03/15/2025 চালের দ্রুত উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ হচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
রাজটাইমস ডেস্ক
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৪:০৪
চাহিদার অনুপাতে দ্রুত চালের উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, দেশে আমনের মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে। এ বছর আউশ, বোরো ও আমনে রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। সরকারি মজুদও সর্বকালের সর্বোচ্চ, তারপরও চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় চালের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হলে দ্রুত উৎপাদন বাড়াতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে ধানের উৎপাদন বাড়াতে অতি উচ্চফলনশীল ইনব্রিড ও সুপার হাইব্রিড জাতের আবাদ বাড়ানোর বিষয়ে এক সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, চালের উৎপাদন বাড়াতে হলে অতি উচ্চফলনশীল ইনব্রিড ও সুপার হাইব্রিড জাতের আবাদ বাড়াতে হবে। সে লক্ষ্যে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে, যেন ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে উৎপাদন অনেক বাড়ানো যায়। আমাদের কৃষিজমি ক্রমশ কমছে। তাই চালের উৎপাদন বাড়াতে গেলে নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ উৎপাদনশীল জাতগুলোকে দ্রুত মাঠে নিয়ে যেতে হবে এবং সুপার হাইব্রিডের চাষ বাড়াতে হবে। এছাড়া, পাহাড়, হাওর, উপকূলসহ প্রতিকূল এলাকায় ধানের চাষ বাড়াতে হবে। সে লক্ষ্যে আগামী বোরো, আউশ, আমন মৌসুমে ধানের উৎপাদন বাড়াতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
নতুন উদ্ভাবিত বোরো জাতের ধানের বিষয়ে তিনি বলেন, অতি উচ্চফলনশীল ব্রি-৮৯ ও ব্রি-৯২ বোরো জাতের ধানের উৎপাদন প্রতি শতাংশে প্রায় এক মণ। এটিকে দ্রুত মাঠে নিতে যেসব কৃষক এ ধান চাষ করবে, তাদের লিস্ট করে উৎপাদিত ধানের সবটুকু বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে বীজ হিসেবে কিনে নেওয়া হবে। যেন বীজ সংকট না হয়। কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় করতে বিনামূল্যে এ জাতের বীজ দেওয়া হবে, সারের দাম আরও কমানো হবে।
চালের চাহিদার সঠিক পরিসংখ্যানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দেশে চালের চাহিদা, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা নিয়ে পরিসংখ্যানগত অসঙ্গতি দূর করতে হবে।
তিনি বিবিএস ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে আরও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান প্রস্তুতের আহ্বান জানান।
চালের উৎপাদন ও চাহিদার পরিসংখ্যান নিয়ে সরকার অস্বস্তিতে রয়েছে মন্তব্য করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ইউনিয়ন তিনজন কৃষি কর্মকর্তা থাকার পরেও লক্ষ্যমাত্রা ও উৎপাদন পরিসংখ্যানে বড় ধরনের ফারাক থাকছে।
চালের দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি দেশে চালের দাম কিছুটা অস্থিতিশীল ও ঊর্ধ্বমুখী। আন্তর্জাতিক বাজারেও খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। যে গমের দাম টন প্রতি ২৩০ থেকে ২৮০ ডলারের মধ্যে ছিল, তা বেড়ে এখন ৪৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে গম আমদানি হয়েছিল ৪৮ লাখ টন, আর এ অর্থবছরে জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে মাত্র ১৬ লাখ টন। দাম বাড়ার কারণে গম আমদানি কম হচ্ছে। ফলে আটা-ময়দার দাম চালের চেয়ে বেশি, অথচ সবসময়ই আটার দাম চালের চেয়ে কম থাকে।
তিনি আরও বলেন, দেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। প্রতিবছর ২২ থেকে ২৪ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। প্রাণী-মৎস্যের খাদ্য হিসেবেও চালের কিছু ব্যবহার হচ্ছে। মানুষের আয় এবং জীবনযাত্রার মানও বেড়েছে। এসব মিলে চালের চাহিদা ও কনজামশন দিন দিন বাড়ছে। ফলে চালের দাম কিছুটা বেশি, তবে এই মুহূর্তে দেশে খাদ্যের কোনো সংকট নেই।
সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থা প্রধান ও বেসরকারি সিড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বেসরকারি সিড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা হাইব্রিড বীজের ক্ষেত্রে তাদের মজুত ও সক্ষমতা তুলে ধরেন।