782

03/14/2025 অস্পষ্ট নির্দেশনায় অন্ধকারে শিক্ষার্থীরা

অস্পষ্ট নির্দেশনায় অন্ধকারে শিক্ষার্থীরা

রাজটাইমস ডেস্ক

৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৫০

 

বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাসে বন্ধ দেশের সব কটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্থিমিত হয়ে আছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। অনিশ্চয়তার মুখে লাখো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। অনেক অভ্যন্তরীণ, কেন্দ্রীয় ও পাবলিক পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। ৬ মাস ধরে চলছে না শ্রেণি কার্যক্রম। দূরশিক্ষণ আর অনলাইন পাঠদান চালু করলেও তা কতটা কার্যকর হচ্ছে, সে বিষয়ে খেয়াল নেই।

স্মিমিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে কিছুটা কার্যকর রাখার প্রচেষ্টা হল প্রযুক্তিনির্ভর অনলাইন ক্লাশ। তবে এ ব্যবস্থায় শহর ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় বর্তমানে ব্যস্ত নীতি প্রণয়নে।

দেশে ভাইরাসটির প্রকোপ শুরুর পর থেকেই দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয় ১৮ মার্চ থেকে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এই ছুটি বাড়ানো হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি শিক্ষার্থী আছে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বর্তমানে এসব শিক্ষার্থী কার্যত ঘরবন্দি। এ কারণে লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে টেলিভিশন ও বেতারে প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরের ক্লাস সম্প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে তেমন একটা আগ্রহ নেই শিক্ষার্থীদের। অনেক শিক্ষার্থী আর্থিক সামর্থ্যরে কারণেও সুযোগ নিতে পারছে না। মোটের ওপর অর্ধেকের মতো শিক্ষার্থী এতে যোগ দিচ্ছে বলে বেরিয়ে এসেছে বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষায়।

প্রতিষ্ঠানগুলো স্ব স্ব উদ্যোগে নিজেদের একাডেমিক কার্যকর সচল রাখতে অনলাইন ক্লাস চালু করলে ও উল্লেখযোগ্য একটি অংশ খেকে যাচ্ছে এর বাইরে। পাঠদানের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই গ্রামাঞ্চল ও মফস্বলের। ফলে বিশেষ ব্যবস্থায়ও সৃষ্টি হয়েছে একটা বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি। মাধ্যমিক পাসকৃত শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় কবে নাগাদ তাদের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে, তা অনিশ্চিত। বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই এক প্রকার দিকনির্দেশনাহীন জীবনযাপন করছে।

টেলিভিশন পাঠদানে ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত যুক্ত হচ্ছেন দাবি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়েই বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাদের লেখাপড়ার মধ্যে রাখতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি উদ্যোগে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে টেলিভিশন ও বেতারে পাঠদান চলছে। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগেও অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এরপরও প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর সরাসরি পাঠদান নিশ্চিত করেই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে। এ লক্ষ্যে পাঠ্যবই সামনে রেখে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় সিলেবাস নতুন করে সাজানোর কাজ করছে।

একইভাবে নতুন সিলেবাস প্রণয়নের কথা শুনালেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পরিমার্জিত সিলেবাস ৩ অক্টোবরের আগে প্রকাশ করা হবে। এখন টেলিভিশনে এবং যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে পাঠদান চলছে সেগুলোয় তারা যুক্ত থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সহায়তা কাম্য।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্লাস কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সরকার গত ২৯ মার্চ থেকে মাধ্যমিকে এবং ৭ এপ্রিল থেকে প্রাথমিকের রেকর্ড করা ক্লাস সংসদ টেলিভিশনে সম্প্রচার করছে। ১২ আগস্ট শুরু হয়েছে প্রাথমিকের পাঠদান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের ক্লাস করছে। যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের দাবি, এটা ৯২ শতাংশ। এই হিসাব নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

শহর এবং গ্রামের বৈষম্য দূর করে সরকারী উদ্যোগগুলো নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী। তিনি বলেন , ‘টেলিভিশন ও অনলাইনে পাঠদান হচ্ছে। এটা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এটির বাস্তবতাটাও নীতিনির্ধারকদের আমলে নেয়া প্রয়োজন। উভয় ধরনের পাঠদানেই বৈষম্য আছে। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থীই পড়ালেখার বাইরে আছে। কত শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে আমরা পৌঁছাতে পেরেছি সেটা নির্দ্বিধায় স্বীকার করা প্রয়োজন। এ নিয়ে প্রয়োজনে নিরপেক্ষ সমীক্ষা হতে পারে। আমরা মনে করি, এই সেবায় শুধু শহরের সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হচ্ছে। শহর ও গ্রামের নিুবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এই বঞ্চনার সবচেয়ে ভয়াবহ ফল হবে ‘ড্রপআউট’। অনেকে হয়তো শিক্ষায় আর ফিরবে না। এর মধ্যে আবার যদি এই পাঠদানের ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হয়, তাহলে সেটা শিখন মারাত্মক ভুল হবে।

সম্ভাব্য সব পরিকল্পনা রেখেই শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয় সাধন করা হবে জানান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা জানান পরিস্থিতি যেটাই হোক না কেন, চলতি বছরের মধ্যেই শিক্ষাবর্ষ শেষ করে দিতে চায় সরকার। এ কারণে গত মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে দুই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে রাখার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়কে। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি হচ্ছে- বছরের শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সম্ভব না হলে পরবর্তী ক্লাসে পদোন্নতি কীভাবে হবে-সেটি নিশ্চিত করা। আর প্রথমটি হচ্ছে, অক্টোবর বা নভেম্বরে প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সম্ভব হবে-কী করে পাঠদান শেষ করে মূল্যায়ন করা হবে সেটি। এই নির্দেশনা অনুযায়ীই বর্তমানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ পুনর্বিন্যাসের কাজ চলছে। খবর-যুগান্তর

  • এসএইচ
প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]