04/24/2025 জামায়াতের ব্যানারে সব ধর্মের লোক নির্বাচন করতে পারবে: ডা. শফিকুর রহমান
রাজ টাইমস ডেস্ক
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৩৪
সুযোগ পেলে সকল ধর্মের মানুষের ন্যায্য সব দাবি পূরণ করার ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াতের ব্যানারে শুধু মুসলিমরা নির্বাচন করবে তা নয়, সমাজের যেকোনো সৎ, যোগ্য, আদর্শবান, চরিত্রবান, দেশপ্রেমিক নাগরিক নির্বাচন করতে পারবে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার সকালে জামায়াতের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জামায়াত আমির বলেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য সংসদের আসনের একটি অংশ নির্ধারিত করে যোগ্যদের নির্বাচনের সুযোগ দিলে অবশ্যই যোগ্যরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এক্ষেত্রে সংখ্যা হবে আনলিমিটেড। যিনিই যোগ্য হবেন তিনিই প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, অতীতে যারা সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে সনাতনী ভোট নিয়েছে, কিন্তু নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করেনি, তারা সনাতনীদের ধোঁকা দিয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী ধোঁকা দেওয়ার রাজনীতি করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবি উত্থাপিত রয়েছে। কেবল এই ৮ দফা দাবিই নয়, যৌক্তিক ও ন্যায্য সব দাবি পূরণে জামায়াতে ইসলামী কাজ করবে।
জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ মিলে একটি ফুলের বাগান। এই ফুলের বাগানে আর কোনো হুতুম প্যাঁচা ঢুকতে দেওয়া হবে না।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে এই জাতিকে বিশ্বের কাছে অনুসরণীয় জাতি হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে আমিরে জামায়াত বলেন, বিশ্বের সব কিছু অনুসরণ নয় আমাদেরকেও বিশ্ব অনুসরণ করবে আমরা এমন কাজ করতে পারি। সেজন্য তিনি সব ধর্মের মানুষের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।
যাদের কাজের সাথে কথা মিল নেই তাদের সমর্থন না দিয়ে যাদের কথা ও কাজের মিল রয়েছে তাদেরকে সমর্থন দিতে তিনি উপস্থিত বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি কথা ও কাজে জামায়াতে ইসলামীর মিল দেখেন তবেই জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন দেবেন।
৫ আগস্টের বিজয়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে সুষ্ঠু সমাজ গঠনে তিনি সকল ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠীর সমন্বিত সহযোগিতার আহ্বান জানান।
অমুসলিমদের উপর জামায়াতে ইসলামী কোন জুলুম করেনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের স্বীকারোক্তির জবাবে তিনি বলেন, তবে কারা অমুসলিমদের উপর জুলুম করেছে, কারা অমুসলিমদের সম্পদ দখল করেছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। যারা হিন্দুদের পক্ষের লোক দাবি করে হিন্দুদের সম্পদ দখল করেছে, হিন্দুদের উপর জুলুম করেছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করতে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
আমিরে জামায়াত বলেন, মসজিদ যদি পাহারা দিতে না হয়; তাহলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় কেন পাহারা দিতে হবে?- সব ধর্মের মানুষের সমান স্বাধীনতা তারাই দেয়নি যারা মূলত ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেছে এবং করতে চায়। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে, রাষ্ট্রের কাছে সকল মানুষ, সকল ধর্ম সমান। ইসলামে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। যে যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের নিশ্চয়তা কেবল ইসলাম দিয়েছে। তাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে সমাজের সকল ধর্মের মানুষ নিরাপদ ও স্বাধীনতা লাভ করবে। প্রত্যেক মানুষ গর্বের সাথে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে।
রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের সমাজের চতুর্দিক থেকে দেখতে হবে উল্লেখ করে আমীরে জামায়াত বলেন, অনেক রাজনীতিবিদ শুধু একদিক থেকে দেখেন। সেটা হচ্ছে নিজের দিক থেকে দেখা। এজন্য নিজ দলের কর্মীরা অপরাধ করলেও তারা সেটি দেখে না। অন্য তিনদিক থেকে না দেখার কারণেই পালিয়ে যেতে হয়, হারিয়ে যেতে হয়। এবং আগামীতেও পালিয়ে যেতে হতে পারে। তাই নিজের দিক থেকে না দেখে চতুরদিক থেকে দেখতে হবে। তবে সমাজের কল্যাণ হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিআইবি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত প্রীতি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দ্বীন বন্ধু রায়, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, ইমান্যুয়েল ব্যাপ্টিস্ট চার্জ পাস্তর তনান রায়, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল অনুপম বড়ুয়া, সিদ্ধেশরী সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি সাবেক ডিআইজি নির্বাক চন্দ্র মাঝি, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুভাশীষ বিশ্বাস প্রমুখ।