2631

09/20/2024 বাঁশের বেড়ায় অবরুদ্ধ শিক্ষক পরিবার

বাঁশের বেড়ায় অবরুদ্ধ শিক্ষক পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা

২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৫৩

রাজশাহীর বাগমারার একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবেশিদের চলাচলের পর্যাপ্ত রাস্তা না রাখার অভিযোগ এনে পরিবারটি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি বাড়ির তিনপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবারটি মানসিকভাবে চাপের পাশাপাশি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়ে পড়েছে।

ভূক্তভোগি ও এলাকার লোকজনের সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের বইকুড়ি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক গোলাম রহমান (৭১) সম্প্রতি নতুন বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। এর ফলে তাঁরসহ প্রতিবেশিদের চলাচলের রাস্তাটি সংকীর্ন হয়ে পড়েন। এজন্য তিনি বাড়ির অন্যপাশে তাঁর জমিতেই আরেকটি রাস্তা তৈরি করেন চলাচলের জন্য। এতে গ্রামের কিছু ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। তাঁরা আগের রাস্তাটি আরও প্রশস্থ করার দাবি জানান। এনিয়ে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে স্কুলশিক্ষকের বিরোধের সৃষ্টি হয়। বিভিন্নভাবে শিক্ষক পরিবারকে হেনেস্থা করতে থাকেন ওই ব্যক্তিরা।

এদিকে গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) গ্রামের লোকজন শিক্ষকের বাড়ির তিনপাশে বাঁশের বেড়া নির্মাণ করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবারের কোনো সদস্য যাতে বের হতে না পারে এজন্য পথে বেড়া দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় রাতে পাড়ার কিছু লোকজন বসে বৈঠক বসিয়ে শিক্ষক পরিবারকে একঘরে করে রাখেন। গ্রামের মাতব্বর আকরাম হোসেন, রহিম উদ্দিন, মুনসুর রহমান, এনামুল হক ওই বৈঠকের নেতৃত্ব দেন। তাঁদের সঙ্গে কেউ কথাবার্তা বলতে এবং মেলামেশা করতেও পারবেন না বলে ওই বৈঠকে ঘোষণা দেওয়া হয়। সে থেকে পরিবারটি একঘরে অবস্থায় রয়েছে।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে পরিবারটিকে একঘরে ও অবরুদ্ধ করে রাখা অবস্থায় দেখা যায়। বাড়ির তিনপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। শিক্ষক গোলাম রহমানের জমিতেই বেড়াগুলো দেওয়া হয়। তাঁরা যাতে বাড়ি থেকে বের হতে না পারেন সেভাবে তৈরি করা হয়েছে বেড়াগুলো। নিরুপায়ে পরিবারটি নিজবাড়িতেই অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

স্কুলশিক্ষক গোলাম রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। দুইজনেই অবসরে আছেন। বাড়িতে শুধুমাত্র তাঁরাই থাকেন। এই সুযোগে প্রতিবেশিরা তাঁদের ওপর নির্যাতন করছেন। সব নামাজ বাড়ির পাশের মসজিদে আদায় করলেও কয়েকদিন ধরে বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না। বাড়িতেই নামাজ আদায় করছেন। তাঁকে খুব হেয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, পরিবারটির সঙ্গে যা করা হচ্ছে তা অমানবিক। সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন পরিবারটিকে এখন একঘরে রাখা হয়েছে এবং মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত দম্পতির ছেলে-মেয়েরা সবাই উচ্চশিক্ষিত। মেয়েদের বিয়ে হওয়াতে স্বামীর বাড়িতে এবং এক ছেলে চাকরির সুবাদে বাইরে থাকেন।

স্কুলশিক্ষকের বড়মেয়ে জেসমিন রহমান এই জানার পর ঢাকা থেকে এলাকায় এসে বাবা-মাকে মানসিকভাবে শান্ত্বনা দিচ্ছেন। তিনিও বাবার বাড়িতে এসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সভ্য সমাজে এরকম কাজ হয় তা ভাবতে অবাক লাগছে। সামান্য বিষয় নিয়ে লোকজন এত ভয়ঙ্কর হতে পারেন তা ভাবতে পারেননি। তাঁর বাবা-মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।

মাতব্বর আকরাম হোসেন বাঁশের বেড়া দিয়ে পরিবারটির চলাচলের পথ বন্ধ ও একঘরে করে রাখার অভিযোগ স্বীকার করে বলেছেন, তিনি (স্কুলশিক্ষক) তাদের চলাচলের পথ দেননি এজন্য তাঁরা বসে এটি করেছেন। কাজটি করা ঠিক হয়েছে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঠিক হয়নি তবে এর বিকল্প কিছু দেখছেন না। লোকজন বসেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন।

এই বিষয়ে বাগমারা থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। কেউ অভিযোগও করেনি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

 

 

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]