04/20/2025 রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ
রাজটাইমস ডেস্ক
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:০৪
পারিশ্রমিক বৃদ্ধির দাবিতে রাজশাহীতে বাস বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করেছেন দেশ ট্রাভেলস ও ন্যাশনাল ট্রাভেলসের চালক, সুপারভাইজার ও হেলপাররা। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে তারা রাজশাহী থেকে বাস নিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাচ্ছেন না।
জানা গেছে, দেশ ট্রাভেলস ও ন্যাশনাল ট্রাভেলসের মালিক দুই ভাই। তাদের বাসের কর্মীরা জানিয়েছেন, অন্যান্য পরিবহন কোম্পানির তুলনায় দেশ ও ন্যাশনালের চালক-সুপারভাইজার ও হেলপারদের সুযোগ-সুবিধা কম। ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসলেও মালিকপক্ষ আমলে নেয়নি।
ওই দুটি পরিবহনের চালক-হেলপাররা আরও জানান, সম্প্রতি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ সব পরিবহন কোম্পানির মালিকপক্ষের সঙ্গে সভা করে। সেখানে নিয়োগপত্র, বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি করা হয়। কিন্তু দেশ ও ন্যাশনাল ট্রাভেলসের মালিকপক্ষ তা মানেনি। এর প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
চালক-হেলপাররা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা দেশ ও ন্যাশনালের বাস বন্ধ করে রাখায় দেশ ট্রাভেলসের মালিক বজলুর রহমান রতন ঢাকায় থেকে রাজশাহী-ঢাকা রুটের তন্ময়, এমপি সাফারী-১, রজনী, শিশির, জাহাঙ্গীর-১ ও রোড রয়েলস বাস বন্ধ করে রেখেছেন। তিনি ঢাকা থেকে এসব বাস আসতে দিচ্ছেন না। তিনি এমন পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছেন যেন সব বাসই বন্ধ হয়ে থাকে। তাহলে শ্রমিকরা বাস চালু করতে বাধ্য হবেন।’
রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছি। তাহলে শ্রমিকরা দুর্ঘটনার শিকার হলে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পাবেন। কিন্তু মালিকপক্ষ শুনছে না। আর দেশ ও ন্যাশনালের মালিকদের মানবতা বলে কিছু নেই। তারা চালক, হেলপার ও শ্রমিকদের সবচেয়ে কম পারিশ্রমিক দেন। এ কারণে তাদের নিজেদের শ্রমিকরা বাস বন্ধ রেখেছেন। শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাদের বাস বন্ধ করতে বলা হয়নি। এ বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা দেয়নি রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন।’
তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি ও রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব বলেন, ‘প্রথমে শুধু দেশ ট্রাভেলস ও ন্যাশনাল ট্রাভেলস চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পরে আন্তজেলার সব বাস বন্ধ করে দেন মালিকরা।’
এ ব্যাপারে দেশ ট্রাভেলসের মালিক বজলুর রহমান রতন বলেন, ‘শ্রমিকরা চাঁদা চাচ্ছে। মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ইন্ধনে দেশ ও ন্যাশনালের চালক হেলপার ও সুপারভাইজাররা বাস বন্ধ রেখেছেন।’ অন্য কোনও বাস তিনি বন্ধ করেননি বলে দাবি করেন।
বাস বন্ধের বিষয়ে বজলুর রহমান রতন বলেন, ‘শ্রমিক ফেডারেশন থেকে বাসের চাঁদা ৩০ টাকা করে দুই সমিতিকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব উদ্দিন ও তার চার সহযোগী ফেরদৌস, সুলতান, গাজি এবং পাখি মিলে প্রতি বাস থেকে ৪৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। এই টাকা দিয়ে শ্রমিকদের উন্নয়নের কথা থাকলেও সেটি তারা না করে নিজেদের গাড়ি-বাড়ি বানাচ্ছেন। আর শ্রমিকদের মেয়ে বিয়ে, মৃত্যু দাবি এখন আমাদের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। তার ওপর আবার নতুন করে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি তুলে কয়েকজনকে মাঠে নামিয়েছেন মাহাতাব। এর প্রতিবাদে আমরা সব বাস বন্ধ করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত সবচেয়ে বড় সেক্টর পরিবহন। আমরা চরম দুর্দশায় আছি। আমরা যে চাঁদা দিই সেই টাকা শ্রমিকদের জন্য ব্যবহার না করে এখন আবার আমাদের পেছনে ক্ষেপিয়ে তুলেছেন ইউনিয়নের নেতারা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তায় বাস চালাবো না।’
এদিকে, রাজশাহী শিরোইল বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক যাত্রী টিকিট কেটেও ঢাকায় যেতে পারেননি। তাদের অনেককেই বাড়িতে ফিরে যেতে হয়েছে। বাস কাউন্টারে টিকিট মাস্টাররা বলছেন, দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে মালিকপক্ষকে একাধিক বার জানানো হলেও তারা সেই দাবি না মানেননি। এ কারণে শ্রমিকরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা দেয়নি রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন।
বিকাল ৩টায় ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে টিকিট কেটেছিলেন মো. আব্দুল হক নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার ঢাকায় যাওয়া খুবই জরুরি ছিল। এজন্য সকালে দেশ ট্রাভেলসে টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় আমি যেতে পারলাম না।
পারিশ্রমিক বৃদ্ধির দাবিতে রাজশাহীতে বাস বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করেছেন দেশ ট্রাভেলস ও ন্যাশনাল ট্রাভেলসের চালক, সুপারভাইজার ও হেলপাররা। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে তারা রাজশাহী থেকে বাস নিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাচ্ছেন না।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন