6218

09/24/2024 পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করেছে, তাঁরা গুমের সঙ্গে সম্পর্কিত: ফখরুল

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করেছে, তাঁরা গুমের সঙ্গে সম্পর্কিত: ফখরুল

রাজ টাইমস

১৪ আগস্ট ২০২১ ২২:৩৬

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করেছে, তাঁরা গুমের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাঁদের যে গুম করার, বিচারবহির্ভূত হত্যার মানসিকতা, মন্ত্রীর বক্তব্যে তা পরিষ্কার হয়ে গেছে।

আজ শনিবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গত জুন মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বাংলাদেশে গুমের শিকার ৩৪ জন ব্যক্তির সর্বশেষ অবস্থা জানতে চায়। এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের সঙ্গ কথা বলেন। তিনি জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের এভাবে তথ্য চাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘দুনিয়ার কমবেশি সব দেশেই এগুলো হয়, ভারতে হয়, পাকিস্তানেও হয়। ভারতে তারা কথা বলে না, পাকিস্তানে বলে না, আমরা তাদের বেশি পাত্তা দিই বলে তারা (জাতিসংঘ) বলতেই থাকে।’

এ বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখানে তাদের গুম করার যে মানসিকতা, বিচারবহির্ভূত হত্যার মানসিকতা, তারা যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তাঁর বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। বিশ্বের কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এটা হতে পারে না। ভারতে কী হচ্ছে, পাকিস্তানে কী হচ্ছে সেটা নয়, বাংলাদেশ কী হচ্ছে সেটা দেখতে হবে। ১৯৭১ সালে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল এভাবে গুম হয়ে যাওয়ার জন্য? একজন রাজনীতিক, এমপি, ব্যারিস্টার, ব্রিগেডিয়ার, কাউন্সিলর গুম হয়ে গেলেন, তাঁদের কোনো খোঁজ নেই।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, গতকাল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভা হয়। সভায় দলের নেতা ও সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীসহ বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান জানতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ওয়ার্কিং গ্রুপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠির বিষয়ে আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটি মনে করে, এর মাধ্যমে গুমের বিষয়ে বিএনপির দাবির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। সরকার তাঁদের খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটি অবিলম্বে সব গুম হওয়া ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে।

পদ্মা সেতুর পিলারে আঘাত

পদ্মা সেতুর পিলারে বারবার ফেরি আঘাতকে সরকার ষড়যন্ত্র মনে করছে—সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল ইসলাম হেসে দেন। এরপর তিনি বলেন, ‘আপনাদের মনে থাকার কথা, সাভারে রানা প্লাজা যখন ভাঙল, তখন মহিউদ্দিন খানের (তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) মতো শিক্ষিত মানুষ বললেন, বিএনপি না কি ঝাঁকি দিয়ে ফেলে দিয়েছে। ...এটা তো কমনসেন্সের ব্যাপার, এখন তীব্র স্রোত পদ্মায়। আর পদ্মা তো ছোটখাটো নদী না। পদ্মার সেই স্রোতে এ ধরনের ফেরি কিছুটা ডাইভার্ট হবেই। উচিত ছিল এ সময়ে রুটটা সরিয়ে নেওয়া। ওদের অবশ্য সুবিধা আছে, ভেঙে ফেলে আবার নতুন করে করবে। তখন অনেক টাকা জোগাড় করতে পারবে। প্রজেক্টই তো দরকার তাদের।’

টিকা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে না

মির্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সরকার টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের কোনো বিজ্ঞান ও বাস্তবসম্মত ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে পারেনি। উপরন্তু, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অন্যান্য উৎস থেকে টিকা প্রাপ্তির সম্ভাবনা বিনষ্ট করেছে। বিএনপি মনে করে, টিকা নিয়ে বিএনপি কোনো রাজনীতি করছে না। অপরাজনীতি করছে আওয়ামী লীগ সরকার। মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে একদিকে জনগণকে প্রতারণা করছে, অন্যদিকে জনগণকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের হিসাবেই দেখা যাচ্ছে দুই ডোজ টিকা পেয়েছে মাত্র ৫২ লাখ মানুষ। প্রথম ডোজ পেয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ। অথচ জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। আজ পর্যন্ত সরকার টিকার সুনির্দিষ্ট কোনো রোড ম্যাপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। টিকা নিয়ে এ প্রতারণা অপরাধের শামিল। জনগণের জীবন বিপন্ন করার সব দায় এ সরকারকেই বহন করতে হবে।

তিনি জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটি করোনাভাইরাসের ডেলটা ধরনের মারাত্মক সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞদের মতামতকে উপেক্ষা করে লকডাউন শিথিল এবং দুই দিন পরই ১৯ তারিখ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।

স্থায়ী কমিটি মনে করে, এ সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। বিএনপি বরাবরই বলে এসেছে, ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ক্যাশ ট্রান্সফার করা সবচেয়ে জরুরি ছিল। সরকার কর্ণপাত করেনি। সে কারণেই অপরিকল্পিত লকডাউন ফলপ্রসূ হয়নি।

নিকৃষ্ট মিথ্যাচার

বিএনপির মহাসচিব জানান, গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির সভা থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে জড়ানোর ‘হীন’ প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। দলটি মনে করে, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ইতিহাসকে বিকৃত ও নিকৃষ্ট মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। সভায় এ ধরনের নিকৃষ্ট মিথ্যাচার থেকে সরকারকে বিরত থাকবার আহ্বান জানানো হয়।

এ ছাড়া খুলনার রূপসায় মন্দির, দোকান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, সম্প্রতি কুলাউড়ায় খাসিয়াদের ওপর হামলা, পটুয়াখালীর রাখাইন গ্রামে উচ্ছেদের হুমকির নিন্দা জানায় স্থায়ী কমিটি। অবিলম্বে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় সভা থেকে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ছাপানো বন্ধ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল নেটওয়ার্ক টেলিটক লাইফ সাপোর্টে আছে’—পরিকল্পনামন্ত্রীর এ মন্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে সভা। এ প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি দলের কোনো ব্যক্তির মালিকানায় দেওয়ার চক্রান্ত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে দলটির মধ্য। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।

সূত্র: প্রথম আলো /এস

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]