25846

03/14/2025 যুদ্ধবিরতির পর বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে হাজারো ফিলিস্তিনি

যুদ্ধবিরতির পর বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে হাজারো ফিলিস্তিনি

রাজ টাইমস ডেস্ক

২০ জানুয়ারী ২০২৫ ০৯:৩২

কয়েক ঘণ্টা বিলম্ব হলেও টানা ১৫ মাসের যুদ্ধের পর গাজায় নতুন একটি যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে রোববার সকালে। স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১১টায় এই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। হামাস প্রথম দফায় তিন নারী ‘জিম্মি’র তালিকা প্রকাশের পরই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

এর আগে ‘জিম্মি’দের তালিকা না পাওয়ায় যুদ্ধবিরতি পিছিয়ে দেয় ইসরাইল।

হামাসের নাম প্রকাশের বিলম্বের মধ্যেই স্থানীয় সময় সকালে গাজায় বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এতে অন্তত ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পরে হামাস এক টেলিগ্রাম পোস্টে ইসরাইলের তিনজন নারী পণবন্দীর নাম প্রকাশ করেছে। যাদের যুদ্ধবিরতির চুক্তির আওতায় প্রথম ধাপে মুক্তি দেয়া হবে।

ওই তিনজন পণবন্দীর তালিকা প্রকাশের পরই সোয়া ১১টায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

স্থানীয় সময় দুপুরের পর ওই নারী পণবন্দীদের ফেরত আনতে রেডক্রসের একটি দল গাজার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।

তাদের মাধ্যমেই ওই তিন ইসরেইলি পণবন্দীকে হস্তান্তর করা হবে বলে ইসরাইলি মিডিয়া ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।

তবে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বলেছে ওই পণবন্দীরা কেবল দেশে ফিরলেই এ নিয়ে মন্তব্য করবে তারা।

ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরই এর বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেন দেশটির কট্টর ডানপন্থী নেতা ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির।

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর গাজার হাজার হাজার গৃহহীন বাসিন্দা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে।

যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার মাত্র ১৫ মিনিট পর রোববার গাজায় মানবিক সাহায্যবাহী ট্রাকগুলো ঢুকতে শুরু করে বলে এক্স -এর পোস্টে জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের সহায়তা বিষয়ক কর্মকর্তা জোনাথন হুইটাল।

বন্দীদের তালিকার অপেক্ষায় হামাস

হামাসের হাতে গাজায় বন্দী তিন ইসরাইলি রোমি গোনেন, এমিলি দামারি ও ডরন স্টেইনব্রেচারের তালিকা প্রকাশের পরই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

টেলিগ্রামে এক পোস্টে হামাস এই নাম প্রকাশ করে।

তাদের তিনজনই হামাসের হাতে ২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর অপহৃত হয়েছিলেন।

চুক্তি অনুযায়ী হামাস তিনজন বন্দীর নাম প্রকাশ করলেও তার বিপরীতে ইসরাইল ফিলিস্তিনি বন্দীর তালিকা প্রকাশ করেনি।

রোববার হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি ইসরাইলি বন্দী মুক্তির বিনিময়ে ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে। সেই হিসাবে আজ ৯০ জন মুক্তি পাওয়ার কথা।

ইসরাইলে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ফিলিস্তিনি বন্দীদের আজ মুক্তি দেয়ার কথা কথা ছিল।

গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে তারা বন্দী বিনিময়ের জন্য রেড ক্রসের সাথে কাজ করবে এবং মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ শহর খান ইউনুসের গাজা ইউরোপীয় হাসপাতালে পাঠানো হবে।

বন্দী বিনিময় নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী অন্যতম দেশ মিশর শনিবার জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় প্রথম ছয় সপ্তাহে মোট ১ হাজার ৮৯০ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবে।

চুক্তির আওতায় ইসলাইলি বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত ৭৩৪ জন বন্দী ও আটক ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করে।

যাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে ইসরাইল।

তবে ওই ৭৩৪ জন কী ওই ১৮৯০ জনের তালিকার মধ্যে রয়েছে কি না সেটি এখনো নিশ্চিত না।

তবে ধারণা করা হচ্ছে যে ওই ১৮৯০ জনের মধ্যে থেকেই ৭৩৪ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে ইসরাইল।

এই ৭৩৪ জনের বাইরে ইসরাইল বাকি ১ হাজার ১৫৬ জন বন্দীর বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল বন্দী বিনিময়। তবে প্রতি দফায় কতজন পণবন্দী কোন দেশ মুক্তি দিবে সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

তবে হামাস দাবি করছে যে যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী প্রতি একজন ইসরাইলি বন্দীর মুক্তির জন্য ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে।

যুদ্ধবিরতি শুরুর পর বন্দীদের পরিবার ও স্বজনেরা বিভিন্ন কারাগারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেছে।

বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে ফিলিস্তিনিরা

হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার গাজাবাসী তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে শুরু করেছেন।

সেখান থেকে তোলা বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, লাইন ধরে বাড়ির পথে হাঁটছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।

প্রকাশিত ছবিতে পোশাক এবং অন্যান্য জিনিসপত্র বহনকারী লোকদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। কেউ আবার গাড়ির কনভয়ে চড়ে বাড়ির পথে ফিরছেন। কিছু গাড়ি আবার ফিলিস্তিনি পতাকাধারী লোকে ভরা।

এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু হামাস ইসরাইলি পণবন্দীদের তালিকা পাঠানোতে দেরি করায় তারা আবার বিমান হামলা শুরু করে।

এই হামলায় ১৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গাজায় ঢুকছে সারিবদ্ধ ত্রাণের ট্রাক

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর রোববার সকালে প্রথম ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

জাতিসঙ্ঘ খাদ্য সংস্থা জানিয়েছে, তাদের ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো উত্তর দিকে জিকিম এবং দক্ষিণ দিকে কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে।

অন্য কিছু ত্রাণবাহী ট্রাককে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এক্স পোস্টে লিখেছে, ‘প্রথমে যে ট্রাকগুলো প্রবেশ করতে শুরু করেছে তাতে গমের ময়দা এবং জরুরি খাদ্য সহায়তা রয়েছে’।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর গাজাবাসী অনেকটাই ত্রাণের উপর নির্ভরশীল।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৪০টি ত্রাণের ট্রাক গাজায় সহায়তা নিয়ে যেতো।

যুদ্ধের শুরুর দিকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করার কথা।

ইউএনআরডব্লিউএ এক্স -এর এক পোস্টে জানিয়েছে, ‘আমাদের কাছে গাজায় পাঠানোর জন্য ৪ হাজার ট্রাক সাহায্য প্রস্তুত রয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেকই খাদ্য ও ময়দাবাহী ট্রাক।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে হামলা চালায়, যেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। এ সময় ২৫১ জনকে ‘জিম্মি’ করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

পরে ইসরাইল গাজায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৮০০ -এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এই হামলায়।

সূত্র : বিবিসি

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]