6602

05/04/2024 টাকার বান্ডিলে স্ট্যাপলার পিন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা

টাকার বান্ডিলে স্ট্যাপলার পিন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা

রাজটাইমস ডেস্ক

১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:৪১

বাংলাদেশের প্রচলিত টাকার নোটের বান্ডিলে স্ট্যাপলার পিন লাগানোর কারণে দ্রুত অনেক নোট নষ্ট হয়ে অপ্রচলনযোগ্য হয়ে পড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে তারা এই পিন ব্যবহার করছেনা এবং ব্যাংকগুলোকেও এটা না করতে বলা হয়েছে।

যদিও বেশ কিছু ব্যাংক তাদের পুরো ব্যাংকিং কার্যক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনা কার্যকর করতে না পারায় অনেক সময় টাকার বান্ডিলে পিন দেখা যায় বা পিনের কারণে টাকায় ছিদ্র দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্টের এক নির্দেশনায় অবশ্য দেখা যাচ্ছে এক হাজার টাকার নোটে স্ট্যাপলার পিন লাগানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন নতুন নোট বা বাজারে রি-ইস্যু করা যায় এমন কোন টাকার প্যাকেট বা বান্ডিলে পিন মারেনা। শুধুমাত্র যেসব নোট পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা ফেলে দিতে হবে সেগুলোতে পিন মারা হয়। এছাড়া আর কোন নোটে এখন পিন মারা হয় না। ব্যাংকগুলোও এই চর্চা এখন আর করেনা।

কিন্তু বাস্তবতা হলো বাজারে অনেক নোটেই ছিদ্র দেখা যায় এই পিনের কারণেই এবং এজন্য বিশেষ কিছু কারণের কথা বলেছেন মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন এমন কয়েকজন ব্যাংকার।

ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, "এটি ঠিক যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক আগেই পিন মারা যাবে না বলে জানিয়েছে। কিন্তু গ্রাহকদের সাথে যখন কাজ করবেন তখন নানা কারণে অনেক কর্মকর্তা বান্ডিলে পিন থাকলেই বরং স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। আর এ সব কারণের একটি হলো নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখা"।

তিনি বলেন, "ধরুন আপনি ব্যাংক থেকে এক লাখ টাকা তুললেন এবং সব পাঁচশ টাকার নোট। নিয়ম হলো হলো আপনি কাউন্টারেই প্রতিটি নোট চেক করে দেখবেন ও বলবেন যে সব ঠিক আছে কি-না। জাল বা ছেঁড়াফাড়া থাকলে ব্যাংক চেঞ্জ করে দেবে"।

"কিন্তু এই পরীক্ষার সময় ভিড়ের কারণে কর্মকর্তা সবসময় তাকিয়ে থাকতে পারেন না। এ সুযোগে মাঝে মধ্যে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পিন থাকলে বলা হয় যে পিন খোলার আগেই নোট চেক করে জানাতে। ফলে এটি একটি নিরাপত্তা হিসেবে কাজ করছে"।

যদিও ব্যাংক এশিয়ার মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান ব্রাঞ্চের ব্যবস্থাপক বিপুল সরকার বলেন, ২০১৯ সালেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পেয়েছেন তারা এবং সে অনুযায়ী এরপর থেকে নোটের বান্ডিলে পিন মারার চর্চা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

"এখন এটি একদমই করা হয়না। বান্ডিলে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মতো কাগজের ব্যান্ড লাগিয়ে দেয়া হয়," বলে জানান তিনি।

টাকার বান্ডিলে স্ট্যাপলার পিন মারলে সমস্যা কোথায়?

বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই বলছে," বাজারে প্রচলিত বাংলাদেশী ব্যাংক/কারেন্সি নোটসমূহের উপর সংখ্যা লিখন, সীল, স্বাক্ষর প্রদান ও বারবার স্ট্যাপলিং করার কারণে নোটসমূহ অপেক্ষাকৃত কম সময়ে অপ্রচলনযোগ্য হয়ে যাচ্ছে"।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, "টাকার উপর লাল, নীল, কালোসহ বিভিন্ন কালিতে লিখনের মাত্রা বাড়ছে এবং এ লেখালেখিতে ব্যাংকারগণের ভূমিকাই মুখ্য। এছাড়া সকল মূল্যমানের পুন:প্রচলনযোগ্য নোটসমূহ ময়লা ও অচল হয়ে যাচ্ছে এবং স্ট্যাপলিংয়ের কারণে নোটের স্থায়িত্ব কমে যাচ্ছে"।

এখানে বলে রাখা ভালো নোট ছাপাতে প্রতিবছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়।

আর প্রতিবছর এ খরচ বাড়ছে কারণ টাকা তৈরির কাঁচামাল বিদেশ থেকে আনতে হয় এবং বিদেশে এ ধরণের পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

তবে গ্রাহকরা কেউ কেউ মনে করেন, লেখালেখি ও স্ট্যাপলিংয়ের কারণে টাকা দ্রুত ময়লা হয় আর দেখতেও খারাপ লাগে ।

মনিরা জামান নামে একজন বেসরকারি চাকুরীজীবী বলছেন, "নতুন টাকাগুলো কিছুদিন পর যখন হাতে আসে - তখন এতো ময়লা হয়ে পড়ে যে দেখতেই খারাপ লাগে"।

পিন মারার কারণে টাকার নোটের দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়া বা অপ্রচলনযোগ্য হয়ে পড়ায় উদ্বেগ তৈরির প্রেক্ষাপটে এটি বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী প্রধানদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিলো, "তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট ব্যতীত যে কোন মূল্যমানের নতুন ও পুন:প্রচলনযোগ্য নোটের প্যাকেট স্ট্যাপলিং করা যাবে না"।

কিন্তু এক হাজার টাকার নোটের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের আরেকটি নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

সেই নির্দেশনায় পিন মারার সুযোগ রেখে ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোটের কোথায় ও কতদূরে পিন লাগানো যাবে - সে সম্পর্কিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো।

ওই নির্দেশনায় বলা হয়, "নোটের স্থায়িত্ব ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে এবং গ্রাহকদের সুবিধার্থে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের বাম দিকের মাঝখান থেকে ১-১.৫ সেন্টিমিটারের মধ্যে এটি মাত্র স্ট্যাপলিং পিন ব্যবহার করার নির্দেশনা প্রদান করা হলো"।

এখানে নোটের স্থায়িত্ব, স্বকীয়তা ও গ্রাহকদের সুবিধার কথা বলা হলেও মাঠ পর্যায়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে কাউন্টারে ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছেন।

২০১৯ সালের নির্দেশনা অন্য নোটগুলোর ক্ষেত্রে আরও বলা হয়েছে, "মূল্যমান নির্বিশেষে (১০০০ টাকার মূল্যমানের নোট ব্যতীত) সকল নতুন ও পুন:প্রচলনযোগ্য নোট প্যাকেট ২৫ মি.মি. হতে ৩০ মি.মি. প্রশস্ত পলিমার টেপ অথবা পলিমারযুক্ত পুরু কাগজের টেপ দ্বারা ব্যান্ডিং করতে হবে। তফসিলি ব্যাংকগুলো তাদের নোটের নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ব্যাংক নোট ব্যান্ডিংয়ে ব্যবহৃত উন্নত প্রযুক্তির অনুসরণ করতে পারে"।

বাংলাদেশের বাজারে এমন অনেক নোট আছে যেগুলোর ওপরে লাল, কালো, নীল রংয়ের স্বাক্ষর বা বিভিন্ন ধরণের হাতে লেখা নোট বিশেষ করে টাকার পরিমাণ লেখা দেখা যায়।

মূলত ব্যাংকে টাকা সর্টিং ও প্যাকিং করার সময় নোটের ওপর সংখ্যা লিখেন কর্মকর্তারা। আবার কেউ কেউ অনুস্বাক্ষর করেন বা সীল দেন।

যেমন এক লাখ টাকার একটা বান্ডিলের সবচেয়ে ওপরের নোটে লেখা থাকতে পারে ১০০,০০০/-। এমন বহু নোট বাজারে চোখে পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৫ সালেই এক নির্দেশনায় এটি বন্ধ করতে বলেছিলো।

এর পরিবর্তে নতুন ও পুন:প্রচলনযোগ্য নোট প্যাকেটকরণের সময় ব্যাংকের মুদ্রিত ফ্লাইলীফে ব্যাংক শাখার নাম, সীল, নোট গণনাকারী ও প্রতিনিধিদের স্বাক্ষর ও তারিখ দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলো।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখনো অনেক নোটে হাতে লেখা এসব তথ্যাদি চোখে পড়ে। 

ব্যাংক থেকে টাকা তুলার পর একজন গ্রাহক জানান, "আমি গত সোমবার এক লাখ টাকা তুলেছিলাম। টাকাটা মেশিনে গুণে কাউন্টারের কর্মকর্তা লাল কালিতে সংখ্যাটা উল্লেখ করেছেন। আমি দেখলাম ওই নোটটায় আগে থেকে ৫০ হাজার ও দুই লাখ অংকে লেখা ছিলো। অর্থাৎ আগে ৫০ হাজার টাকা বান্ডিলে ও ২ লাখ টাকার আলাদা বান্ডিলের ওপরে ওই নোটটি ছিলো"।

সূত্র: বিবিসি বাংলা/এএস

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]