5546

09/25/2024 রামেকে সিটের জন্য আকুতি, বসানো হয়েছে ভ্যাপোরাইজার

রামেকে সিটের জন্য আকুতি, বসানো হয়েছে ভ্যাপোরাইজার

রাজটাইমস ডেস্ক

২৬ জুন ২০২১ ১৫:০১

উত্তরবঙ্গের করোনা রোগীদের শেষ ভরসাস্থল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানে আইসিইউ ও শয্যার সংকট চরমে। তবুও জীবন বাঁচাতে দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা ছুটে আসছেন চিকিৎসা সেবার আশায়। কেউ ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন, বেশির ভাগকেই ফিরে যেতে হচ্ছে। অবস্থা শোচনীয় শুধু তারাই পাচ্ছেন ভর্তির সুযোগ। গতকাল বিকাল পর্যন্ত ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ৬৬ জন রোগী হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শয্যা সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে ৩৫৭ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।

সবাইকেই অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে।

কেউ মুখে অক্সিজেনের মাস্ক, কেউ নাকে অক্সিজেনের নল নিয়ে করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন। প্রতিদিন এখানে প্রায় ৮ হাজার লিটার অক্সিজেন লাগে। বর্তমান অবস্থায় রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ নতুন অক্সিজেন ‘ভ্যাপোরাইজার’ বসিয়েছে। কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হলেও করোনা চিকিৎসার জন্য আইসিইউ বেডের সংকট বড় হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) সাপোর্ট না থাকায় মৃত্যু হারের লাগাম টানা যাচ্ছে না। এখানে আইসিইউ বেড যেন সোনার হরিণ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের ১১টি ওয়ার্ডকে করোনা ইউনিট করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে করোনা রোগীদের। ১, ৩, ১৫, ১৬, ১৭, ২২, ২৫, ২৭, ২৯, ৩০, ৩৯ এবং ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কোভিড রোগীরা। এর বাইরে রয়েছে আইসিইউ ও কেবিন। তবে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডকে ডেডিকেট করা হয়েছে শুধুমাত্র হাসপাতালের নার্সদের চিকিৎসার জন্য। করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালটিতে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৪২৩। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০ জন করে নার্স দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আর আইসিইউর মুমূর্ষু রোগীদের জন্য সেবা দিচ্ছেন ৪৫ জন নার্স। করোনা রোগীদের সেবা দিতে হাসপাতালের প্রায় ৮০০ জন নার্স সর্বদা প্রস্তুত আছেন। ১৪ দিন ৪০০ জন এবং তারপর বাকি ৪০০ জন পরের ১৪ দিন- এভাবে শিফট ভাগ করা রয়েছে। ২৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ওয়ার্ডগুলোতে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ রয়েছে অন্য রোগীদের।

রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রথম দিকে আলাদা বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু থাকলেও প্রথম দফা সংক্রমণ কমে আসায় সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। কেবল চালু ছিল রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিট। দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে হাসপাতালের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে কেবল ৮৮ সাধারণ শয্যায় চিকিৎসা চলছিলো রোগীদের। শুরু থেকেই ছিল ২০ আইসিইউ শয্যা। গত ৬ই এপ্রিল পর্যন্ত এই শয্যাতেই রোগীদের চিকিৎসা সংকুলান হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে ৬ই জুন হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়ে ২৩২ এ উন্নীত করা হয়। ওই দিনও ভর্তি ছিলেন ৩৩৫ জন রোগী। এরপর ৯ই জুন শয্যা বেড়ে ২৭১ এ দাঁড়ায়। ওইদিন ভর্তি ছিলেন ২৯০ জন। ১৫ জুন ২৭৩, ১৬ই জুন ৩০৫ এবং ২১শে জুন ৩০৯ শয্যায় উন্নীত হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শয্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২২- এ।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিনই অতিরিক্ত রোগী আসছেন। ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ায় বেড়েছে সংক্রমণ। সে সঙ্গে হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। স্থান সংকুলান না হওয়ায় আপাতত কিছু রোগী মেঝেতে রাখা হচ্ছে। বাড়তি চাপ সামলাতে নতুন আরেকটি অক্সিজেন ‘ভ্যাপোরাইজার’ বসানো হয়েছে।

কথা হলো করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আক্তারুজ্জামানের বড় ছেলে শফিকুজ্জামান তুহিন বলেন, এখানে আইসিইউ বেডের সংকট প্রকট। চিকিৎসা ব্যয়ও অনেক বেশি। ছোটখাটো ত্রুটি থাকলে তা রোগীর স্বজনদের নিজ উদ্যোগে সারাতে হয়। যেমন আইসিইউ বেডের অক্সিজেন মাস্ক নষ্ট থাকায় ৬ হাজার টাকা দিয়ে নিজ খরচে কিনে আনি। যেসব ওষুধ দেয়া হয় তা খুব ব্যয়বহুল। পরে আর্থিক সংকটের কথা বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংরক্ষিত ইঞ্জেকশন থেকে তা দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

করোনা রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রভাব পড়েছে। গতকাল দুপুরে খাঁ খাঁ রোদ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে স্ট্রেচারে শুয়ে এক রোগী। পাশেই দাঁড়িয়ে ছেলেটির মা। মেডিকেলে ভর্তির অপেক্ষায় মা ছেলে। আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পরও যখন ভর্তির বন্দোবস্ত হলো না, তখন নিরুপায় রোগীর মা। রোদের উত্তাপ থেকে সন্তানকে বাঁচাতে মুখের উপর মা বিছিয়ে দিলেন, পরম মমতার আঁচল। ছেলেটির শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো। পরে চিকিৎসকরা পরীক্ষা অক্সিজেন স্যাচুরেশন ঠিক থাকায় তাকে সরাসরি করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি না করে পর্যবেক্ষণে রাখেন।
প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রয়েছে করোনা চিকিৎসার বন্দবস্ত। কিন্তু মরণাপন্ন রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় আইসিইউ নেই জেলা সদরগুলোতে। ফলে চাঁপাই নবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর ও পাবনা থেকে রোগীরা আসছেন রামেক হাসপাতালে। এর বাইরে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার করোনা রোগীও আসছে এই হাসপাতালে।

রামেক হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পিসিআর মেশিনে ৩৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
১৪ জন মৃত্যু: গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে ১৪ জন মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। এরআগে বৃহস্পতিবার একদিনে হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেকর্ড ১৮ জনের মৃত্যু হয়।
রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১৪ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে করোনায় পাঁচজন ও উপসর্গে ৯ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর ছয়জন, চাঁপাই নবাবগঞ্জের চারজন, নওগাঁর তিনজন ও নাটোরের একজন রয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন রাজশাহীর দু’জন, চাঁপাই নবাবগঞ্জের দু’জন এবং নওগাঁর একজন। অন্যদিকে উপসর্গে মারা গেছেন রাজশাহীর চারজন, চাঁপাই নবাবগঞ্জের দু’জন, নওগাঁর দু’জন এবং নাটোরের একজন।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেকে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৬৫ জন। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৩ জন। রামেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৭০ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ২৫৩ জন ভর্তি রয়েছেন।

সূত্র: মানবজমিন

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]