3619

04/07/2025 ম্যাচিং ম্যান ‘বনবন্ধু’র মহাপ্রতারণা

ম্যাচিং ম্যান ‘বনবন্ধু’র মহাপ্রতারণা

মহিব্বুল আরেফিন

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৩:৩৮

জাহিদুর রহমান ইকবাল। উপাধী ‘বনবন্ধু’। আর এ উপাধী পোক্ত করতে শুরুদিকে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে সকলের নজরে আসেন। এক পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের আগে ‘নিজে থেকে নেয়া উপাধী’ও যোগ করেন। মূলত বাহারী পোশাকের কারণে সহজেই সবার নজর কেড়েন। তার জুতা থেকে শুরু করে শার্ট-প্যন্ট, কোর্ট-টাই, এমনটি টুপিসহ মাথার ছাতার রঙ মিলিয়ে পোশাক পরেন। দিনে অন্তত তিনবার পোশাক পরিবর্তন করেন। এসময় তিনি জুতা থেকে শুরু করে টুপি এমনকি কলমও পাল্টান। আর প্রতিটি পোশাক মানেই একেকটি সেট। বাদ যায় না, মোবাইল ফোনের কভারও।

বাংলাদেশে মধ্যে পোশাকের দিক থেকে এ ধরনের ব্যক্তি হয়তো বিরল! আর এই বিরল ব্যক্তিকে প্রতারণার দায়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের শাহ আলী ভবন থেকে গ্রেফতার করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ। পুলিশের অভিযোগ তিনি ব্যাংক লোন করে দেওয়ার কথা বলে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। উপরন্তু মুজিব বর্ষের লোগো, প্রধানমন্ত্রীর বাণী সম্বলিত ৪০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে গাছ লাগানোর কথা বলে চিঠি দিয়ে প্রতারণা করেন ‘বনবন্ধু’ জাহিদুর রহমান ইকবাল। গত মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) গ্রেফতার করা হলেও বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুণ-অর-রশীদ তার কার্যালয়ে প্রতারণার বিষয়টি গনমাধ্যমের সামনে নিয়ে আসেন।

সৌখিনতা যার নেশা
জাহিদুর রহমান ইকবাল রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সোনাকান্দি গ্রামের আনিসুর রহমানের পুত্র। বাহারী আর বিদঘুটে পোশাকের কারণে তিনি সমালোচিত হবার পাশাপাশি আলোচিতও ছিলেন। কোন অনুষ্ঠান বা দিবস এমন কি রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও তার দিকে তাকিয়ে থাকতো পথচারীরা। ফেইস বুক পেজ থেকে দেখা গেছে, কোন শোক সভা বা দিবসে তিনি পরতেন,‘মাথার কিস্তি টুপি,চোখে চশমা, শার্ট, ব্লেজার, টাই, হাত ঘড়ি, আংটি, জুতা, এমনকি মোবাইল এবং কভার। সব কিছুতেই সাদা-কালোর মিশ্রণ। প্যান্টটি কেবল কালো রঙের। আর পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণ উৎসবে লাল-সাদার পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে জুতা, আংটি, এমনকি লাল-সাদা ছাতা নিয়ে বের হন।স্বাধীনতা দিবসে, শার্ট পড়েন সবুজ রঙ এর। সেই শার্টের কলারের রঙ আবার লাল। টাইয়ের রঙও টকটকে লাল মাথার টুপিতেও সবুজ আর লালের মিশেল। চশমাটাও আবার বাদ যাবে কেন। সেটাও লাল রঙ এর।’ আর ম্যাচি কে যতসই রাখার জন্য প্রস্তুতি হিসেবে গাড়িতে সব সময়ই এক বা দুই সেট পোশাক রাখেন।

প্রতারণার শুরু
জাহিদুর রহমান ইকবাল এর নামে স্থানীয় এলাকায় তেমন প্রতারণার কথা চাউর নেই। তবে বিগত সময় গুলোতে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের বিনা সূদে কোটি টাকার লোন পাইয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিতেন। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য কাগজপত্র তৈরিতে সহায়তা, এনজিও জন্য ঋণ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পাইয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করতেন। এক সময়
রাজশাহী-৩ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য জেলা বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।

মুজিব বর্ষের নাম ভঙিয়ে মহাপ্রতারণা
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৩০ বছর ধরে কারওয়ান বাজার এলাকায় গ্রফতারকৃত জাহিদুর রহমান ইকবাল ওরফে বনবন্ধু জাহিদুর রহমান ইকবাল প্রতারণা করে আসছে।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুজিববর্ষের লোগো ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করাই তার বর্তমানে মূল প্রতারণা। সে প্রায় ৪০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়েছে। এর মাধ্যমে সে তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে।

প্রতারক বনবন্ধু জাহিদুর ট্রি প্লান্টেশনের নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পরিচয় দিত। মুজিববর্ষে সে বিভিন্ন জায়গায় গাছ লাগাবে বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিত। এর মধ্যে কনসালটেন্ট গ্রুপ লি:, এসএম ই কনসালটেন্ট লি:, ইইএফ কনসালটেন্ট লি: এর নামে তিনটি অবৈধ কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং সিইও হিসেবে নিজেকে দাবি করে। সেসব কোম্পানির কোনও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি কথিত বনবন্ধু। পুলিশ জানায়, তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন কওে তার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ডকুমেন্টস প্রসেসিং, ব্যাংক বীমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস প্রসেসিং, টিন ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ফায়ার লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স ডকুমেন্টস প্রসেসিং ইত্যাদির নামে অসংখ্য ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।

তার কাছ থেকে ২৭০টি সীল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস প্রসেসিং ফাইল ১৮৪টি, মুজিব বর্ষের লোগো ব্যবহার করা ও প্রধানমন্ত্রী বাণী সম্বলিত চিঠি ৫০০টি, সিপিইউ দুটি, প্রিন্টার দুটি, স্ক্যানার একটি, মনিটর দুটি, ল্যাপটপ একটি, মোবাইল দুটি ও একটি টয়োটা করোলা গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।

 

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]