08/14/2025 রাবিতে জাতিসংঘ অনুসন্ধান প্রতিবেদন নিয়ে এইচআরএসএসের সেমিনার
রাবি প্রতিনিধি:
১৪ আগস্ট ২০২৫ ১৭:৪১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) জাতিসংঘ অনুসন্ধান প্রতিবেদন উপস্থাপন ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)-এর উদ্যোগে রবিবার (১০ আগস্ট) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ইউএন রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটর’স অফিস (ইউএনআরসিও)।
উদ্বোধনী বক্তব্যে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রত্যক্ষ করেছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নৃশংসতা—মেডিকেলে আহত শিক্ষার্থীদের উপর পুনরায় হামলা চালানো থেকে শুরু করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের গাড়ি ও হেলিকপ্টার পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা আর এই নৃশংসতা চাই না, আমরা দেশটিকে একটি সুন্দর, গণতান্ত্রিক, ন্যায়বিচারপূর্ণ ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
এ সময় জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়ক কার্যালয়ের মানবাধিকার কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসাইন বলেন, জাতিসংঘের পুরো রিপোর্ট আমি পাঁচ ভাগে ভাগ করেছি। স্বাধীন পরিবেশ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আমাদের বিষয় হলো রাষ্ট্র—রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে নাগরিকরা স্বাধীনভাবে বেসরকারি রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে এবং বিনা বাধায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। ব্যক্তিগত রাগ-বিরাগের কারণে আইনের প্রয়োগ করা যায় না।
তিনি আরো বলেন, অপরাধ মূলত দুই ধরনের—দেওয়ানি ও ফৌজদারি। রাষ্ট্র যখন এই দুই ধরনের অপরাধেই জড়িয়ে পড়ে, তখনই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। রাষ্ট্র আসলে একটি বিমূর্ত সত্তা, যা বহু সিস্টেমের সমন্বয়ে গঠিত। রাষ্ট্রের দায়িত্ব আপনার জানমালসহ সমস্ত কিছুর নিরাপত্তা দেওয়া। যখন রাষ্ট্র সেটি দিতে ব্যর্থ হয়, তখনই মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে।
এ সময় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কবৃন্দ জাতিসংঘের রিপোর্টের সুপারিশমালা পাঠ করেন।
প্রথমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা ঢালি জবাবদিহিতা ও বিচার বিভাগ সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশগুলো উপস্থাপন করেন।
দ্বিতীয়ত প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম রেজা পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্কার কমিশন-সংক্রান্ত সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করেন।
তৃতীয়ত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া আক্তার মুক্তা নাগরিক সুরক্ষা বিষয়ক সুপারিশমালা পাঠ করেন।
সবশেষে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী সজিব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার-সংক্রান্ত সুপারিশ নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন।
সবশেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘জাতিসংঘের রিপোর্টটি একেবারেই প্রফেশনালি প্রস্তুত করা হয়েছে, যা আমরা শুধু পড়িনি, বরং আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বাস্তবতা। একটি সক্ষম ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা জরুরি, কারণ তা ছাড়া কোনো ক্ষমতা বা পরিবেশ সঠিকভাবে তৈরি হবে না। শিক্ষা এবং পরিবেশের সমন্বয় ছাড়া এই কাজগুলো হাস্যকর হয়ে পড়ে।’
উপাচার্য আরো বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষার সংকটই মূল বাধা, যা আমাদের এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না। লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই; এটি ছাড়া আমাদের চিন্তা-ভাবনায় শুধু পুরনো ও আগ্রাসী মনোভাবই তৈরি হয়। নতুন কিছু শেখার প্রবৃত্তি প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের আগে মস্তিষ্কের সংস্কার দরকার, তারপর সবকিছু সম্ভব।’
সবশেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীরা জাতিসংঘ নিয়ে নানান ধরনের প্রশ্ন করেন এবং মানবাধিকার কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসাইন উত্তর প্রদান করেন।
সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন রাকসুর নির্বাচন কমিশনার ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রায়হানা শামস ইসলাম, আইন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. সাঈদা আঞ্জু, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজশাহীতে শহীদ হওয়া সাকিব আনজুমের মা, রাজশাহীর আরেক শহীদ আলী রায়হানের বাবা। এতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।