে। দেশের মানুষ যেন জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ভোলাহাট থেকে আসা ইমন বলেন, জামায়াতের কর্মী সম্মেলন এক মজলুমের মিলন মেলায় পরিণত হয়। এ সম্মেলন ঘিরে নগরীসহ জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সাঁটানো হয় পোস্টার, টাঙানো হয় ব্যানার ও ফেস্টুন। প্রবেশ পথগুলোতে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন তোরণ। জামায়াতে ইসলামীর এই বৃহৎ সম্মেলন কে ঘিরে 'আল্লাহু আকবার' শব্দ উঠছিল মুখরিত হয়ে উঠে মাদ্রসা মাঠসহ নগরীর বিভিন্ন অলি-গলি। এই দৃশ্য দেখে মানুষের হৃদয়ও প্রফুল্লিত হয়ে উঠে। সম্মেলনকে ঘিরে রাজশাহী নগরীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
রাজশাহী মহানগরীর আমির ড. মাওলানা কেরামত আলীর সভাপতিত্বে এই সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম, রাজশাহী আহবায়ক মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী বলেন, সামনে আসছে সেই দিন,যখন কালেমার পতাকা উঠবে। ইসলামী শাসন কায়েম হবে। আমরা সকল ইসলামী দল বড় ভাই, মেজ ভাই, ছোট ভাই। মানব রচিত সংবিধান বাদ দিয়ে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করতে হলে সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে।
পরে ১০ টা ৪০ মিনিটে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান মঞ্চে আসন গ্রহন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘শহীদরা আমাদের জাতীয় সম্পদ, পরম সম্মানের পাত্র। যারা শহীদ হয়েছে, আমরা তাদের দলের, সবাই আমাদের দলের মানুষ। তারা জাতীয় সম্পদ, জাতীয় বীর, মাথার ওপরে শ্রদ্ধার সাথে তুলে রাখতে চাই।’ এ সময় তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়লে মাঠ জুড়ে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। তিনি বলেন, ক্ষমতা আল্লাহপাক দান করেন আবার ক্ষমতা তিনিই কেড়ে নেন। মুমিনরা আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করেনা। ফ্যাসিষ্ট সরকার অসংখ্য ভাইকে আহত ও গুম করা হয়েছে, ভিটেবাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়েছে। এ সময় তিনি কর্মীরা উদ্দেশ্যে বলেন যারা একবারের জন্যও নির্যাতিত হয়ে জেলে গেছেন তারা হাত তুলে দেখান। এসময় দেখা যায় অল্প সংখ্যক ব্যক্তিছাড়া মঞ্চ থেকে মাঠ পর্যন্ত সকলে হাত তুলে ধরলে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের নির্যাতনের এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতরণা হয়। পরে আমীরে জামায়াতের বক্তব্য শেষে নেতাকর্মীরা হাসি-মুখে সমাবেশ স্থল ত্যাগ করেন।