04/19/2025 `তথাকথিত শিক্ষিত ব্যক্তিরাই মা-বাবার প্রতি উদাসীন'
রাজটাইমস ডেস্ক
২১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:০৬
বর্তমান সময়ে মা-বাবার প্রতি একটি শ্রেণীর অবহেলার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, তথাকথিত শিক্ষিত ব্যক্তিরাই মা-বাবার প্রতি সীমাহীন উদাসীনতা প্রদর্শন করছে। যা সব সময় আমাকে ব্যথিত করে।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সিনিয়র সিটিজেনস ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘প্রবীণ সম্মেলন-২০২১’এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।
মা-বাবার প্রতি অবহেলা প্রদর্শনকারী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ আনা এখন বাস্তবতার নিরিখে অপরিহার্য
সংবিধানের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রবীণদের যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার সুস্পষ্টভাবে বিবৃত রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরোর মতে দেশের মোট জনসংখ্যার আট শতাংশ প্রবীণ বা বয়োজ্যেষ্ঠ। বর্তমানে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, আমাদের গড় আয়ু ৭২ বছর। ভারতে আমাদের চেয়ে কম, পাকিস্তানে আরও কম।
‘গবেষণা থেকে অনুমিত হয় যে, ২০৫০ সালে দেশে বয়োজ্যেষ্ঠের সংখ্যা তিন কোটি ৪০ লাখে পৌঁছাবে। যা মোট জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তখন বাংলাদেশ বার্ধক্যের জনসংখ্যার দেশ হিসেবে গণ্য হবে। সঙ্গত করণেই প্রবীণদের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকার তথা দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।’
প্রবীণদের ওপর নিপীড়নের বিষয়ে একটি সংস্থার গবেষণার বরাত দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, হেল্পলেজ গ্লোবাল নেটওয়ার্কের গবেষণায় প্রবীণ নিপীড়নের যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তা সত্যিই ভয়াবহ। বিশ্বব্যাপী প্রতি ছয়জন প্রবীণের একজন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এ কথা অস্বীকার করা যায় না, প্রবীণদের প্রতি নিপীড়ন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তথাকথিত শিক্ষিত ব্যক্তিরা বয়োবৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সীমাহীন উদাসীনতা প্রদর্শন করছে, যা সবসময় আমাকে ব্যথিত করে।
তিনি বলেন, মা-বাবার প্রতি অবহেলা প্রদর্শনকারী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ আনা এখন বাস্তবতার নিরিখে অপরিহার্য।
এখন যারা নবীন কালের আবর্তে তারাই প্রবীণ হবে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমান নবীনই ভবিষ্যতের প্রবীণ। প্রবীণরা আমাদের প্রতিপালন করেছেন, শিক্ষিত করেছেন, আর গড়ে তুলেছেন আধুনিক সমাজ ও সভ্যতা। সঙ্গত কারণেই প্রবীণদের প্রতি নবীনদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। স্নেহ-মমতা ও সেবা-শুশ্রুষার মাধ্যমে প্রবীণদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রবীণরা পরিবারের তথা সমাজের আশীর্বাদ, অভিশাপ নয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই নবীনদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে প্রবীণদের উপস্থিতি ও ভূমিকা এবং অবদান সত্যি প্রশংসনীয়। এ কথাও অনস্বীকার্য যে আধুনিক সমাজ প্রবীণদের কাছে দায়বদ্ধ।
‘শত কষ্টেও তারা নতুন প্রজন্মের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে নিরন্তর প্রার্থনা করছেন। তারা আমাদের শৈশব ও কৈশোরের আশ্রয়স্থল। তারা নবীনদের ভবিষ্যৎ জীবনের রূপকার ও প্রেরণার উৎস। তাদের প্রতি এই আত্মোপলব্ধি সৃষ্টি হলে ঘরে ঘরে প্রবীণরা নিরাপদ থাকবেন।’
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে তাদের বীরত্বগাঁথা বাঙালি জাতির নিকট চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। এই অনুষ্ঠানে দেশের কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করায় আমি ভীষণভাবে আনন্দিত। আমি সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ের গহীন থেকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সিটিজেনস ওয়েলফেয়ার সোসাইটির চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সোসাইটির কার্যনির্বাহী পরিষদের মহাসচিব মো. ফজলুল হক, প্রবীণ সম্মেলন-২০২১ এর উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক এ কে এম রেজাউল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা পদক দেওয়া হয়।